ঢাকা ০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসামির নাম বাদ দিতে চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:১১:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
  • ২৪ বার

মামলা থেকে আসামির নাম বাদ দিতে চাঁদা দাবির অভিযোগে রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা ছাত্রদলের সদস্য পদ থেকে মো. সাইমন রেজাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী মহানগর শাখার অধীনস্থ বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) ছাত্রদলের সদস্য মো. সাইমুন রেজাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মো. সাইমন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় পায়েল নামের আসামি, যিনি আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। দাবি করা হয়েছিল, এই পায়েলের কাছেই টাকা চেয়েছিলেন সাইমন।

এ নিয়ে সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডিতে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ ফোনালাপটি ফাঁস করেন। এরই সূত্র ধরে সৌরভ সাতটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মোবাইল ফোন থেকে সাইমন রেজার মোবাইল নম্বরে কল করা হচ্ছে। সৌরভের দাবি, সাইমনের সঙ্গেই মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন পায়েল। তবে আত্মগোপনে থাকায় পায়েলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওই কথোপকথনে শোনা যায়, এক ব্যক্তি বলছেন- ‘কাল তো মঙ্গলবার। কাল আমি লোন লেখাব। ইনশাল্লাহ আগামী মঙ্গলবার দিয়ে দেব।’ অপরজন বলছেন, ‘সবার কথা হলো, ৫০-এর নিচে আসবে না। আমি কথা বললাম। ওদের সবারই একটা মতামত, আমরা কিছু নামলাম, ওকেও কিছু উঠতে বল। আর পাঁচটা হাজার টাকা দিয়ে ২৫ করতে বল। যদি হয় তো বল, যা করার করে দিচ্ছি। ওর কোনো সমস্যা হবে না।’

আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকার মতো রেডি করে ফেলেছি। আর ১৫ হাজার টাকা, আর তো আর দুইদিন টাইম নেওয়া আছে। আমি যেদিন টাকা দেব, সেদিনই কোর্ট থেকে নামটা তুলে দেবেন না ভাইয়া?’

অপরজন তখন বলেন, ‘আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি দোকানে বসবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমি আছি।’

আরেক অডিওতে একজন বলছেন, ‘আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, ওখানে আপনি ১০ মেরে দিয়েন। আপনি দোকান করবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমার নম্বর তো থাকলই। সমস্যা হলে আমাকে কল দেবেন। আপনার নাম অটোমেটিক কাটা হয়ে যাবে। আপনি দেখবেন। কাটা হয়ে গেলে আপনাকে ছবি তুলে দিয়ে দেব।’

অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলছেন, ‘তাহলে আমি পরশু দিন ফুল পেমেন্ট দিয়ে দেব।’ তখন অপরজন বলছেন, ‘আজ ১০ হলে ভালো হয়, আমার একটু লাগত।’

আরেকটি অডিওতে জেলে না যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার যদি দুদিনের লাইগাও ভেতরে থাকতে হয়, আপনার স্যান্ডেল খুইলে আমার গালে মাইরেন, যান।’ অপর অডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি একা না। আরও দুই-তিনজনকে বের করা লাগবে। তোমাকে যেটুকু হেল্প করছি, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই রিস্কের মধ্যেই করছি।’

তবে যোগাযোগ করা হলে পায়েলের সঙ্গে কথোপথনের বিষয়টি স্বীকার করে সাইমন রেজা বলেন, ‘আমাকে অসংখ্যবার পায়েল কল করেছিল এটি সত্য। আমি তাকে বারবার বলেছি যে, আপনি যদি নিরপরাধ হয়ে থাকেন অবশ্যই মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু আমার কথোপকথনের মধ্যে টাকা চাওয়ার বিষয়গুলো সুপার এডিট করে ঢোকানো হয়েছে।’

তিনি আরেও বলেন, ‘আমার ছবি ব্যবহার করে অন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও বিভিন্নজনের সঙ্গে আমার নাম করে কথা বলা হয়েছে। মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সমাজে কিংবা দলের মধ্যে আমার সুনাম নষ্ট করার জন্যই এসব কথা হচ্ছে। আমি কারও কাছে কোন টাকা-পয়সা চাইনি। আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনীতি করি না। আমাকে পদ থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আমি এটাকে সম্মান-শ্রদ্ধা জানাই। তবে আমার পদ থাকুক আর না থাকুক- আমি শহিদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। আমি আমার আদর্শ সবসময় ধরে রাখব।’

সাইমন রেজা আরও বলেন, ‘দুই দিন আগে হোক, পরে হোক- আমি যে এর সঙ্গে জড়িত নই, সেটি আমি কেন্দ্রে প্রমাণ করব।’

জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘পায়েল পুলিশের সোর্স ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে, কিন্তু আমরা তার বিনিময়ে টাকা আদায় করতে পারি না। দলের মধ্যে সাইমন কয়েকজনকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট করে এভাবে টাকা আদায় করছেন। এতদিন প্রমাণ ছিল না বলে চুপ ছিলাম। প্রমাণ পাওয়ায় এগুলো প্রকাশ করেছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে তাকে অব্যাহতিও দিয়েছে।’

কথোপকথনগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করলন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, এটি ক্লিয়ার ম্যাসেজ। যাতে করে এটি দেখে অন্যরাও সতর্ক হয়।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আসামির নাম বাদ দিতে চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রদল নেতাকে অব্যাহতি

আপডেট টাইম : ০৬:১১:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

মামলা থেকে আসামির নাম বাদ দিতে চাঁদা দাবির অভিযোগে রাজশাহী মহানগরের বোয়ালিয়া (পূর্ব) থানা ছাত্রদলের সদস্য পদ থেকে মো. সাইমন রেজাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজশাহী মহানগর শাখার অধীনস্থ বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) ছাত্রদলের সদস্য মো. সাইমুন রেজাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মো. সাইমন রেজা বাদী হয়ে গত ২৭ অক্টোবর নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ ১০৫ জনের নাম উল্লেখ করে বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় পায়েল নামের আসামি, যিনি আওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত। দাবি করা হয়েছিল, এই পায়েলের কাছেই টাকা চেয়েছিলেন সাইমন।

এ নিয়ে সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডিতে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ ফোনালাপটি ফাঁস করেন। এরই সূত্র ধরে সৌরভ সাতটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মোবাইল ফোন থেকে সাইমন রেজার মোবাইল নম্বরে কল করা হচ্ছে। সৌরভের দাবি, সাইমনের সঙ্গেই মোবাইলে ও হোয়াটসঅ্যাপে মামলার বিষয়ে কথা বলেছেন পায়েল। তবে আত্মগোপনে থাকায় পায়েলের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ওই কথোপকথনে শোনা যায়, এক ব্যক্তি বলছেন- ‘কাল তো মঙ্গলবার। কাল আমি লোন লেখাব। ইনশাল্লাহ আগামী মঙ্গলবার দিয়ে দেব।’ অপরজন বলছেন, ‘সবার কথা হলো, ৫০-এর নিচে আসবে না। আমি কথা বললাম। ওদের সবারই একটা মতামত, আমরা কিছু নামলাম, ওকেও কিছু উঠতে বল। আর পাঁচটা হাজার টাকা দিয়ে ২৫ করতে বল। যদি হয় তো বল, যা করার করে দিচ্ছি। ওর কোনো সমস্যা হবে না।’

আরেকটি অডিওতে একজন বলছেন, ‘আমি ১০ হাজার টাকার মতো রেডি করে ফেলেছি। আর ১৫ হাজার টাকা, আর তো আর দুইদিন টাইম নেওয়া আছে। আমি যেদিন টাকা দেব, সেদিনই কোর্ট থেকে নামটা তুলে দেবেন না ভাইয়া?’

