ঢাকা ০৪:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
সৌদির কনসার্টে গাইবেন পড়শী আসছে নতুন গান আ.লীগের রাজনীতি করা নিয়ে যা বললেন মান্না দোসরদের গ্রেফতার করা না গেলে মুক্তি পাবে না পুরান ঢাকার সাধারণ মানুষ সেলিমের চেয়েও ভয়ঙ্কর দুই পুত্র সোলায়মান ও ইরফান বাতাসে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি, ঢাকার অবস্থা কি শাকিবের ‘দরদ’ নিয়ে যা বললেন অপু বিশ্বাস ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফল হলেই ভারতের স্বার্থ রক্ষিত’ ভারতীয় ব্যবসায়ীর সাক্ষাৎকার আইপিএল নিলামের চূড়ান্ত তালিকায় ১২ বাংলাদেশি ফিলিপাইনের দিকে ধেয়ে আসছে সুপার টাইফুন আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও বাক-স্বাধীনতার: প্রধান উপদেষ্টা আজিমপুরে ডাকাতির সময় অপহৃত সেই শিশু উদ্ধার

যেমন ছিল আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২
  • ১২২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে উম্মাহাতুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত মধুর, যা মুমিন নর-নারীর  জন্য উত্তম আদর্শ। হাদিসে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে, যা তাঁদের হৃদ্যতা, ভালোবাসা ও সুদৃঢ় বন্ধনেরই সাক্ষ্য দেয়। আয়েশা (রা.)-এর নিম্নোক্ত কবিতায় সেই ভালোবাসা আরো প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি লেখেন, ‘আমার একটি সূর্য আছে, আকাশেরও একটি সূর্য/আমার সূর্য আকাশের সূর্যের চেয়ে উত্তম/কেননা পৃথিবীর সূর্য ফজরের পর উদিত হয়/আমার সূর্য উদিত হয় এশার পর।

’ (প্রিয়তমা, পৃষ্ঠা ১৬০)

ভালোবাসায় তৃপ্ত : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আয়েশা (রা.) ছিলেন পরস্পরের ভালোবাসায় তৃপ্ত। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও বদান্যতায় আরবের প্রবাদতুল্য পুরুষ আবু জারআর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে নবীজি (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর উদ্দেশে বলেন, ‘আবু জারআ তার স্ত্রী উম্মে জারআর জন্য যেমন আমিও তোমার প্রতি তেমন। ’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘বরং আপনি আবু জারআর থেকেও উত্তম। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৯; ফাতহুল বারি : ৯/২৭৫)

প্রেমময় সম্বোধন : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)

ভালোবাসার সাক্ষ্য : আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, আয়েশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবু বকর)। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬২)

কিশোরীর মনে যেন না লাগে চোট : আয়েশা (রা.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আনন্দ ও বেদনার অংশীদার। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। তিনি বলেন, তখন আমার কাছে আমার সঙ্গীরা আসত। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখে আড়ালে যেত। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৮১)

ভালোবাসার চাদর : আয়েশা (রা.) বলেন, আমি একদিন হাবশিদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙিনায় খেলা করছিল। আমি খেলা দেখে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন নবী (সা.) তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৩৬)

ভালোবাসার খণ্ডচিত্র : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আয়েশা (রা.)-এর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু চিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যা থেকে তাঁদের মধ্যকার ভালোবাসা অনুমান করা যায়। যেমন—

ক. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!! (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২১)

খ. আয়েশা (রা.) বলেন, আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসুলুল্লাহ (সা.)ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৭০)

গ. আয়েশা (রা.) বলেন, আমি ঋতুমতী অবস্থায়ও নবীজি (সা.)-এর চুল আঁচড়ে দিতাম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৭৭)

ঘ. আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আমার কোলে মাথা রাখতেন এবং কোরআন তিলাওয়াত করতেন। অথচ আমি ঋতুমতী ছিলাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৩৪)

আবেগ-অনুভূতির পাঠ : মহানবী (সা.) ও আয়েশা (রা.) পরস্পরের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সচেতন ছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাকো এবং কখন রাগান্বিত হও। আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে পারেন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বলো, না! মুহাম্মাদের রবের কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বলো, না! ইবরাহিমের রবের কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! সে ক্ষেত্রে আমি শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২৮)

আত্মমর্যাদার মূল্য : আয়েশা (রা.)-এর আত্মমর্যাদাকে বিশেষ মূল্য দিতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, তিনি একবার থালায় করে কিছু খাবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিদের কাছে পেশ করলেন। এরই মধ্যে আয়েশা (রা.) চাদর জড়িয়ে এলেন। তাঁর হাতে একটি পাথর ছিল। পাথরটি দিয়ে থালাটি ভেঙে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) থালার ভাঙা টুকরো দুটি একত্র করলেন এবং বললেন, তোমরা খাও। তোমাদের মায়ের আত্মমর্যাদাবোধে লেগেছে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৫৬)

চিত্তবিনোদনকে উপেক্ষা নয় : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

সংসারের কাজে সহযোগিতা : আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)

স্ত্রীদের কষ্ট দেননি নবীজি (সা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো তাঁর স্ত্রীদের নির্যাতন তো দূরের কথা, সামান্য কষ্টও কখনো দেননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খাদেম ও কোনো স্ত্রীকে প্রহার করতে দেখিনি। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

আমৃত্যু জীবনসঙ্গী : নবীজি (সা.) তাঁর জীবনের অন্তিম সময়টুকু আয়েশা (রা.)-এর ঘরে অতিবাহিত করেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুও হয় আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রেখে। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যু ঘনিয়ে এলো আর তাঁর মাথা আমার রানের ওপর, তখন কিছু সময় তিনি বেহুঁশ হয়ে রইলেন। হুঁশ ফিরে এলে তিনি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত করুন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৯১)

আল্লাহ সবার অন্তরের বক্রতা দূর করে দিন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সৌদির কনসার্টে গাইবেন পড়শী আসছে নতুন গান

যেমন ছিল আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন

আপডেট টাইম : ১১:০৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে উম্মাহাতুল মুমিনিন আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবন ছিল অত্যন্ত মধুর, যা মুমিন নর-নারীর  জন্য উত্তম আদর্শ। হাদিসে নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আয়েশা (রা.)-এর দাম্পত্য জীবনের নানা দিক উঠে এসেছে, যা তাঁদের হৃদ্যতা, ভালোবাসা ও সুদৃঢ় বন্ধনেরই সাক্ষ্য দেয়। আয়েশা (রা.)-এর নিম্নোক্ত কবিতায় সেই ভালোবাসা আরো প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। তিনি লেখেন, ‘আমার একটি সূর্য আছে, আকাশেরও একটি সূর্য/আমার সূর্য আকাশের সূর্যের চেয়ে উত্তম/কেননা পৃথিবীর সূর্য ফজরের পর উদিত হয়/আমার সূর্য উদিত হয় এশার পর।

’ (প্রিয়তমা, পৃষ্ঠা ১৬০)

ভালোবাসায় তৃপ্ত : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আয়েশা (রা.) ছিলেন পরস্পরের ভালোবাসায় তৃপ্ত। স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা ও বদান্যতায় আরবের প্রবাদতুল্য পুরুষ আবু জারআর প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে নবীজি (সা.) আম্মাজান আয়েশা (রা.)-এর উদ্দেশে বলেন, ‘আবু জারআ তার স্ত্রী উম্মে জারআর জন্য যেমন আমিও তোমার প্রতি তেমন। ’ আয়েশা (রা.) বলেন, ‘বরং আপনি আবু জারআর থেকেও উত্তম। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫১৮৯; ফাতহুল বারি : ৯/২৭৫)

প্রেমময় সম্বোধন : আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) ভালোবেসে কখনো কখনো আমার নাম হুমায়রা বা লাল গোলাপ বলে ডাকতেন। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৪৭৪)

ভালোবাসার সাক্ষ্য : আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণনা করেন, আমি নবী (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, মানুষের মধ্যে কে আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? তিনি বলেন, আয়েশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্যে? তিনি বললেন, তাঁর পিতা (আবু বকর)। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৬২)

কিশোরীর মনে যেন না লাগে চোট : আয়েশা (রা.) ও রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন আনন্দ ও বেদনার অংশীদার। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পুতুল নিয়ে খেলা করতেন। তিনি বলেন, তখন আমার কাছে আমার সঙ্গীরা আসত। তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে দেখে আড়ালে যেত। আর রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৮১)

ভালোবাসার চাদর : আয়েশা (রা.) বলেন, আমি একদিন হাবশিদের খেলা দেখছিলাম। তারা মসজিদের আঙিনায় খেলা করছিল। আমি খেলা দেখে ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেখছিলাম। তখন নবী (সা.) তাঁর চাদর দিয়ে আমাকে আড়াল করে রেখেছিলেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২৩৬)

ভালোবাসার খণ্ডচিত্র : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও আয়েশা (রা.)-এর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু চিত্র হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যা থেকে তাঁদের মধ্যকার ভালোবাসা অনুমান করা যায়। যেমন—

ক. আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম, যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!! (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২১)

খ. আয়েশা (রা.) বলেন, আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসুলুল্লাহ (সা.)ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৭০)

গ. আয়েশা (রা.) বলেন, আমি ঋতুমতী অবস্থায়ও নবীজি (সা.)-এর চুল আঁচড়ে দিতাম। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৭৭)

ঘ. আয়েশা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আমার কোলে মাথা রাখতেন এবং কোরআন তিলাওয়াত করতেন। অথচ আমি ঋতুমতী ছিলাম। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৬৩৪)

আবেগ-অনুভূতির পাঠ : মহানবী (সা.) ও আয়েশা (রা.) পরস্পরের আবেগ-অনুভূতির প্রতি সচেতন ছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, আমি জানি কখন তুমি আমার প্রতি খুশি থাকো এবং কখন রাগান্বিত হও। আমি বললাম, কী করে আপনি তা বুঝতে পারেন? তিনি বললেন, তুমি প্রসন্ন থাকলে বলো, না! মুহাম্মাদের রবের কসম! কিন্তু তুমি আমার প্রতি নারাজ থাকলে বলো, না! ইবরাহিমের রবের কসম! শুনে আমি বললাম, আপনি ঠিকই বলেছেন। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! সে ক্ষেত্রে আমি শুধু আপনার নাম উচ্চারণ করা থেকেই বিরত থাকি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫২২৮)

আত্মমর্যাদার মূল্য : আয়েশা (রা.)-এর আত্মমর্যাদাকে বিশেষ মূল্য দিতেন রাসুলুল্লাহ (সা.)। উম্মে সালামা (রা.) বলেন, তিনি একবার থালায় করে কিছু খাবার রাসুলুল্লাহ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিদের কাছে পেশ করলেন। এরই মধ্যে আয়েশা (রা.) চাদর জড়িয়ে এলেন। তাঁর হাতে একটি পাথর ছিল। পাথরটি দিয়ে থালাটি ভেঙে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) থালার ভাঙা টুকরো দুটি একত্র করলেন এবং বললেন, তোমরা খাও। তোমাদের মায়ের আত্মমর্যাদাবোধে লেগেছে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৫৬)

চিত্তবিনোদনকে উপেক্ষা নয় : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম। (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

সংসারের কাজে সহযোগিতা : আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)

স্ত্রীদের কষ্ট দেননি নবীজি (সা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো তাঁর স্ত্রীদের নির্যাতন তো দূরের কথা, সামান্য কষ্টও কখনো দেননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খাদেম ও কোনো স্ত্রীকে প্রহার করতে দেখিনি। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

আমৃত্যু জীবনসঙ্গী : নবীজি (সা.) তাঁর জীবনের অন্তিম সময়টুকু আয়েশা (রা.)-এর ঘরে অতিবাহিত করেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুও হয় আয়েশা (রা.)-এর কোলে মাথা রেখে। তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মৃত্যু ঘনিয়ে এলো আর তাঁর মাথা আমার রানের ওপর, তখন কিছু সময় তিনি বেহুঁশ হয়ে রইলেন। হুঁশ ফিরে এলে তিনি ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত করুন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬১৯১)

আল্লাহ সবার অন্তরের বক্রতা দূর করে দিন। আমিন।