হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। হালাল উপার্জনই শ্রেষ্ঠ উপার্জন; কিন্তু আজ আমরা সম্পদ উপার্জনের ক্ষেত্রে এতটাই লাগামহীন হয়েছি, হালাল-হারাম দেখার যেন সময়ই নেই। যেভাবে পারছি সম্পদ হস্তগত করে ছাড়ছি। বিশ্বনবি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ এমন এক কাল অতিক্রম করবে, যাতে মানুষ এ কথার চিন্তা করবে না, যে সম্পদ উপার্জন করা হচ্ছে, তা হালাল না হারাম?’ (মিশকাত)। বর্তমান আমরা এমন যুগই অতিক্রম করছি। অথচ রিজিকের মালিক হলেন সৃষ্টিকর্তা। তিনি যাকে চান প্রভূত রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হলো তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা। যেভাবে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন : ‘তুমি বল, নিশ্চয় আমার রব যার জন্য চান রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন এবং সংকুচিতও করে দেন; কিন্তু অধিকাংশ, লোক তা জানে না।’ (সূরা সাবা : আয়াত ৩৬)।
আল্লাহর রাসূল (সা.) হালাল রোজগারের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। হাদিসে এসেছে হজরত যুবায়ের ইবনুল আওয়াম (রা.) বলেন, হজরত রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের কেউ তার রশি নিয়ে চলে যাক, পিঠে কাঠের বোঝা বহন করে এনে তা বিক্রি করুক এবং তার চেহারাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করুক। এটা তার জন্য মানুষের কাছে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম। চাই তাকে দান করুক বা না করুক (মুসলিম) রাসূল (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের ময়দানে বনু আদমকে পাঁচটি প্রশ্ন করা হবে। সেই পাঁচটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না দেওয়া পর্যন্ত কোনো মানুষ অর্ধ হাত পরিমাণ সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। তার মধ্যে একটি হলো-সে কোন পথে উপার্জন করেছে।’ (তিরমিজি)।
হালাল উপার্জনের পাশাপাশি রিজিক বৃদ্ধির জন্য আমাদের সব সময় দোয়াও করতে হবে। অভাব মোচনে যে দোয়াটি আমরা অধিক পাঠ করতে পারি-‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলাইনা মা ইদাতাম মিনাসসামাই তাকুনু লানা ঈদাল্লি আউয়্যালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সূরা মায়েদা : আয়াত ১১৪)। অর্থ : ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদের রিজিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিজিকদাতা।’
আমরা যদি সব সময় দোয়া করি, আর হালাল রিজিক ভক্ষণ করি তাহলে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারব। হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রিজিক ভক্ষণ করল আর সুন্নত মতে আমল করল এবং মানুষ তার কষ্ট থেকে নিরাপদ রইল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল, এ ধরনের লোক বর্তমানে অনেক। তিনি বলেন, আমার পরে তা কয়েক যুগ পাওয়া যাবে।’ (তিরমিজি)।
এ ছাড়া বেশি বেশি ইস্তেগফার করলেও রিজিক বৃদ্ধি পায় আর অভাব মোচন হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ)। আসলে আমাদের মাঝে যখন অভাব দেখা দেয় তখন আল্লাহর দিকে ঝুঁকি, কিন্তু অভাব দূর হওয়া মাত্রই আল্লাহকে ভুলে যাই আর কৃপণতা দেখাই।
আজ বেশিরভাগ পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ আর অশান্তি যেন লেগেই আছে। সংসারে শান্তি নেই, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে পিতামাতার সম্পর্ক নেই, স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মিল নেই; যার ফলে প্রতিদিন কতই না সংসার ভেঙে যাচ্ছে। আমি মনে করি, পরিবারে অশান্তির কারণগুলোর মধ্যে বিশেষ একটি কারণ হলো অধিক চাহিদা আর হারাম উপার্জন। মানুষের চাহিদা যখন বেড়ে যায়, তখন অপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য সে আর হালাল-হারাম নিয়ে ভাবে না। আমরা যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাই যারা হালাল উপার্জন করে সহজ-সরল জীবনযাপন করেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা এমনিতেই স্বল্পেতুষ্ট থাকেন। এদের এতসব চাহিদাও নেই আর পরিবারে সব সময় বিরাজ করে অনাবিল সুখ-শান্তি।
আরেকটি বিষয় আমাদের মনে রাখাতে হবে, আমরা যদি আমাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখি, তাহলে আল্লাহতায়ালা আমাদের রিজিকে বরকত দেবেন আর আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দেবেন। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)কে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেওয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
তাই আসুন, পরিবারে সুখ-শান্তির জন্য হারাম উপার্জন ত্যাগ করে হালাল উপার্জন করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের হালাল রিজিক ভক্ষণ করার তৌফিক দান করুন, আমিন।