হাওর বার্তা ডেস্কঃ হবিগঞ্জের বাহুবলে উৎপাদিত বিভিন্ন সবজি পাইকারি ব্যবসায়ীরা অল্প দামে কিনে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন কয়েকগুণ বেশি দামে। এতে মুনাফার বড় অংশ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে। ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক এবং খুচরা বিক্রেতারা।
হবিগঞ্জ জেলার আরও নয়টি উপজেলার সবজির বাজারে একই চিত্র দেখা গেছে।
জেলার বাহুবলে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ২৫টি দলের ৫০০ জন কৃষক পাইকারি ক্রেতাদের কাছে চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন সর্বনিম্ন ৭ টাকা কেজিতে। বাজারে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা কেজি দরে। একইভাবে দেখা গেছে প্রকল্পের জমিগুলো থেকে পাইকাররা প্রতি কেজি ঝিঙে ২০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা এবং মাঝারি আকারের কুমড়া কিনছেন প্রতিটি ১৫ টাকা করে। অথচ উপজেলার মিরপুর বাজারে আড়তে গিয়ে দেখা যায় ঝিঙে ৩০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা এবং কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। একই সবজি জেলার খুচরা বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেবে, দুই মৌসুমে জেলায় প্রতি বছর সবজি আবাদ হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন অন্তত ১৬ মেট্রিক টন। সেই হিসেবে জেলায় বছরে সবজির উৎপাদন আনুমানিক ১ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। আর জমি থেকে খুচরা বাজার পর্যন্ত সবজির দামের ফারাকের কারণে বছরে কয়েকশ কোটি টাকা চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীর পকেটে।
বাহুবলের লামাতাশী এলাকার কৃষক দুলাল মিয়া জানান, তিনি ৪০ শতক জমিতে ঝিঙে ও চিচিঙ্গা চাষ করেছেন। কিন্তু পাইকাররা চিচিঙ্গা ৭ টাকা এবং ঝিঙে ২২ টাকা দরে নিতে চায়। কিন্তু এ টাকায় বিক্রি করলে চাষের খরচের টাকা উঠবে না। একইভাবে লোকসানের কথা জানিয়েছেন কৃষক আরফান আলী, আজাদ মিয়া, ছাদেক মিয়া, তাহির মিয়া, আবুল মন্নাফ, আব্দুল কাইয়ুম ও জুয়েল মিয়াসহ আরও কয়েকজন। তারা বলেন, পাইকারি ক্রেতারা একেক দিন একেক দাম নির্ধারণ করে আমাদের কাছে সবজি কিনতে আসে। তাদের নির্ধারিত দামে সবজি না বিক্রি করলে তারা কেনে না। তাই আমরা বাধ্য হয়েই অল্পদামে সবজি বিক্রি করি।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হিলালপুর গ্রামের কৃষক ওয়ারিশ মিয়া জানান, পাইকারি ক্রেতাদের সিন্ডিকেটের কারণে সবজি চাষিরা প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না। এ জন্য তার এলাকার অনেকেই সবজি চাষ বাদ দিয়ে অন্য পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এদিকে হবিগঞ্জ শহরের চৌধুরীবাজার এলাকার পাইকারি সবজি বিক্রেতা নূরুল আমীন বলেন, আমরা প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি আনি। যানবাহন খরচ ও দোকানভাড়া মিলিয়ে অনেক খরচ যোগ করে তারপর আমাদের সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করতে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী চাষিদের বিষমুক্ত সবজি চাষের জন্য নানা প্রক্রিয়া শেখানো হয়েছে। এখনও প্রশিক্ষণ চলছে। জৈব সারসহ ক্ষতিকর কীট দমন এবং উপকারী কীট বাঁচিয়ে রাখতে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক মাঠে থাকছে। কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে কৃষক বঞ্চিত হচ্ছে এবং সাধারণ ক্রেতারা অতিরিক্ত মূল্য দিয়ে সবজি কিনছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকদের সংগঠিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।