ঢাকা ০৬:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক হিরো আলম চুপ হলেও হাজার হিরো আলম জাগবে’

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২
  • ১২৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হিরো আলম কখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুলগীতি গাইবেন না বলে ডিবির কাছে বুধবার মুচলেকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজন তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

হিরো আলমের এই মুচলেকার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন লেখক, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার লুৎফর হাসান।

তিনি বলেছেন, এক হিরো চুপ হলেও হাজার হিরো আলম জেগে উঠবেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এআর রাজি বলেছেন, যতক্ষণ তুমি লড়াই করো ততক্ষণ তুমি আমার হিরো।
এআর রাজি বুধবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন,  যতক্ষণ তুমি লড়াই করো ততক্ষণ তুমি আমার হিরো।

আমার বুঝ-বুদ্ধি বলে, হিরো আলাম যদি আইনের বিচারে অপরাধ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে পুলিশ। যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করার চেষ্টা করতে পারেন বা মামলা করতে পারেন। কিন্তু পুলিশ কি তাকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান সুনির্দিষ্ট কোনোভাবে গাইতে বলতে পারে বা ভিন্ন কোনোভাবে সেসব গান গাইতে বারণ করতে পারে? পারলে কোন আইনে তা পারে? কোনো গানের বিকৃতি রোধ করার দায়িত্ব কি পুলিশের? পুলিশ কি গানের শুদ্ধাশুদ্ধ দেখার যথাযথ কর্তৃপক্ষ?

হিরো আলমের সঙ্গে আজ বাংলাদেশের পুলিশ যে ব্যবহার করেছে তা আমাকে ভয়ানক পীড়া দিচ্ছে এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। হিরো আলমের গান গাওয়ার অবাধ অধিকার নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমার বিচারে তা অহেতুক ও ক্ষীণদৃষ্টিপ্রসূত। আমি পুলিশের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাখতে চাই।

তিনি আরও লেখেন, হিরো আলমের গানের প্রতি আমার অনুরাগ নাই বরং বিরাগ আছে। তার গানের প্রতি আমার সমর্থন নাই কিন্তু তার গান গাওয়ার অধিকার, তা প্রচার করার অধিকার আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। আশা করি, হিরো আলমের অধিকারের পক্ষে মানুষ দাঁড়াবে, তার সহজাত অধিকারে পুলিশি-হস্তক্ষেপের নিন্দা করবে। জয় হোক, হিরো আলমের।

এদিকে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে লুৎফর হাসান লিখেছেন,হিরো আলম সম্পর্কে এই প্রথম লিখছি। তার সম্পর্কে আমি একটা পজিটিভ কথা কখনো কোথাও বলি নাই। বরং সব সময় নেগেটিভ কথা বলেছি। তাকে শায়েস্তা করার পক্ষে কথা বলেছি। সে প্রাসঙ্গিক হলে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু গতকাল থেকে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি।

আমি হিরো আলমের পক্ষে কখনো যাব না। তবে তার বিপক্ষেও এক অক্ষর লিখব না। এতদিন হিরো আলম আমার কাছে ছিল সংস্কৃতি কলুষিত করার এক ভাইরাস। কিন্তু এখন সে আমার কাছে একজন স্বাভাবিক মানুষ। সে কী করবে না করবে, একান্ত তার স্বাধীনতা। এ নিয়ে আমি কিছুই লিখব না। বলব না। তার গান বা ভিডিও কখনও আমি ক্লিক করি নাই, করব না। কিছুতেই না। বাকিরা কে তাকে শুনবে না শুনবে, সেটা একান্ত প্রত্যেকের রুচির ব্যাপার। তবে তার সঙ্গে মুচলেকা দেওয়ার ঘটনায় আমি আহত হয়েছি। একজন মানুষ হিসেবে তার সঙ্গে এটা করা উচিত হয়নি বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে।

তিনি আরও লিখেছেন, আর এই যে হিরো আলম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, এর দায় কার? অবশ্যই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেই মহারথীদের যারা পারতেন তারুণ্যের হাতে পরিচ্ছন্ন কনটেন্ট দেবার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রত্যেকে নিজেদের দিকে মনোযোগী ছিলেন। সিনিয়র হয়ে গেলে কথা বলতে শিখতে হয়। অশ্লীল বা সস্তা স্রোত বেশি প্রবল হয়ে গেলে সেটা ঠেকানোর জন্য কাজ করতে হয়। উল্টো অনেককে দেখা যায়, ফান করার নামে ওসব শেয়ার করেন। তাদের দাঁত কেলানো হাসির ফাঁক দিয়ে ঢুকে গেছে অপসংস্কৃতির নানান কিছু।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, অন্ধকার সবসময় দাপাদাপি করে, লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কিছু মানুষ প্রয়োজন। সেসব না করে অন্ধকারকে গালি দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। এক হিরো আলম চুপ হলে হাজার হিরো আলম জাগবে। সে ছাড়াও দেশে অনেক বড় পর্যায়ের তথাকথিত তারকা আছে, যারা নোংরা ও সস্তা কনটেন্ট দিয়ে বাজার সয়লাব করে ফেলছে। আওয়াজ যখন উঠেছে, তাদের ঠেকানোর প্রক্রিয়াও শুরু হোক।

কেউ বলতে পারেন ‘আপনি লিখলেই কী আর না লিখলেই কী’। সেটা আপনারা সংখ্যায় অল্প। লিখলে লাভ আছে। আপনি জানেনই না, আপনার লেখায় আপনার পরিবর্তন হোক বা না হোক, আপনার অজান্তে অনেকের পরিবর্তন হতে পারে, ভাবনায় ধাক্কা লাগতে পারে। ধন্যবাদ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এক হিরো আলম চুপ হলেও হাজার হিরো আলম জাগবে’

আপডেট টাইম : ০৭:৩৭:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হিরো আলম কখনো রবীন্দ্র সঙ্গীত ও নজরুলগীতি গাইবেন না বলে ডিবির কাছে বুধবার মুচলেকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নজন তাদের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

হিরো আলমের এই মুচলেকার ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন লেখক, কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার লুৎফর হাসান।

তিনি বলেছেন, এক হিরো চুপ হলেও হাজার হিরো আলম জেগে উঠবেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এআর রাজি বলেছেন, যতক্ষণ তুমি লড়াই করো ততক্ষণ তুমি আমার হিরো।
এআর রাজি বুধবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া স্ট্যাটাসে লেখেন,  যতক্ষণ তুমি লড়াই করো ততক্ষণ তুমি আমার হিরো।

আমার বুঝ-বুদ্ধি বলে, হিরো আলাম যদি আইনের বিচারে অপরাধ করে থাকেন তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে পুলিশ। যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে মামলা করার চেষ্টা করতে পারেন বা মামলা করতে পারেন। কিন্তু পুলিশ কি তাকে রবীন্দ্র-নজরুলের গান সুনির্দিষ্ট কোনোভাবে গাইতে বলতে পারে বা ভিন্ন কোনোভাবে সেসব গান গাইতে বারণ করতে পারে? পারলে কোন আইনে তা পারে? কোনো গানের বিকৃতি রোধ করার দায়িত্ব কি পুলিশের? পুলিশ কি গানের শুদ্ধাশুদ্ধ দেখার যথাযথ কর্তৃপক্ষ?

হিরো আলমের সঙ্গে আজ বাংলাদেশের পুলিশ যে ব্যবহার করেছে তা আমাকে ভয়ানক পীড়া দিচ্ছে এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। হিরো আলমের গান গাওয়ার অবাধ অধিকার নিয়ন্ত্রণে পুলিশ যে পদক্ষেপ নিয়েছে, আমার বিচারে তা অহেতুক ও ক্ষীণদৃষ্টিপ্রসূত। আমি পুলিশের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে রাখতে চাই।

তিনি আরও লেখেন, হিরো আলমের গানের প্রতি আমার অনুরাগ নাই বরং বিরাগ আছে। তার গানের প্রতি আমার সমর্থন নাই কিন্তু তার গান গাওয়ার অধিকার, তা প্রচার করার অধিকার আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করি। আশা করি, হিরো আলমের অধিকারের পক্ষে মানুষ দাঁড়াবে, তার সহজাত অধিকারে পুলিশি-হস্তক্ষেপের নিন্দা করবে। জয় হোক, হিরো আলমের।

এদিকে, নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া দীর্ঘ স্ট্যাটাসে লুৎফর হাসান লিখেছেন,হিরো আলম সম্পর্কে এই প্রথম লিখছি। তার সম্পর্কে আমি একটা পজিটিভ কথা কখনো কোথাও বলি নাই। বরং সব সময় নেগেটিভ কথা বলেছি। তাকে শায়েস্তা করার পক্ষে কথা বলেছি। সে প্রাসঙ্গিক হলে এড়িয়ে গেছি। কিন্তু গতকাল থেকে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি।

আমি হিরো আলমের পক্ষে কখনো যাব না। তবে তার বিপক্ষেও এক অক্ষর লিখব না। এতদিন হিরো আলম আমার কাছে ছিল সংস্কৃতি কলুষিত করার এক ভাইরাস। কিন্তু এখন সে আমার কাছে একজন স্বাভাবিক মানুষ। সে কী করবে না করবে, একান্ত তার স্বাধীনতা। এ নিয়ে আমি কিছুই লিখব না। বলব না। তার গান বা ভিডিও কখনও আমি ক্লিক করি নাই, করব না। কিছুতেই না। বাকিরা কে তাকে শুনবে না শুনবে, সেটা একান্ত প্রত্যেকের রুচির ব্যাপার। তবে তার সঙ্গে মুচলেকা দেওয়ার ঘটনায় আমি আহত হয়েছি। একজন মানুষ হিসেবে তার সঙ্গে এটা করা উচিত হয়নি বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে।

তিনি আরও লিখেছেন, আর এই যে হিরো আলম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল, এর দায় কার? অবশ্যই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সেই মহারথীদের যারা পারতেন তারুণ্যের হাতে পরিচ্ছন্ন কনটেন্ট দেবার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু প্রত্যেকে নিজেদের দিকে মনোযোগী ছিলেন। সিনিয়র হয়ে গেলে কথা বলতে শিখতে হয়। অশ্লীল বা সস্তা স্রোত বেশি প্রবল হয়ে গেলে সেটা ঠেকানোর জন্য কাজ করতে হয়। উল্টো অনেককে দেখা যায়, ফান করার নামে ওসব শেয়ার করেন। তাদের দাঁত কেলানো হাসির ফাঁক দিয়ে ঢুকে গেছে অপসংস্কৃতির নানান কিছু।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, অন্ধকার সবসময় দাপাদাপি করে, লণ্ঠন হাতে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য কিছু মানুষ প্রয়োজন। সেসব না করে অন্ধকারকে গালি দিয়ে দায়িত্ব এড়ানো যায় না। এক হিরো আলম চুপ হলে হাজার হিরো আলম জাগবে। সে ছাড়াও দেশে অনেক বড় পর্যায়ের তথাকথিত তারকা আছে, যারা নোংরা ও সস্তা কনটেন্ট দিয়ে বাজার সয়লাব করে ফেলছে। আওয়াজ যখন উঠেছে, তাদের ঠেকানোর প্রক্রিয়াও শুরু হোক।

কেউ বলতে পারেন ‘আপনি লিখলেই কী আর না লিখলেই কী’। সেটা আপনারা সংখ্যায় অল্প। লিখলে লাভ আছে। আপনি জানেনই না, আপনার লেখায় আপনার পরিবর্তন হোক বা না হোক, আপনার অজান্তে অনেকের পরিবর্তন হতে পারে, ভাবনায় ধাক্কা লাগতে পারে। ধন্যবাদ।