অপরজন তখন বলেন, ‘আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আপনি দোকানে বসবেন। আপনার কোনো সমস্যা হলে আমি আছি।’

আরেক অডিওতে একজন বলছেন, ‘আপনাকে একটা নম্বর দিচ্ছি, ওখানে আপনি ১০ মেরে দিয়েন। আপনি দোকান করবেন। যদি কোনো সমস্যা হয়, আমার নম্বর তো থাকলই। সমস্যা হলে আমাকে কল দেবেন। আপনার নাম অটোমেটিক কাটা হয়ে যাবে। আপনি দেখবেন। কাটা হয়ে গেলে আপনাকে ছবি তুলে দিয়ে দেব।’

অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বলছেন, ‘তাহলে আমি পরশু দিন ফুল পেমেন্ট দিয়ে দেব।’ তখন অপরজন বলছেন, ‘আজ ১০ হলে ভালো হয়, আমার একটু লাগত।’

আরেকটি অডিওতে জেলে না যাওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘আপনার যদি দুদিনের লাইগাও ভেতরে থাকতে হয়, আপনার স্যান্ডেল খুইলে আমার গালে মাইরেন, যান।’ অপর অডিওতে ওই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি একা না। আরও দুই-তিনজনকে বের করা লাগবে। তোমাকে যেটুকু হেল্প করছি, সেটা আমি ব্যক্তিগতভাবেই রিস্কের মধ্যেই করছি।’

তবে যোগাযোগ করা হলে পায়েলের সঙ্গে কথোপথনের বিষয়টি স্বীকার করে সাইমন রেজা বলেন, ‘আমাকে অসংখ্যবার পায়েল কল করেছিল এটি সত্য। আমি তাকে বারবার বলেছি যে, আপনি যদি নিরপরাধ হয়ে থাকেন অবশ্যই মামলা থেকে অব্যাহতি পাবেন। কিন্তু আমার কথোপকথনের মধ্যে টাকা চাওয়ার বিষয়গুলো সুপার এডিট করে ঢোকানো হয়েছে।’

তিনি আরেও বলেন, ‘আমার ছবি ব্যবহার করে অন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরেও বিভিন্নজনের সঙ্গে আমার নাম করে কথা বলা হয়েছে। মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সমাজে কিংবা দলের মধ্যে আমার সুনাম নষ্ট করার জন্যই এসব কথা হচ্ছে। আমি কারও কাছে কোন টাকা-পয়সা চাইনি। আমি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনীতি করি না। আমাকে পদ থেকে অব্যাহিত দেওয়া হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আমি এটাকে সম্মান-শ্রদ্ধা জানাই। তবে আমার পদ থাকুক আর না থাকুক- আমি শহিদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক। আমি আমার আদর্শ সবসময় ধরে রাখব।’

সাইমন রেজা আরও বলেন, ‘দুই দিন আগে হোক, পরে হোক- আমি যে এর সঙ্গে জড়িত নই, সেটি আমি কেন্দ্রে প্রমাণ করব।’

জানতে চাইলে নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মাকসুদুর রহমান সৌরভ বলেন, ‘পায়েল পুলিশের সোর্স ছিল। তার বিরুদ্ধে মামলা করা যেতেই পারে, কিন্তু আমরা তার বিনিময়ে টাকা আদায় করতে পারি না। দলের মধ্যে সাইমন কয়েকজনকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট করে এভাবে টাকা আদায় করছেন। এতদিন প্রমাণ ছিল না বলে চুপ ছিলাম। প্রমাণ পাওয়ায় এগুলো প্রকাশ করেছি। এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে তাকে অব্যাহতিও দিয়েছে।’

কথোপকথনগুলো ফেসবুকে প্রকাশ করলন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো, এটি ক্লিয়ার ম্যাসেজ। যাতে করে এটি দেখে অন্যরাও সতর্ক হয়।’