নিজ হাতে ৩০ পারা কোরআন লিপিবদ্ধ করলেন দিয়া

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কঠিন সময়ে প্রশান্তিময় কাজে নিজেকে করলেন যুক্ত। তৈরি করলেন এক অনন্য নজির। করোনাকালীন সময়টাকে উপভোগ্য করে তোলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জারিন তাসনিম দিয়া। দেড় বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম আর চেষ্টায় ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনের সর্বমোট ১১৪টি সূরা এবং সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; মতান্তরে ৬,৬৬৬ টি আয়াত বা পঙক্তি সম্পূর্ণ হাতে লিখে লিপিবদ্ধ করেছেন তিনি।

২০২০ সালে যখন সবাই ঘরবন্দী সময় পার করছে, ঠিক তখনই সৃজনশীল কিছু করার চিন্তা আসে দিয়ার মাথায়। চারদিকে করোনায় মৃত্যুর মিছিল তাকে বিষণ্ণতায় ফেলে দেয়। ‘বার বার মনে হচ্ছিল মানুষ তো আজীবন বেঁচে থাকবে না। তাই আমি এমন কিছু করি যাতে মানুষ আমাকে ভুলে গেলেও আমার কাজটি আজীবন মনে রাখবে। তাছাড়া একদিন বাবা ঘরে টানিয়ে রাখার জন্য আমাকে যেকোনো একটি দোয়া লিখে দিতে বললে জীবনে প্রথমবারের মতো কোরআন দেখে দেখে কোরআনের অংশবিশেষ (আয়াতুল কুরসী) লিখি। যা দেখতে সুন্দর হওয়ায় বাবা খুব প্রশংসা করেন এবং পুরো কোরআনই লেখার অনুপ্রেরণা জোগান। যদিও আমি কোন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও ছিলাম না। তবুও এভাবেই পবিত্র কুরআন শরীফ নিজ হাতে লেখার মনোবাসনা জাগলো।’—বলছিলেন দিয়া।

দিয়া বলেন, আমি কখনো ভাবিনি যে সম্পূর্ণ ৩০ পারা লিখে শেষ করতে পারবো। লিখা শুরু করেছিলাম ভাবছি যে দেখি কতদূর লিখা যায়। লিখতে লিখতে যখন ১০ পারা লিখে ফেলি তখন মনে একটি জেদ কাজ করলো যে আমি এটা শেষ করবো। আসলে আল্লাহ্ আমাকে সেভাবে ধৈর্য না দিলে আমি এই কাজটি শেষ করতে পারতাম না। তাই আল্লাহর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

কোরআন শরীফ লিপিবদ্ধ করার প্রতিটি মুহূর্তই বিশেষ ছিল দিয়ার কাছে। প্রথম দিকে কিছুটা কঠিন লাগলেও একসময় ভালোলাগা শুরু হয়। দৈনন্দিন জীবনের কাজের একটি অংশ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিটি হরফ যখন লিখতেন, মনে করতেন এটিই জীবনে সবচেয়ে শান্তির কাজ। দিয়া জানান, এমন কাজে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন তার বাবা-মা। ‘আমার মনে হয় আমি লিখাটি শেষ করতে পেরেছি কেবলই তাদের জন্য। আমার এই উদ্যোগের শুরু থেকে যেমন জড়িত ছিলেন বাবা তেমনি শেষ পর্যন্ত বাবা-মা দুজনই আমার পাশে থেকে সাহস সঞ্চার করেছেন। আর অনুভূতির কথা যদি বলি তাহলে বলবো কিছু অনুভূতি প্রকাশ করার মত না। কেননা আমি যেদিন পুরো কোরআন শরীফ লিপিবদ্ধ করা শেষ করলাম সেদিন আমার মা আনন্দে কেঁদেছেন।’—বলছিলেন দিয়া।

বর্তমানে দিয়ার ইচ্ছা বাংলাদেশের মডেল মসজিদগুলোতে তার এই হাতে লেখা কোরআনের সংস্করণটি বিনামূল্যে উপহারস্বরূপ পাঠানো। ৩০ জন হাফেজের সম্পাদনা শেষে হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিগুলো বাঁধাই করে কোরআন শরীফে পূর্ণাঙ্গ রুপ দেওয়া হয়েছে। এখন দেশের ৫০০ মডেল মসজিদ ও মাদ্রাসাগুলোতে এ কোরআন শরীফের একটি করে কপি মুসল্লি ও মাদ্রাসার ছাত্রদের পড়ার জন্য উপহার দিতে চান দিয়া।

২০২০ সালের মার্চ মাসে শুরু করে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে তার এ কাজটি শেষ হয়। যার পুরোটা সময়ই ভ্যানিটি ব্যাগে লেখালেখির উপকরণ বহন করেছেন তিনি। যখনই সুযোগ পেতেন তখনই কোরআন লিখতেন। এমনি ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময়টাতেও লেখার সব রকমের উপকরণ সাথে নিয়ে যেতেন, যাতে তার লেখা বন্ধ না থাকে।

দিয়ার জন্ম, শৈশব কৈশোর কেটেছে জামালপুরে। সেখানেই স্কুল কলেজের স্মৃতিময় সময় পার করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য এবং বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা উপকমিটিতে রয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর