ঢাকা ০৬:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২
  • ১৩৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টি করে এমনিতেই ছেড়ে দেননি, বরং তাদের দ্বিনের ওপর অটল ও অবিচল রাখার জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী-রাসুল। এই ধারাবাহিকতায় সব শেষে প্রেরণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে। অন্য নবী-রাসুলদের থেকে তাঁর আছে ব্যতিক্রমী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য।

বিশ্বনবী : আদম (আ.) থেকে শুরু করে ঈসা (আ.) পর্যন্ত যত নবী-রাসুল এসেছেন তাঁরা ছিলেন গোষ্ঠী, এলাকা ও জাতিকেন্দ্রিক।

গোটা বিশ্বের দায়িত্ব দিয়ে তাঁদের প্রেরণ করা হয়নি। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন বিশ্বনবী হিসেবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করছি। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

শেষ নবী : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে শেষ জামানায়, সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবী। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী : আমাদের রাসুল (সা.)  হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। রাসুল (সা.) স্বয়ং বলেছেন, আমি বিচার দিবসে আদম সন্তানের সর্দার হব। তবে এতে আমার অহংকার নেই। (তিরমিজি)

চিরন্তন মুজিজা : আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রাসুলকে কমবেশি মুজিজা তথা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছেন। তাঁরা দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে তিনি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। আমাদের রাসুল (সা.) ছাড়া অন্য নবী-রাসুলদের মুজিজা তাঁদের জীবদ্দশায়ই বর্তমান ছিল। তাঁদের ওফাতের পর তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। মুসা (আ.)-এর লাঠি, সালেহ (আ.)-এর উষ্ট্রী এবং নূহ (আ)-এর নৌকা এখন আর অবিকৃত অবস্থায় নেই। তাঁদের কাছে প্রেরিত কিতাব অবিকৃত অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের রাসুল (সা.)-এর মুজিজা চিরন্তন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর অনেক মুজিজা এখনো বিদ্যমান আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাঁর প্রধান মুজিজা হলো কোরআন মাজিদ।

সর্বোত্তম আদর্শ : মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে যাকে ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ বলা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর গোটা জীবনে সব স্তরের মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রাসুল (সা.)-এর মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

সর্বোত্তম চরিত্র : আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্য থেকে যাচাই করে তাঁর রাসুলকে সর্বোত্তম চরিত্র দান করেন। তাঁর পুরো জীবনে হাজারো উত্তম চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। ’ (সুরা : আল-কলম, আয়াত : ৪)

শ্রেষ্ঠ উম্মত : আমাদের প্রিয় নবী (সা.) যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি তাঁর উম্মতকেও শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ : হাদিসের ভাষ্য মতে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্য নবী-রাসুলরা প্রবেশ করবেন। আর উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্যান্য নবীর উম্মতগণ প্রবেশ করবেন।

প্রথম সৃষ্টি : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সৃষ্টির আদিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রেরণ করেছেন সব শেষে। মহানবী (সা.) বলেছেন, যখন আদম (আ.)-এর অস্তিত্ব ছিল না তখনো আমি নবী ছিলাম। সব নবী-রাসুল আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে চিনতেন। আল্লাহ তাআলা রুহের জগতে তাঁদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন। যেমন—আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান অতঃপর তোমাদের নিকট কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্যায়নের জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। ’ তিনি বলেন, ‘তোমরা কি অঙ্গীকার করেছ এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ?’ তারা বলল, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি। ’ তিনি বললেন, ‘তাহলে এবার তোমরা সাক্ষী থাকো। আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুহাম্মাদ (সা.)-এর অনন্য বৈশিষ্ট্য

আপডেট টাইম : ১০:৪৩:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ তাআলা মানবজাতি সৃষ্টি করে এমনিতেই ছেড়ে দেননি, বরং তাদের দ্বিনের ওপর অটল ও অবিচল রাখার জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন অসংখ্য নবী-রাসুল। এই ধারাবাহিকতায় সব শেষে প্রেরণ করেছেন আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে। অন্য নবী-রাসুলদের থেকে তাঁর আছে ব্যতিক্রমী ও অনন্য বৈশিষ্ট্য।

