রফিকুল ইসলামঃ ‘দিকদিগন্ত থেকে ঝড়ের মতো এসে, / মিথ্যা দিয়ে ভরে গেছে নগর। / কিছু মিথ্যা বহুবার উচ্চারিত হয়ে, / ক্রমেই রূপ নিচ্ছে সত্যের।’
এ ছন্দ মোর অসত্যের বিরুদ্ধে। সত্য চিরঞ্জীব জেনেও চলে আসছে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব। সত্যের চেহারা স্বার্থের দ্বন্দ্বে বদলে যাচ্ছে। এই চিত্র জীবন ও সমাজের সর্বত্রই। যেন মিথ্যাই পুঁজি। এ ব্যাপারে আক্ষেপ করে প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ লিখে গেছেন, ‘সত্যবাবু মারা গেছেন!’
মিথ্যা যেখানে সত্য হয়ে যায় সেসব সত্য পাশাপাশি রাখলে আমাদের রাজনীতি ও সমাজনীতির যে সত্য চেহারা উন্মোচিত হয়, তার দিকে তাকালে ভয়ানক ঠেকে! সৃষ্ট বিষয়কে সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত কৌশলী প্রয়াস নতুন রূপ পেয়ে ডাহা মিথ্যাও ‘আরোপিত সত্য’ হয়ে যাচ্ছে।
‘মানুষ করে তোলাই শিক্ষা।’ আর প্রথাবদ্ধ শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অপরিসীম, যা একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠানও। এখানে শিক্ষার্থীর সবরকম সম্ভাবনা পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হয় এবং সে ভবিষ্যতে সামাজিক জীবনযাপনে সমর্থ হয়ে ওঠে।
কিন্তু আজকের আলোচ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসার প্রশাসনিক নৈরাজ্যে হালে সমাজজীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে পাতানো পরিচালনা পরিষদ দিয়ে প্রশাসনের সামনে বারো বছর ধরে কুক্ষিগত করার মাধ্যমে জমিদাতার স্বার্থ ক্ষুন্ন করে এবং শত শত শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ও অভিভাবকদের স্বপ্ন নিয়ে একজন প্রতিষ্ঠানপ্রধান ছিনিমিনি খেলে যাচ্ছেন সকল জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থেকে!
এসব অরাজকতা নিরসনকল্পে শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গত ২৯ জুলাই ‘আমাদের মাদরাসা আমাদের ফিরিয়ে দাও’ – এ দাবিতে কয়েকটি লাইভ সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হলে বিষয়টি জাতির নজর কাড়ে। তাতে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং শঙ্কিত হয় আলোর নিচে অন্ধকার দেখে।
লাইভে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ডাহা মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে মাদরাসাটির স্থায়ী জায়গা থেকে দীর্ঘ বারো বছর হলো সুপার তা নিজ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যায় বলে জানানো হয়। এতে পর্যাপ্ত জায়গা ও অবকাঠামো এবং সুষ্ঠু ও সুস্থ পরিবেশের অভাবে এক পর্যায়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে য়ায় এটি। আর শ্রেণি পাঠদান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও অভিভাবকদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সেসাথে সুপারের দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় মাদরাসাটি বারো বছর ধরে সরকারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাসহ কোটি কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হতেও বঞ্চিত হচ্ছে। এতে স্থায়ী জায়গায় মাদরাসা না থাকায় কোনো কাজ ঝুলে আছে আবার কোনোটা ফেরত যাওয়ার তথ্যও তুলে ধরা হয় তাতে।
মানবাধিকারের বিষয়টি অনিবার্যভাবেই সর্বজনীন। যার দ্বারা মানুষ উপকৃত ও সংরক্ষিত হতে পারে। একটি সুন্দরতম শান্তিময় পরিবার, সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে প্রয়োজন শিক্ষিত অধিকার জনগণ। দেশ মাতৃকার সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব অভিভাবক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের।
সেই প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে অজপাড়া গাঁয়েের মো. জজ মিয়ার একশ শতক জমি দানে প্রতিষ্ঠা লাভ করে শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসাটি। অশিক্ষিত এই শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির বাড়ি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে।
বর্তমানে তিনি প্রয়াত। ধলাই ও বগাদিয়া গ্রামে প্রভাবপ্রতিপত্তিশালী ধনবান ব্যক্তিবর্গ থাকা সত্ত্বেও শ্যামপুর গ্রামের অস্বচ্ছল জজ মিয়া ছাড়া এক চিমটি জায়গা দান করার মতো কোনো শিক্ষানুরাগী ও দয়ালু ব্যক্তির সন্ধান মিলেনি সেসময়, অথচ এটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর সুপারসহ অনেকেই কর্তৃত্ব ফলাতে মাদরাসাটি করায়ত্ত করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যার জমিদানের বদান্যতায় বিশেষ করে সুপারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে, ওই জমিদাতা গোবেচারার অধিকারই কি না হরনে পতিত!
