হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার মৌসুমে ২ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় বিপুল পরিমাণ আম বিক্রির আশা দেখছেন স্থানীয় কৃষি বিপণন বিভাগ।
জেলার বিপণন বিভাগ বলছে, এবার আমের মৌসুমের প্রথম দিক থেকেই আমের বাজার চড়া। আবার কুরিয়ার সার্ভিসের ভাড়া বাড়ায় অন্য জেলার বাসিন্দারা আম কিনতে অনিহা প্রকাশ করছেন বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন অধিদ্প্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমের মৌসুমে ২ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার মৌসুমে আম বিক্রি করে আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। অবশ্য গত বছর কত কোটি টাকার আম বিক্রি হয়েছে এ তথ্য নেই প্রতিষ্ঠানটির কাছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আম কেনা বেচার উদ্বোধন হয়ে গেলেও প্রতিকূলে আবহাওয়া থাকায় আম পাকতে দেরি হয়েছে। ফলে এখনও জেলার আমের বাজারগুলো রমরমা হয়ে উঠেনি।
আম ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, মৌসুমে গোপালভোগ আর গুটি জাতের আমগুলো সবার আগে বাজারে আসে। বাজারে এখন গোপালভোগ মণপ্রতি ১৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। বাজারে আম না থাকায় এখনও বাজার চাঙ্গা হয়নি।
আরেক আম ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জানান, অনেক বাগানে ক্ষিরসাপাত আম পেকেছে। তাই বাজারে গাছ পাকা আর কাচা ক্ষিরসাপাত আম পাওয়া যাচ্ছে। এ আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ২৮০০-৩০০০ টাকা দরে।
গত বছর করোনাকালে মানুষ অনলাইনে আমের ব্যবসা শুরু করেছে। সোসিয়াল মিডিয়ায় প্রচার প্রচারণা করে অনেকে শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতি আম বিক্রি করছেন। তাদের দাবি কুরিয়ার ভাড়া বেশি হওয়ায় ভোক্তাদের কাছে আমের দরে প্রভাব পড়ছে।
জেলায় জেলায় ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ আম পৌঁছে দিচ্ছেন যারা, এ রকম একজন শাহজাহান। তিনি বলেন, এবারের মৌসুমে আমের দাম বেশি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম মিষ্টি হওয়ায় বাইরের জেলাগুলোতে বেশি চাহিদা। ঢাকায় দশ কেজি আম পাঠাতে কুরিয়ার ভাড়াসহ ২০০ টাকা লাগছে। চারশত টাকার আম পাঠাতে ২০০ টাকা খরচ লাগে। কুরিয়ার সার্ভিসের ভাড়া কমালে অন্য জেলার ভোক্তারা আরও বেশি পরিমাণে আম কিনতে উৎসাহ পাবেন।
শিবগঞ্জে মা (নুর ই-জান্নাত) আর মেয়ে (আশিফা) এবারও আম ব্যবসায় জোর দিয়েছেন। তারা গত বছর থেকে অনলাইনে আম বিক্রি করছেন। এ মৌসুমে মা মেয়ে মিলে দৈনিক ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি করে আম বিক্রি করছেন অনলাইনে।
নুর ই-জান্নাত বলেন, বাইরের জেলার ভোক্তারা আমাদের জেলার আম খুব পছন্দ করেন। ভোক্তারা আমের দাম নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কুরিয়ার ভাড়া বেশি হওয়ায় কিছু কিছু ভোক্তা আম কিনতে অনিহা প্রকাশ করেন। সার্ভিস চার্জ কমলে ভোক্তারা আম কিনতে স্বাছন্দ বোধ করবে।
কুরিয়ার সার্ভিসের শাহজালার নামের এক এজেন্ট জানান, প্রধান অফিস থেকে আমাদের যে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়, আমরা সেই পরিমাণ ভাড়া নিয়ে থাকি। সার্ভিস চার্জ কমা-বাড়ার আমাদের এখতেয়ার নেই।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, খাদ্য ঘাটতি থাকায় পুরাতন বাগানের বড়বড় আম গাছে মুকুলের পরিবর্তে ডালের ডগায় কচি পাতা বের হয়েছে। ফলে পুরাতন ওইসব গাছে আমের ফলন হয়নি। তবে নতুন বাগানগুলোর ছোট ছোট গাছগুলোতে থোকায় থোকায় দুলছে আম।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ২ লাখ ৭৭ হাজার ৬২২ বিঘায় মোট ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০ টি আম গাছে ফলন হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৯১১ বিঘা বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। এ বছরে আম উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এবার ২ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে জানান এ কর্মকর্তাও।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি বিপণন অধিদ্প্তরের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, এবার জেলায় আম বিক্রি সম্ভাবনা ২ হাজার কোটি টাকা। মৌসুমের শুরু থেকেই আমের বাজার চড়া হওয়ায় আরও বাড়তে পারে বেচাকেনার পরিমাণ।
তিনি বলেন, ’সদাই’ নামের অনলাইনে কৃষি পণ্য বেচাকেনা করা হয়। এটি সরকারি অনলাইন প্রতিষ্ঠান। জেলার উদ্যোক্তারা চাইলে এখান থেকেও আম বিক্রি করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, কোন আম ক্রেতা-বিক্রেতা এখান থেকে প্রতারণার শিকার হলে কিংবা আর্থিক লেনদেনে নিয়ে প্রতারিত হলে তার পাশে দাঁড়াবে কৃষি বিপণন বিভাগ।