বিশ্বনবী : আদম (আ.) থেকে শুরু করে ঈসা (আ.) পর্যন্ত যত নবী-রাসুল এসেছেন তাঁরা ছিলেন গোষ্ঠী, এলাকা ও জাতিকেন্দ্রিক।

গোটা বিশ্বের দায়িত্ব দিয়ে তাঁদের প্রেরণ করা হয়নি। একমাত্র আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন বিশ্বনবী হিসেবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বের রহমতস্বরূপ প্রেরণ করছি। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)

শেষ নবী : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে শেষ জামানায়, সর্বশেষ নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবেন না। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মুহাম্মদ তোমাদের কোনো পুরুষের পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসুল ও সর্বশেষ নবী। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪০)

সর্বশ্রেষ্ঠ নবী : আমাদের রাসুল (সা.)  হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল। রাসুল (সা.) স্বয়ং বলেছেন, আমি বিচার দিবসে আদম সন্তানের সর্দার হব। তবে এতে আমার অহংকার নেই। (তিরমিজি)

চিরন্তন মুজিজা : আল্লাহ প্রত্যেক নবী-রাসুলকে কমবেশি মুজিজা তথা অলৌকিক ক্ষমতা প্রদান করেছেন। তাঁরা দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে প্রয়োজনে এ ক্ষমতা প্রয়োগ করেছেন, যাতে মানুষ বুঝতে পারে যে তিনি আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত। আমাদের রাসুল (সা.) ছাড়া অন্য নবী-রাসুলদের মুজিজা তাঁদের জীবদ্দশায়ই বর্তমান ছিল। তাঁদের ওফাতের পর তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। মুসা (আ.)-এর লাঠি, সালেহ (আ.)-এর উষ্ট্রী এবং নূহ (আ)-এর নৌকা এখন আর অবিকৃত অবস্থায় নেই। তাঁদের কাছে প্রেরিত কিতাব অবিকৃত অবস্থায় নেই। কিন্তু আমাদের রাসুল (সা.)-এর মুজিজা চিরন্তন। তাঁর ওফাতের পরও তাঁর অনেক মুজিজা এখনো বিদ্যমান আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। তাঁর প্রধান মুজিজা হলো কোরআন মাজিদ।

সর্বোত্তম আদর্শ : মহান আল্লাহ আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সর্বোত্তম আদর্শ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে যাকে ‘উসওয়ায়ে হাসানা’ বলা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর গোটা জীবনে সব স্তরের মানুষের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘অবশ্যই তোমাদের প্রত্যেকের জন্য রাসুল (সা.)-এর মধ্যেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

সর্বোত্তম চরিত্র : আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্য থেকে যাচাই করে তাঁর রাসুলকে সর্বোত্তম চরিত্র দান করেন। তাঁর পুরো জীবনে হাজারো উত্তম চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। তাঁর উত্তম চরিত্রের কথা ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর অবশ্যই আপনি মহান চরিত্রের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। ’ (সুরা : আল-কলম, আয়াত : ৪)

শ্রেষ্ঠ উম্মত : আমাদের প্রিয় নবী (সা.) যেমন শ্রেষ্ঠ, তেমনি তাঁর উম্মতকেও শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ : হাদিসের ভাষ্য মতে, আমাদের প্রিয় নবী (সা.) সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্য নবী-রাসুলরা প্রবেশ করবেন। আর উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) জান্নাতে প্রবেশ করবেন। তারপর অন্যান্য নবীর উম্মতগণ প্রবেশ করবেন।

প্রথম সৃষ্টি : আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে সৃষ্টির আদিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু প্রেরণ করেছেন সব শেষে। মহানবী (সা.) বলেছেন, যখন আদম (আ.)-এর অস্তিত্ব ছিল না তখনো আমি নবী ছিলাম। সব নবী-রাসুল আমাদের প্রিয় নবী (সা.)-কে চিনতেন। আল্লাহ তাআলা রুহের জগতে তাঁদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন। যেমন—আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান অতঃপর তোমাদের নিকট কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্যায়নের জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তার সাহায্য করবে। ’ তিনি বলেন, ‘তোমরা কি অঙ্গীকার করেছ এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ?’ তারা বলল, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি। ’ তিনি বললেন, ‘তাহলে এবার তোমরা সাক্ষী থাকো। আমিও তোমাদের সঙ্গে সাক্ষী রইলাম। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)