জমিদাতা জজ মিয়া ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে ওঠে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিজ নামে অঙ্গীভূত না করে গ্রামের নামে নামকরণ করে মহানুভবতার স্বাক্ষর রেখে গেলেও সুপার তা স্থায়ী জায়গায় না রেখে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও টাকা কামাইয়ের দুরভিসন্ধিতে নিয়ে গেছেন নিজ এলাকা ধলাই-বগাদিয়া বাজারে। এর জন্য সুপার প্রায় বারো বছর ধরে যেসব কারণ দেখিয়ে আদালতের রায় ও প্রশাসনের অনুমতির দোহাই পেড়ে চলেছেন, সেসব কারণ রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠপুত্র কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তিনবারের নির্বাচিত এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে দেড় বছর আগেই মিটিয়ে দিয়েছেন।
ন্যায্যতার প্রশ্নে শিক্ষায় মৌলিক অধিকারবঞ্চিত শ্যামপুরবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতায় এমপি তৌফিক হাওরাঞ্চলের বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসাটিকে দীর্ঘ দশ বছরেরও অধিক সময় পর হৃত অবস্থা থেকে মাদরাসাটি পুনরুদ্ধারে সংস্থাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
এছাড়া আদালতের রায় ও প্রশাসনের অস্থায়ী অনুমতি বিষয়ের কারণসমূহ তামাদি দেখে এবং মাদরাসার দুরবস্থা ও শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রমে বেহাল দশা থেকে উত্তরণে এমপি তৌফিক মাদরাসার স্থায়ী চত্বরে মাটি ফেলে উঁচু ভিটা তৈরি করে এর চারিদিকে ইটের প্রতিরক্ষা বেষ্টনী দেওয়ার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়নে মঞ্জুর করা হয় বিল্ডিংও। কিন্তু হালে ধলাই-বগাদিয়া বাজারসহ কোনখানেই মাদরাসার কোনো অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও ‘জায়গারটা জায়গাই’ না এনে এমপি তৌফিকের সেই নির্দেশ অগাহ্য করে চলেছেন এবং শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও অভিভাবকসহ জাতির চরম ক্ষতির করে যাচ্ছেন মাদরাসার সুপার।
মাদরাসাটি শ্যামপুর গ্রামবাসীর কাছে এখন এক দুঃস্বপ্নেরই উপাখ্যান। যেন এক দেশে ছিল একটি মাদরাসা। তাতে ছিল দলিল রেজিস্ট্রিকৃত পর্যাপ্ত জায়গা ও শিক্ষার্থী, জনবল কাঠামো, পাঠদান উপযোগী টিনের অবকাঠামো ও শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ এবং ছিল একটি গতিশীল পরিচালনা পরিষদ এবং সরকারের পাঠদানের অনুমতিও। কিন্তু সুপার ফ্রাঙ্কেনস্টাইন হয়ে উঠায় তাতে নেমে আসে অদ্ভুত আঁধার এক। পার্শ্ববর্তী সমসাময়িক ধলাই-বগাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের চোখ ধাঁধানো অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিপরীতে শ্যামপুর মাদরাসা নিজ জায়গায় না থাকায় ক্রমেই অস্তিত্বহীন।
আদতে জমিদাতা ও মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের সাবেক সভাপতি মো. জজ মিয়া ও অপরাপর সদস্যদের সাথে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ের হিসেব-নিকেশ নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে তা নিরসন না করে বরং জুজু বানায় সুপার মো. আমিনুল হক। তিনি অসদুদ্দেশ্যে মাদরামসা পরিচালনা কমিটি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ২০১১ সালের পহেলা জানুয়ারিতে রাতারাতি মাতৃকোল থেকে দৈবক্রমে উদাও করে ফেলা হয় মাদরাসাটি। পরে খুঁজ মিলে নতুন বগাদিয়া গ্রামের মো. নূরুল হক ভূঞার ধলাই-বগাদিয়া ব্যক্তি মালিকানাধীন বাজারে। সেখানে ছোট দুটি দোচালা টিনের ঘর উঠিয়ে এবতেদায়ী হতে দাখিল পর্যন্ত- এই দশটি শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম কার্যত চলতে থাকে কাগজে-কলমে।
