ঢাকা ০১:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবা ভ্যানচালক, মা চা বিক্রেতা, মেয়ে যাচ্ছে পর্তুগাল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২
  • ১০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর সদস্য কাকলী আক্তার। সম্প্রতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে। তিন মাস ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে কাকলী। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে তার এমন সাফল্যতে আনন্দিত সুশিল সমাজ।

রাণীশংকৈল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেম ও বানেসার মেয়ে কাকলী আক্তার (১৬)। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আবাদি কোন জমি নেই কাকলীদের। ঋণের টাকায় একটি ভ্যান কিনেন তার বাবা। সেই ভ্যান চালিয়ে যা আয় হত তা দিয়েই চলতো ভরণ-পোষণ। আয়ের তুলনায় পরিবারের চাহিদা বেশি থাকতো তাদের। তবে কিছুই করার ছিল না। উপার্জন আসার কোন রাস্তা ছিলনা তাদের। যা হত কষ্ট করে নিজের সংসার চালিয়ে নিতেন কাকলীর মা বানেসা।

দিন আসতো দিন যেত, অভাব যেন দূর হতোনা কাকলীদের। তার মা বানেসা নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন চা বিক্রি। রাস্তার ধারে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করেই পরিবার ও কাকলীর অর্থের যোগান দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ বাবা চালান ভ্যান আর মা করে যাচ্ছেন চা বিক্রি। তবে মেয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার কথা যেন সব কষ্ট ভুলিয়ে রেখেছে তাদের পরিবারকে।

কাকলীর মা বানেসা বলেন, ‘আমার মেয়েটা বাইরের দেশে যাচ্ছে এটা গর্বের বিষয়। সবাই দোয়া করবেন তার জন্য’। কাকলীর বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘যেখানে যাই সেখানকার লোকজন খোঁজ খবর নেয়। চা খাওয়ায় আর কাকলীর গল্প করে। তখন বুকটা আনন্দে ভরে উঠে’।

কাকলী আক্তার বলেন, ‘দেশের বাইরে গিয়ে ফুটবলকে আরো রপ্ত করতে চাই। জীবনের স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটি স্বপ্ন হলো কখনো বড় কিছু হলে রাঙাটুঙ্গি মাঠকে উন্নত করব ইনশাআল্লাহ’। রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মেয়ে হয়ে সমাজের নানা কথা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজকে সে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি কাকলী আক্তার উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে’।

রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার পৌরসভার এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী। আজকে সে ফুটবলের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে। এটি আমাদের পৌরসভার জন্য একটি খুশির খবর। তার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে’। এভাবে মেয়েরা খেলাধুলার পাশাপাশি সবকিছুতে এগিয়ে এসে দেশ ও জেলার নাম উজ্জ্বল করবে। কাকলীর মত মেয়েরা সমাজের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এগিয়ে যাবে নারীরা এমটাই আশা সুশিল সমাজের।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাবা ভ্যানচালক, মা চা বিক্রেতা, মেয়ে যাচ্ছে পর্তুগাল

আপডেট টাইম : ০৯:৫৭:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল রাঙাটুঙ্গী ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর সদস্য কাকলী আক্তার। সম্প্রতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরের দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে সে। তিন মাস ফুটবল খেলার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে কাকলী। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে তার এমন সাফল্যতে আনন্দিত সুশিল সমাজ।

রাণীশংকৈল পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের আবুল কাশেম ও বানেসার মেয়ে কাকলী আক্তার (১৬)। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। নিজস্ব বসতভিটা ছাড়া আবাদি কোন জমি নেই কাকলীদের। ঋণের টাকায় একটি ভ্যান কিনেন তার বাবা। সেই ভ্যান চালিয়ে যা আয় হত তা দিয়েই চলতো ভরণ-পোষণ। আয়ের তুলনায় পরিবারের চাহিদা বেশি থাকতো তাদের। তবে কিছুই করার ছিল না। উপার্জন আসার কোন রাস্তা ছিলনা তাদের। যা হত কষ্ট করে নিজের সংসার চালিয়ে নিতেন কাকলীর মা বানেসা।

দিন আসতো দিন যেত, অভাব যেন দূর হতোনা কাকলীদের। তার মা বানেসা নিজের কাছে জমানো কিছু টাকা দিয়ে শুরু করেন চা বিক্রি। রাস্তার ধারে ছোট একটি দোকানে চা বিক্রি করেই পরিবার ও কাকলীর অর্থের যোগান দিয়েছেন তিনি। বর্তমানে অসুস্থ বয়োবৃদ্ধ বাবা চালান ভ্যান আর মা করে যাচ্ছেন চা বিক্রি। তবে মেয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার কথা যেন সব কষ্ট ভুলিয়ে রেখেছে তাদের পরিবারকে।

কাকলীর মা বানেসা বলেন, ‘আমার মেয়েটা বাইরের দেশে যাচ্ছে এটা গর্বের বিষয়। সবাই দোয়া করবেন তার জন্য’। কাকলীর বাবা আবুল কাশেম বলেন, ‘যেখানে যাই সেখানকার লোকজন খোঁজ খবর নেয়। চা খাওয়ায় আর কাকলীর গল্প করে। তখন বুকটা আনন্দে ভরে উঠে’।

কাকলী আক্তার বলেন, ‘দেশের বাইরে গিয়ে ফুটবলকে আরো রপ্ত করতে চাই। জীবনের স্বপ্নগুলোর মধ্যে একটি স্বপ্ন হলো কখনো বড় কিছু হলে রাঙাটুঙ্গি মাঠকে উন্নত করব ইনশাআল্লাহ’। রাঙাটুঙ্গি ইউনাইটেড মহিলা ফুটবল একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘একজন মেয়ে হয়ে সমাজের নানা কথা ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে আজকে সে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বাইরে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি কাকলী আক্তার উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসবে’।

রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমার পৌরসভার এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান কাকলী। আজকে সে ফুটবলের উচ্চ প্রশিক্ষণের জন্য পর্তুগাল যাচ্ছে। এটি আমাদের পৌরসভার জন্য একটি খুশির খবর। তার জন্য সবসময় শুভ কামনা থাকবে’। এভাবে মেয়েরা খেলাধুলার পাশাপাশি সবকিছুতে এগিয়ে এসে দেশ ও জেলার নাম উজ্জ্বল করবে। কাকলীর মত মেয়েরা সমাজের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এগিয়ে যাবে নারীরা এমটাই আশা সুশিল সমাজের।