আল্লাহ মানুষকে যেভাবে অনুগ্রহ করেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যে আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাঁর বান্দাকে বেশি ভালোবাসেন। মানবজীবনের পরতে পরতে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বান্দা যখন গভীরভাবে চিন্তা করবে এবং তার চারপাশে দেখবে, তখন সে তা খুঁজে পাবে। হাদিসে এসেছে, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, একসময় কয়েকজন বন্দিকে রাসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে আসা হলো।

বন্দিদের মধ্য থেকে একজন নারী অনুসন্ধানে রত ছিল। সে বন্দিদের মধ্যে কোনো শিশুকে পাওয়ামাত্র তাকে কোলে নিয়ে পেটের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে তাকে দুগ্ধ পান করাত। এ দেখে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রশ্ন করলেন, এ নারী কি তার সন্তানদের আগুনে ফেলতে রাজি হবে? আমরা বললাম, না। আল্লাহর শপথ! সে কখনো তার সন্তানকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারবে না। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সন্তানের ওপর এই নারীর দয়া হতেও আল্লাহ বেশি দয়ালু। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৮৭১)
মানুষকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ সম্মান দিয়েছেন

সন্তান মায়ের পেটে আসার পরই তাকে আল্লাহ তাআলা বিশেষভাবে লালন পালন করতে থাকেন। তার রিজিকের ব্যবস্থাপনা মায়ের গর্ভে সুনিপুণভাবে করে দিয়েছেন। তার জন্য মায়ের হৃদয়ে ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন। মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পর তার জন্য উপযুক্ত সুষম খাদ্যের ব্যবস্থা করা, এসব আল্লাহ তাআলার রহমতের বহিঃপ্রকাশ। সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর অবয়বে সৃষ্টি করেছেন, যা তিনি কোরআনে কারিমে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে। ’ (সুরা : ত্বিন, আয়াত : ৪)

 

রাত-দিনের সৃষ্টি করেছেন

রাত-দিনের সৃষ্টি বান্দার ওপর আল্লাহর বিশেষ রহমতস্বরূপ। আল্লাহ মানুষের কাজের জন্য দিনকে সৃষ্টি করেছেন। আর রাতকে সৃষ্টি করেছেন মানুষের আরাম-বিশ্রামের জন্য, উদ্যমতা ফিরে পাওয়ার জন্য। আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই নিজ রহমতে তোমাদের জন্য রাত ও দিন করেছেন, যাতে তোমরা তাতে বিশ্রাম গ্রহণ করো ও তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৭৩)

 

সৃষ্টিকুল মানুষের নিয়ন্ত্রণ করে দিয়েছেন

মহান আল্লাহ তাআলার অপার কৃপার মধ্য হতে এটি একটি যে বান্দা পৃথিবীতে সুন্দরভাবে চলার জন্য আল্লাহ তাআলা অনেক কিছুই তার বশীভূত করে দিয়েছেন। বিশাল জলযান নিয়ে আমাদের সমুদ্রে জাহাজ চালনার শক্তি দেওয়া হয়েছে—যাতে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারি। এবং সমুদ্রে অনেক উপকারী বস্তু সৃষ্টি করে সমুদ্রকে আমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে আমরা সেগুলো খোঁজ করে উপকৃত হতে পারি।

বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে জানা যায় যে সমুদ্রে এত বেশি খনিজ সম্পদ এবং ধনদৌলত লুক্কায়িত আছে, যা স্থলেও নেই। শক্তিশালী প্রাণীকে আমার আয়ত্তে এনে দিয়েছেন। আমরা তাদের নিজেদের মতো করে ব্যাবহার করে থাকি। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি লক্ষ করোনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আল্লাহ সেগুলোকে তোমাদের কাজে নিয়োজিত রেখেছেন। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ২০)

অন্যত্র বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি সাগরকে তোমাদের কাজে নিযুক্ত করেছেন, যাতে তাঁর নির্দেশে তাতে চলে জলযান এবং যাতে তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো এবং যাতে তোমরা তাঁর শোকরিয়া আদায় করো। ’ (সুরা : জাসিয়াহ, আয়াত : ১২)

 

রাসুল প্রেরণ করেছেন

বান্দাকে যেন শয়তান বিপথগামী করতে না পারে সে জন্য আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন, যাঁরা মানুষকে হিদায়াতের পথে আহ্বান করতেন। তিনি সেই নবীদের মাধ্যমে মানবজাতিকে বিভিন্ন বিধান দিয়েছেন, যাতে করে পৃথিবীতে তারা সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রাসুলের আনুগত্য করো, যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়। ’ (সুরা : আন নুর, আয়াত : ৫৬)

 

বিধানাবলির মধ্যে ছাড় দিয়েছেন

দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের বিভিন্ন বিধান দিয়েছেন। কিন্তু কোনো মানুষ যদি এসব বিধান পালন করতে অক্ষম হয় বা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে শরিয়ত ছাড় দিয়েছে, এবং তা আদায় করার জন্য সহজ পদ্ধতি বলে দিয়েছে। যাকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘রুখসাত’ বলা হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে, তবে অন্য দিনে সে সমান সংখ্যা (রোজা) পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের পক্ষে যা সহজ সেটাই চান, তোমাদের জন্য জটিলতা চান না, এবং (তিনি চান) যাতে তোমরা রোজার সংখ্যা পূরণ করে নাও এবং আল্লাহ তোমাদের যে পথ দেখিয়েছেন, সে জন্য আল্লাহর তাকবির পাঠ করো এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

 

তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন

আল্লাহ জানেন যে বান্দা শয়তানের প্ররোচনায় বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়বে। তাই আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য তাওবার দরজা খোলা রেখেছেন। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তাআলার বিশেষ রহমত। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩১)

মহান আল্লাহ আমাদের তাঁর বিশেষ রহমতে সিক্ত করুন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর