চাঁদপুরের হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নে মেঘনা নদীতে সারবাহী জাহাজ এমভি আল-বাখেরার মাস্টারসহ ৭ জনকে খুনের ঘটনাটি অনেকে ডাকাতি বললেও স্বজনদের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। পুলিশও এই ঘটনাকে সন্দেহের মধ্যে রেখে তদন্ত করছে।
আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা মরদেহ শনাক্তের জন্য আসা স্বজনরা এ দাবি জানান।
গতকাল সোমবার বিকেলে ওই জাহাজে থাকা পাঁচটি মরদেহ ও গুরুতর আহত তিনজনকে উদ্ধার করে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশ। পরে চাঁদপুরের হাসপাতালে নেওয়ার পর দুজন মারা যান। আহত একজন এখন ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হাইমচর থানায় মামলা হয়নি।
নিহতরা হলেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লহরিয়া কালিগঞ্জের এগারনলি গ্রামের বাসিন্দা মো. সালাউদ্দিন (৪০), একই উপজেলার ইটনা ইউনিয়নের পাংখার চর উত্তর গ্রামের আমিনুর মুন্সি (৪১), ফরিদপুর সদর উপজেলার ১১ নম্বর গেদ্দা ইউনিয়নের জুয়াইর গ্রামের বাসিন্দা মো. কিবরিয়া (৬৫), একই গ্রামের শেখ সবুজ (২৭), জাহাজের বাবুর্চি ফরিদপুরের বাসিন্দা মো. রানা, মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার মন্ডল গাতি পোস্ট অফিসের চর বসন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাজেদুল ইসলাম মজিব (১৮) ও একই জেলার পলাশ বাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সজিবুল ইসলাম (২৯)। চিকিৎসাধীন জুয়েল ফরিদপুরের বাসিন্দা।
আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার পর থেকে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই তাদের স্বজনদের অনেকে উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে মরদহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
হত্যার শিকার জাহাজের লস্কর শেখ সবুজের ছোট ভাই সাদিকুর রহমান বলেন, ‘জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়া আমার মামা। তার মাধ্যমেই আমার ছোট ভাই সবুজ কাজে আসেন। তিনি লস্কর হিসেবে কাজ করেন। গত এক দিন আগে আমার সঙ্গে ভাইয়ের কথা হয়েছে। যে মর্মান্তিক ঘটনায় আমার ভাই হত্যার শিকার হয়েছে, আমি চাই এমন ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে। এই জাহাজে থাকা প্রত্যেকটি হত্যার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি জানাই। ঘটনাটি যাতে করে কেউ ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা না করে আমি এটিও দাবি জানাই।’
জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার ভাই আউয়াল হোসেন বলেন, ‘এই মাসেই আমার ভাইয়ের চাকরির মেয়াদ শেষ হতো। তিনি আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে অবসরে যেতেন। উনার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ের জানুয়ারি মাসে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু এই ঘটনার পরে সব পরিকল্পনাই শেষ।’
হত্যার শিকার আমিনুল মুন্সির বড় ভাই মো. হুমায়ুন ও ইঞ্জিনচালক সালাউদ্দিনের মামাত ভাই জাহাঙ্গীর বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা ডাকাতি শুনলেও খুনের ঘটনার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে এটি পরিকল্পিত হত্যা। কারণ প্রত্যেকটি নিহতের মাথায় ধারল অস্ত্রের আঘাত। যারা হত্যার শিকার হয়েছেন সকলেরই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জাহাজে পাওয়া গেছে। এমনকি জাহাজে থাকা ৫ জনকে উদ্ধারের সময় তাদেরকে শোয়া অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।’
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন সুমন বলেন, ‘ঘটনার পর সাতজনেরই ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হয়েছে। পরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয় এবং এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ‘নিহত ৭ পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের থেকে থানায় মামলা হচ্ছে।’