তথাপি মাদরাসার নিজস্ব জমি থাকা সত্ত্বেও তা উপযোগী না করে আরও দুবার জায়গা বদল করেন সুপার। ধলাই-বগাদিয়া বাজারে দীর্ঘ ৯ বছর অবস্থানের পর উচ্ছেদ হয়ে ধলাই গ্রামের খালেক মীর গংদের মুশুরিয়া মৌজার গভীর হাওরে গিয়ে নতুন করে ৪০ শতক নিচু জায়গায় উঠানো হয় মাদরাসাটি। ওইখানে দেখা যায়, ২০ শতক নিচু জায়গায় মাটি ফেলে ভিটা বানিয়ে একটি টিনের ছাপড়া (ছোটঘর) উঠাতে। অবশ্য পাঠদান হয়নি। ক’দিন না যেতেই তুফানে সেই ছাপড়া ও বেঞ্চসহ মাদরাসাটির আসবাবপত্র ভাসতে দেখা যায় হাওরজলে।
এ নিয়ে দেশ টিভি চ্যানেলসহ গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ প্রকাশ হলে মাদরাসাটির বেঞ্চ ও আসবাবপত্র জল থেকে ডাঙায় তোলা হয়। পরে তড়িঘড়ি করে নতুন বগাদিয়া গ্রামের জনৈক ব্যক্তির বসতভিটায় দুটি টিনের ছাপড়া উঠানো হলেও তাতে পাঠদান চরম ব্যাহতসহ ছাত্রছাত্রীদের স্থানসংকুলান না হওয়া ছাড়াও রাতে পরিণত হয় গোয়ালঘরে। ফলে এতদিন ছোট দুটি টিনশেড দোচালা ঘরে অফিস ও শিক্ষক মিলনায়তনসহ দশটি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম কেবলই কেতাবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে বলা হয়, মাদরাসাটি ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হওয়ার পর ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হয়। মাদরাসাটি শ্যামপুর গ্রামের বড় মসজিদের পিছনে স্থাপন করে পাঠদান করাকালীন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থার অপর্যাপ্ততার দরুন এবং শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. জজ মিয়ার দান করা জায়গাটা নিচু জায়গা হওয়ায় তাতে বর্ষাকালে পানি ওঠে যায়।
এতে আরও বলা হয়, এসব কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে বিগত ২০১২ সালের পহেলা জানুয়ারি মাসে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি সাপেক্ষে ধলাই-বগাদিয়া বাজারে অস্থায়ীভাবে ঘর উঠিয়ে মাদরাসার পাঠদান শুরু করেন। এতে জমিদাতা জজ মিয়া গং বাদী হয়ে সুপার মো. আমিনুল হক এবং মাদরাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বিবাদী করে কিশোরগঞ্জে বিজ্ঞ মিঠামইন সহকারী জজ আদালতে ০৭/২০১২ (অন্য প্রকার) নং মোকদ্দমা দায়ের করলে তা দোতরফা সূত্রে না-মঞ্জুর করা হয়।
এছাড়া বিজ্ঞ আদালত সবকিছু পর্যালোচনায় বলা হয়, বাদী জজ মিয়ার পক্ষের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং বাদী পক্ষের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্ত মঞ্জুর করা হলে মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে মর্মে রায় দেন বলে দাবি করা হয়।
তবে, বাস্তবচিত্র কিন্তু ভিন্ন! ভিত্তিহীন তথ্যের ভিত্তিতে ধলাই-বগাদিয়া বাজারে গিয়ে অস্থায়ী পাঠদানের অনুমতি নেওয়ার কার্যকারীতা এবং পক্ষান্তরে আদালতের রায়ের অনুকূল পরিবেশ পরিস্থিতি বিদ্যমান নেই। তাই স্থায়ীচত্বরে অর্থাৎ পাঠদান অনুমতিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে রেজিষ্ট্রি ও খারিজকৃত নির্দিষ্ট জায়গায় মাদরাসাটি ফিরে পাবার দাবি জমিদাতা পক্ষসহ শ্যামপুর গ্রামবাসীর ন্যায্য অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লেখ্য, সেই প্রশ্নে মাদরাসাটি স্থায়ী চত্বরে ফিরে পেতে একদফা দাবি উঠলে বিগত ২০১৮ সালেই শ্যামপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ইউনিয়নবাসীর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসভায় উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব সেদিন মাদরাসা নিজস্ব স্থানে ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন বলেও জানান এলাকাবাসী।
তাছাড়াও শ্যামপুরবাসীর গত ২০২০ সালের জুলাই মাসে আকুল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক আবেদনকারীদের ‘জায়গারটা জায়গাই আসবে’ আশ্বস্তে ন্যায়পরায়ণতা আর ঋজুতা অবলম্বনে গত ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহানসহ স্থানীয় শিক্ষা অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মাদরাসাটি স্থায়ী চত্বরে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। যার মৌজা- মুশুরিয়া, খতিয়ান- ৬০, সাবেক দাগ- ৩৯৯ অর্থাৎ আরএস দাগ নং- ৮৭২ ও ৮৭৫।
মাদরাসাটি গত ১২ জুলাই ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হলেও মো. জজ মিয়ার দান করা ওই এক একর উঁচু জমি প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও শ্রেণি পাঠদান উপযোগী নির্ধারিত স্থায়ী জায়গায় ঘর না উঠিয়ে আবারও বিকল্প জায়গা খোঁজা হচ্ছে, যা জমিদাতা জজ মিয়া গং সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়াও দুই মাসের অধিক সময় ধরে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রয়েছে। যে কারণে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা চরমভাবে বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হচ্ছে।
এতে এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের মাদরাসাটির স্থায়ী জায়গা প্রস্তুত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রত্যাখ্যানে সুপারের সুপার পাওয়ার তথা স্পর্ধা দেখে সচেতন নাগরিক ও সুশীল সমাজও হতবাক। তবে কি সুপার ‘আমের চাইতে বড়া বড়’ হয়ে মাদরাসাটি কব্জায় রাখতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার মিথ তৈরি করে এমপির সিদ্ধান্তের বিপরীতে বরাবরের মতো আলাদা এক চেতনা জাগ্রত করা হচ্ছে?
সুপারের এসব বাজে দৃষ্টান্ত সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থায়িত্ব পাচ্ছে। এতে সৃষ্ট অনাচারের পরিবেশ থেকে শিক্ষার্থীরাও নিজের স্বার্থপরতা ছাড়া ভালো কিছু শিখছে না। হারিয়ে ফেলছে মূল্যবোধ, নৈতিকতা আর সুকুমার বৃত্তিগুলো। ফলে আগামী কর্ণধাররা ক্ষীণচেতা দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই বেড়ে উঠছে নিপাট অন্যায় ও অসত্যের মধ্যে বসবাস করে।
চার্লস ডিকেলের ‘গ্রেট এক্সপেকটেশানস’ উপন্যাসে পিপ নামের বালকটি বলেছিল… ‘বাচ্চাদের ছোট দুনিয়াতে যেটা সবচেয়ে ভালোভাবে টের পায়, সেটা হলো অন্যায়।’
সুশিক্ষিত জাতি ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে ক্রিমিন্যাল কার্যক্রমকে ক্রিমিন্যাল কার্যক্রম হিসেবেই গণ্য করা উচিত, ন্যায্যতা হিসেবে নয়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলব- ‘মনেরে তাই কহ যে, / ভালো মন্দ যাচাই আসুক / সত্যরে লও সহজে।’
হাওরাঞ্চলের শিক্ষা নিয়ে অতি জরুরি সর্বজনীন এ লেখাটি যখন লেখছি, তখন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২২ আগস্ট হতে চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে নিজ জন্মস্থান ও সাবেক সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-৪ অর্থাৎ ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলায় রয়েছেন। তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসাটি স্থায়ী চত্বর পেতে গত্যান্তর নেই।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়।