ফরিদপুরে রনকাইল গ্রামের চাঁপাই বিলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে গোলাপি পদ্ম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের রনকাইল গ্রামের বিশাল একটি বিলের নাম ‘চাঁপাই বিল’। এ বিলটিতে প্রায় আট থেকে ১০ মাস থাকে পানি। এখন চাঁপাই বিলে সৌন্দর্যের আভা ছড়াচ্ছে ফুটে থাকা রাশি রাশি গোলাপি পদ্মফুল। বিলে প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন কাছে-দূরের দর্শনার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শহরতলীর কানাইপুর বাজার থেকে মাত্র সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ বিল। কয়েক যুগ আগে থেকে বর্ষাকালে এ বিলের অধিকাংশ জমিতেই প্রাকৃতিকভাবে জন্মে পদ্ম ফুল। আষাঢ় মাস থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এই বিলে পদ্ম থাকে। এসময় পুরো বিল গোলাপি রঙের পদ্মে ভরে ওঠে, যা দেখলে যে কারও মন জুড়িয়ে যায়।

শীত মৌসুমে বিলটি প্রায় শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। তখন সেখানে বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়।
আর বাকি সময় থইথই পানিতে ভরা থাকে বিলটি। সেইসঙ্গে দেশি মাছের ছড়াছড়ি এ বিলে। রোগ থেকে মুক্তি পেতে চান? খাদ্যতালিকায় রাখতেই হবে পদ্ম ফুল (Health Benefit  Of Lotus Flower)ফলে বছরজুড়ে এ বিল থেকে মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করেন স্থানীয় মৎস্যজীবীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার ৯ নম্বর কানাইপুর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীতে রনকাইল মৌজায় অবস্থিত বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে সাদা ও গোলাপি রঙের পদ্মফুল ফুটে আছে। চাঁপাই বিল নামে পরিচিত এ বিলের পশ্চিমে রনকাইল গ্রাম। বিলের পানিতে শাপলা-শালুক আর পদ্মফুলের ছড়াছড়ি। বিশাল এ বিল জুড়ে এখন শুধুই গোলাপি-লাল-সাদার সংমিশ্রণে ফোটা রাশি রাশি পদ্ম ফুল। ফুলগুলো যেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিলিয়ে দিচ্ছে। শরতের ফুল হলেও চাঁপাই বিলে বর্ষাতেই তার সৌন্দর্য ও শুভ্রতার প্রতীক নিয়ে হাজির হয় ‘পদ্ম’। প্রকৃতিতে নিজের রূপ বিলিয়ে দিচ্ছে ফুটে থাকা এ জলজ ফুলের রাণী। জেলা-উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে সৌন্দর্যপিপাসুরা বিলটিতে আসছেন। ছোট ছোট নৌকায় চড়ে বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। পাশাপাশি তুলছেন ছবি-সেলফি, করছে ভিডিও। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকেই নানা বয়সী নারী-পুরুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় বিল এলাকা।পদ্ম-বিল, গোপালগঞ্জ - As Bongs Travel on Poddo Bil, Gopalganj

কানাইপুর বাজারের ব্যবসায়ী মো. আরিফুর রহমান চান বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে এ বিলে পদ্ম ফুলের শোভা দেখতে ছুটে আসে মানুষ। দুপুরের পর লোকজন আসা শুরু হয়ে অনেক সময় সন্ধ্যার পরও থাকেন তারা। তবে অনেকেই পদ্ম ফুল ছিঁড়ে নিয়ে যান। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। তা না হলে বিলটির শোভা হারিয়ে যাবে।

বিলে পদ্ম ফুল দেখতে আসা নাসরিন সুলতানা, সাদিয়া আফরিন, মারিয়া পপি জানান, তারা ফরিদপুর শহর থেকে এসেছেন। অবসরে শিশুদের নিয়ে পদ্ম ফুলের বিল দেখতে এসেছেন। বিকেলটা তাদের বেশ ভালো কেটেছে। নৌকায় চড়ে বিল ঘুরে দেখে এবং ছবি-সেলফি তুলে বেশ আনন্দিত তারা।ভূতিয়ার পদ্মবিল, খুলনা - ভ্রমণ গাইড

 

স্থানীয় বাসিন্দা হরেন সরকার দর্শনার্থীদের বিলে নৌকায় ঘোরান। তিনি বলেন, প্রতিদিন শতশত মানুষ এ বিলে ঘুরতে আসে। আগতদের নৌকায় নিয়ে বিল ঘুরতে সাহায্য করি। অনেকে খুশি হয়ে যা দেয় তা দিয়ে প্রতিদিন ভালোই আয় হয়।

তিনি আরও বলেন, ছোটবেলায় এ বিল থেকে শাপলা-শালুক তুলে হাটে-ঘাটে বিক্রি করতাম। এখন আর শাপলা-শালুক পাওয়া যায় না। কয়েক বছর ধরে এ বিলে বেশি পদ্ম ফুল ফুটছে।ঘুরে আসুন গোপালগঞ্জের পদ্ম বিলে

জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপ ‘ঘুরি-ফিরি ফরিদপুর’-এর মডারেটর ও সমাজকর্মী ম. ইকবাল মাহমুদ ইমন বলেন, প্রতিবছরই এসময় বিলটিতে যাই। এবারও বন্ধু-বান্ধব ও সহকর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার বিলটিতে গিয়েছি। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে শতশত দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এ বিলটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত। বিলটিতে বছরে প্রায় চার মাস পদ্ম ফুল ফোটে। এ ফুলগুলো টিকিয়ে রাখতে এবং সৌন্দর্যপ্রেমীদের যাতায়াত ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য একটি পর্যবেক্ষণ টিম করা যেতে পারে। এ বিলটি ঘিরে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে। এছাড়া ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অনেকেই ফুল-পাতা ও গাছ পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলে, নিয়ে যায়। দেখে খুব খারাপ লাগে। এগুলো বন্ধ হওয়া উচিত।

স্থানীয় কানাইপুর ইউনিয়ন (ইউপি) পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, এ বিলটি কানাইপুরের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণ ও সৌন্দর্যপিপাসুরা আসেন এ বিলে। এ বিলে আসা মানুষ নানা সমস্যার মধ্যে পড়েন। সেই কথা চিন্তা করে সেখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির জন্য টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। সোলার লাইট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।গোপালগঞ্জের বলাকইড় পদ্মবিল : ঠিক যেন এক পদ্মফুলের গালিচা - ট্রাভেল বাংলাদেশ

তিনি বিলটি ঘিরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ ও পর্যটন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, পদ্মফুলের একটি গাছে একটি ফুল ফোটে। সাধারণত এটি সাদা, লাল ও নীল রঙের হয়ে থাকে। ফুটন্ত ফুলে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে। রাত থেকে সকালের মধ্যে ফুল ফোটে। আর রোদের তীব্রতায় সংকুচিত হয়ে পড়ে। রোদ কমে গেলে আবার প্রস্ফুটিত হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে খাল-বিলের পানিতে পদ্মফুল ফুটতে দেখা যায়। শরৎ ও হেমন্তেও পদ্মফুল ফুটে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর