হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘তুমি অবিচল দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তুমি ধূমকেতু পৃথিবী তাকিয়ে রয় মাথা নোয়াবার নয় বঙ্গবন্ধু দিয়েছেন দেশ, তুমি দিলে পদ্মা সেতু।’
মুন্সিগঞ্জ মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর খুব কাছ থেকে পানির ঢেউ এবং বাতাসের শব্দের সঙ্গে সাউন্ডবক্স থেকে গানের কথাগুলো ভেসে আসছিল। দূর থেকে লম্বা চুলধারী একজনকে দেখা যাচ্ছিল গিটার হাতে গান গাইছে। মনে হচ্ছিল, কোনো ছবির শুটিং হচ্ছে। প্রায় মিনিট দুয়েকের পথ মাড়িয়ে সামনে গিয়ে দেখা যায়, কণ্ঠশিল্পী বাপ্পা মজুমদার গিটার বাজিয়ে একটি গানের ভিডিওচিত্রের সঙ্গে ঠোট মেলাচ্ছেন। মূলত সেখানে ‘পদ্মা সেতু’ নামে থিম সংয়ের ভিডিওচিত্রের শুটিং ছিল এটি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু কাঙ্ক্ষিত সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হতে হাতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। সেতু খোলার অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মত পুরো দেশের মানুষের চোখ এখন এই সেতুতে। জমকালো উদ্বোধনের লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে চলছে বিপুল তোড়জোড়। তারই একটি অংশ বিশেষ ‘পদ্মা সেতু’ নামের এই থিম সং।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সেতু মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে থিম সংটি তৈরি করা হয়েছে। গানটির গীতিকার কবির বকুল। সুর করেছেন কিশোর। আর এটি নির্মাণ করছেন কামরুল হাসান ইমরান। এ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন, রফিকুল আলম, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, কুমার বিশ্বজিৎ, বাপ্পা মজুমদার ও মমতাজ। পাশাপাশি রয়েছে এ প্রজন্মের কণা, কিশোর, ইমরান ও নিশীতার কণ্ঠও।
গানটি নিয়ে কণা বলেন, যে থিম সংটা করা হয়েছে, তার নাম ‘পদ্মা সেতু’। একজন শিল্পী হিসেবে পদ্মা সেতুর জন্য তৈরি করা থিম সং-এ অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত এবং নিজেকে অনেক ভাগ্যমান মনে করছি। আরও আনন্দের বিষয় হচ্ছে, আমি যাদের সঙ্গে গাইছি; বাংলাদেশের বরেণ্য যত শিল্পী তাদের সঙ্গে গাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। এটাতে আছেন সাবিনা ইয়াসমি, কুমার বিশ্বজি, বাপ্পা মজুমদার, ইমরান, কিশোর, ও নিশীতা। সব পছন্দের মানুষের সঙ্গে গান গাইতে পারছি, সব মিলিয়ে অনুভূতিটা ভীষণ আনন্দের।
গানটির রেকডিং শেষ করার পর রোববার (১২ জুন) পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে ভিডিও ধারণ করা হয়। আগামী ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্ধোধন করার পর থিম সংটি বাজবে। এটি ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অডিও ও ভিডিও আকারে প্রচার করা হবে।
গান প্রসঙ্গে কণ্ঠশিল্পী নিশীতা বলেন, পদ্মা সেতুকে নিয়ে গানটি রচনা করেছেন কবির বকুল। সুর করেছেন কিশোর। অনেক গুনী গুনী শিল্পীরা এখানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আমার নাম যে এখানে এসেছে, গুনী শিল্পীদের সঙ্গে; আমি যে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি, এটার আমার জন্য অনেক বড় একটা ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ভালো লাগছে।
পদ্মা সেতু সামনা-সামনি দেখে অভিভূত কুমার বিশ্বজিৎ
স্বপ্নের পদ্মা সেতু খোলার আগে সেটিতে পা ফেলার সুযোগ পেয়েছেন দেশের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। মূলত পদ্মা সেতুর জন্য বানানো থিম সংয়ের ভিডিও শুটিংয়ের জন্য সেতুতে পা ফেলার সুযোগ মেলে গুনী এ শিল্পীর। পদ্মা সেতু নিয়ে নিজের অনুভূতি ঢাকা পোস্টের সঙ্গে শেয়ার করেন বিশ্বজিৎ।
প্রথমবারের মতো সামনা-সামনি পদ্মা সেতু দেখার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে অনুভূতি প্রকাশ করা খুব কষ্টকর হবে। এই প্রথম সেতু দেখলাম। এতদিন যা দেখলাম আর আজ সামনা-সামনি। দেখার অনুভূতিটা অন্য রকম। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটা আমার জন্য বড় মর্যাদা-গৌরবের। এ জায়গায় আসার পেছনে আমাদের কত প্রতিকূলতা পার করতে হয়েছে, সেটা জাতি জানে। এটা বাংলাদেশের শুধু একটা ইতিহাস না একটা গৌরবের ইতিহাস।
কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, এটা আমাদের পাশাপাশি আমাদের দক্ষিণঞ্চলের সঙ্গে একটা অর্থনৈতিক ইভ্যালুয়েশন তৈরি করবে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে। এতদিন এখানে যাতায়তের ব্যাপারে যে ধরনের কমিউনিকেশান গ্যাপ ছিল এটার মাধ্যমে দক্ষিণঞ্চলে দারুণ পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশের অর্থনীতেতে সংযোগ তৈরি করবে।
পদ্মা সেতু নিয়ে আনন্দিত কণা
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থাৎ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে ২৫ জুন। সেতু উদ্ধোধন নিয়ে ভীষণ আনন্দিত হালের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কণা। কণা বলেন, কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেটা বাস্তবায়ন হচ্ছে, আগামী ২৫ তারিখ। সেটার জন্য আমি একজন বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ভীষণ আনন্দিত।
অংহকার করতে পারব, আমাদের একটা পদ্মা সেতু আছে : নিশীতা
এক যুগের বেশি সময়ের আগে ক্লোজআপ ওয়ান থেকে উঠে আসা কণ্ঠশিল্পী নিশীতা দেশের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশি নাগরীকদের জন্য অহংকার হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়, পদ্মা সেতু হচ্ছে, এটা আমাদের জন্য অনেক অংহকারের ব্যাপার। আমরা অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। স্বপ্ন দেখছিলাম, কবে এ স্বপ্ন পূরণ হবে। সেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।
নিশীতা বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সব জনগণ বা আমি নিজেকে নিজে এখন অভিনন্দন জানাতে পারব। অংহকার করতে পারব, আমাদের একটা পদ্মা সেতু আছে।