ঢাকা ১০:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুষ্টি বিবেচনায় এখনও সেরা ‘আম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২
  • ১৭০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফল সম্ভারে ভরা বাংলাদেশ। অনাদিকাল ধরে ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক তাৎপর্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠে সাহায্য করেছে ফলে ভরা বাংলাদেশকে।

আর ফলের কথা এলে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে ‘ফলের রাজা’ আমের প্রসঙ্গ। আমাদের প্রিয় বসতবাড়ির আম, বাণিজ্যিকভাবে পৃথক জায়গায় গড়ে উঠা বাগানভিত্তিক আম, অমৌসুমে (অর্থাৎ যখন আমের সময় নয় তখন) ফলের দোকানে সাজিয়ে রাখা আম ইত্যাদি নানা বিষয় আত্মপ্রশ্নের কাছাকাছি চলে আসে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল মৌলভীবাজার জেলার এক কৃষিবিদের সঙ্গে। তিনি তার বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন আমের শ্রেষ্ঠত্ব। পুষ্টিগুণ আর চাষের প্রয়োজনীতা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বলেন, আম তো আমাদের অন্যতম প্রিয় ফল। আমের প্রসঙ্গে দুটি বিষয় চলে আসে। একটা হলো- আমাদের স্মৃতিবিজরিত বসতবাড়ির আম। অপরটি উন্নতজাতের আম গাছ লাগিয়ে অল্প সময়ে নিজ হাতের খাওয়া আম। এ প্রসঙ্গে আমার আরেকটি পয়েন্ট (আলোচ্য বিষয়) রয়েছে। সেটা হলো- পুষ্টির প্রশ্ন। আপনাকে তো জাতিকে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ করতে হবে। সেই প্রশ্নে আপনাকে লোকসান বাঁচিয়ে ব্যাপকভাবে আমের চাষ করতে হবে। এ যে নিজের বসতবাড়ির পূর্বপুরুষদের লাগানো কিছু সংখ্যক আম খেলাম, মজা করলাম এটা ঠিক আছে। এটা হলো একটা জিনিস। আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়গা। কিন্তু পুষ্টির প্রশ্নটি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ছোট ছোট আম বাগান করতে হবে। দু-চারটি আমের যে প্রমিন্যান্ট ভ্যারাইটি (নির্ভরযোগ্য বৈচিত্র্য) রয়েছে সেগুলো নির্বাচন করে চাষ করতে হবে। লক্ষ্য থাকতে হবে বছরব্যাপী আম উৎপাদনের।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা কিন্তু বলছি যে, আমার বসতবাড়ির আঙিনায় বারি আম-১১ জাতে অন্তত একটা আম গাছ লাগান। তাতে বছরব্যাপী আপনি আম খেতে পারবেন। অফ সিজনে (অমৌসুমে) আপনাকে সে গাছ আম উপহার দেবে। বছরব্যাপী আপনাকে তো পুষ্টি নিতে হবে। সেই পুষ্টি নিয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠতে হবে। সেজন্য আমাদের কিন্তু ছোট ছোট আম বাগান করতেই হবে। যেখানে- আম্রপালি জাতের ভ্যারাইটি লাগানো যেতে পারে। আম্রপালি আম হচ্ছে বেস্ট কোয়ালিটি (সেরা মানের) জাতের আম। ছোট ছোট গাছে প্রচুর আম ধরে। প্রতিটি বাড়িতে যদি দু-চারটা আম্রপালি বা বারি আম-১১ জাতের আমগাছগুলো যদি থাকে সেটা খুবই ভালো। আমাদের লক্ষ্য আমাদের সন্তানরা অর্থাৎ দেশের আগামী প্রজন্ম যেন পুষ্টিগুণে বেড়ে উঠার সুযোগ পায়।

পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলেন, আমের পুষ্টি উপাদান শরীরের নানাভাবে শক্তি যুগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক সহায়ক করে থাকে। পাকা আমে ক্যারোটিনের মাত্রা বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এতে ১.৩ গ্রাম আয়রণ, ১৪ মি. গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি. গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি. গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি. গ্রা. রিভোফ্লেভিন ও ০.০৮ মি. গ্রা. থায়ামিন রয়েছে।

এছাড়া পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি. গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি. গ্রা. বি-২ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়।

গত বছর আমাদের দেশের আম কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। এবারো হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, রাজশাহীতে আম যেহেতু খুব ভালো হয় সেখানে বেশি বেশি করে আমের বাগান করতে হবে। আমের ওপর বেশি বেশি করে নজর দিতে হবে। যাতে আমরা প্রতিবছর আম রপ্তানি করতে পারি এবং দেশের পুষ্টি চাহিদাও মেটাতে পারি বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

পুষ্টি বিবেচনায় এখনও সেরা ‘আম

আপডেট টাইম : ১১:৫৩:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১১ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফল সম্ভারে ভরা বাংলাদেশ। অনাদিকাল ধরে ষড়ঋতুর প্রাকৃতিক তাৎপর্য সমৃদ্ধ হয়ে উঠে সাহায্য করেছে ফলে ভরা বাংলাদেশকে।

আর ফলের কথা এলে স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে ‘ফলের রাজা’ আমের প্রসঙ্গ। আমাদের প্রিয় বসতবাড়ির আম, বাণিজ্যিকভাবে পৃথক জায়গায় গড়ে উঠা বাগানভিত্তিক আম, অমৌসুমে (অর্থাৎ যখন আমের সময় নয় তখন) ফলের দোকানে সাজিয়ে রাখা আম ইত্যাদি নানা বিষয় আত্মপ্রশ্নের কাছাকাছি চলে আসে।
এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি পক্ষ থেকে কথা হয়েছিল মৌলভীবাজার জেলার এক কৃষিবিদের সঙ্গে। তিনি তার বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন আমের শ্রেষ্ঠত্ব। পুষ্টিগুণ আর চাষের প্রয়োজনীতা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বলেন, আম তো আমাদের অন্যতম প্রিয় ফল। আমের প্রসঙ্গে দুটি বিষয় চলে আসে। একটা হলো- আমাদের স্মৃতিবিজরিত বসতবাড়ির আম। অপরটি উন্নতজাতের আম গাছ লাগিয়ে অল্প সময়ে নিজ হাতের খাওয়া আম। এ প্রসঙ্গে আমার আরেকটি পয়েন্ট (আলোচ্য বিষয়) রয়েছে। সেটা হলো- পুষ্টির প্রশ্ন। আপনাকে তো জাতিকে পুষ্টিতে সমৃদ্ধ করতে হবে। সেই প্রশ্নে আপনাকে লোকসান বাঁচিয়ে ব্যাপকভাবে আমের চাষ করতে হবে। এ যে নিজের বসতবাড়ির পূর্বপুরুষদের লাগানো কিছু সংখ্যক আম খেলাম, মজা করলাম এটা ঠিক আছে। এটা হলো একটা জিনিস। আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়গা। কিন্তু পুষ্টির প্রশ্নটি ভিন্ন। সেক্ষেত্রে আপনাকে ছোট ছোট আম বাগান করতে হবে। দু-চারটি আমের যে প্রমিন্যান্ট ভ্যারাইটি (নির্ভরযোগ্য বৈচিত্র্য) রয়েছে সেগুলো নির্বাচন করে চাষ করতে হবে। লক্ষ্য থাকতে হবে বছরব্যাপী আম উৎপাদনের।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা কিন্তু বলছি যে, আমার বসতবাড়ির আঙিনায় বারি আম-১১ জাতে অন্তত একটা আম গাছ লাগান। তাতে বছরব্যাপী আপনি আম খেতে পারবেন। অফ সিজনে (অমৌসুমে) আপনাকে সে গাছ আম উপহার দেবে। বছরব্যাপী আপনাকে তো পুষ্টি নিতে হবে। সেই পুষ্টি নিয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠতে হবে। সেজন্য আমাদের কিন্তু ছোট ছোট আম বাগান করতেই হবে। যেখানে- আম্রপালি জাতের ভ্যারাইটি লাগানো যেতে পারে। আম্রপালি আম হচ্ছে বেস্ট কোয়ালিটি (সেরা মানের) জাতের আম। ছোট ছোট গাছে প্রচুর আম ধরে। প্রতিটি বাড়িতে যদি দু-চারটা আম্রপালি বা বারি আম-১১ জাতের আমগাছগুলো যদি থাকে সেটা খুবই ভালো। আমাদের লক্ষ্য আমাদের সন্তানরা অর্থাৎ দেশের আগামী প্রজন্ম যেন পুষ্টিগুণে বেড়ে উঠার সুযোগ পায়।

পুষ্টিগুণ সম্পর্কে বলেন, আমের পুষ্টি উপাদান শরীরের নানাভাবে শক্তি যুগিয়ে ও ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক সহায়ক করে থাকে। পাকা আমে ক্যারোটিনের মাত্রা বেশি। প্রতি ১০০ গ্রাম আমে ২৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন থাকে। এতে ১.৩ গ্রাম আয়রণ, ১৪ মি. গ্রা. ক্যালসিয়াম, ১৬ মি. গ্রা. ফসফরাস, ১৬ মি. গ্রা. ভিটামিন সি, ০.৯ মি. গ্রা. রিভোফ্লেভিন ও ০.০৮ মি. গ্রা. থায়ামিন রয়েছে।

এছাড়া পাকা আমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ও বি-২। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.১ মি. গ্রা. ভিটামিন বি-১ ও ০.০৭ মি. গ্রা. বি-২ রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে। এতে কিছু পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট থাকে। যেমন- প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ১ গ্রাম প্রোটিন ও ০.৭ গ্রাম ফ্যাট থাকে। আম শ্বেতসারের ভালো উৎস। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে ২০ গ্রাম শ্বেতসার পাওয়া যায়।

গত বছর আমাদের দেশের আম কিন্তু বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল। এবারো হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, রাজশাহীতে আম যেহেতু খুব ভালো হয় সেখানে বেশি বেশি করে আমের বাগান করতে হবে। আমের ওপর বেশি বেশি করে নজর দিতে হবে। যাতে আমরা প্রতিবছর আম রপ্তানি করতে পারি এবং দেশের পুষ্টি চাহিদাও মেটাতে পারি বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।