ঢাকা ০৬:৩২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পানিতে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন : ধান পচে যাচ্ছে ক্ষেতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২
  • ১৪১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যশোরের ক্ষেতের পাকা ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষক। কাটা ধান পচে যাচ্ছে ক্ষেতে, এক দিকে শ্রমিক সংকট ও অন্য দিকে ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়া কারণে চাষিদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি।
কৃষক নজরুল শেখ জানান, ‘ধান ভালো হয়েছিল। পাকা ধান প্রায় এক সপ্তাহ আগে কেটে ক্ষেতেই রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝড়-বাদল শুরু হওয়ায় কাটা ধান আর বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। এখন ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। ভাসছে কাটা ধান। ধানগাছ পচে যাচ্ছে। অনেক ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। ধান নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’ শুধু নজরুল শেখ নন, এমন বিপদে আছেন যশোরের আট উপজেলার আরও অনেক কৃষক।

কয়েকজন কৃষকেরা জানান, ঈদের দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয় জেলাটিতে। এরপর টানা দু’দিন কড়া তাপদাহের পর গেল পাঁচদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড় বইছে। বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
যশোর বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রীত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ৫ দিনে যশোরে ১০২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে পাকা কাটা ধান নষ্ট হচ্ছে।

মনিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন এবার সাড়ে ৮ বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের সব ধান পেকে গেছে। তিনি সাড়ে চার বিঘা জমির ধান কেটে খেতে শুকাতে দিয়েছিলেন। তিন দিনের বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে প্রায় এক হাত পানি জমে গেছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, চার বিঘাধানের মধ্যে ১০ কাঠা জমির ধান বাড়িতে এনেছি। বাকি ধান মাঠে ভিজছে। বিচালী হবে না, আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ কৃষক চরম লোকসানের মধ্যে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। জেলার ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বৃষ্টিতে ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের দাম কম হবে। তবে আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। সবচেয়ে বেশি মনিরামপুর, চৌগাছা, শার্শা ও সদর উপজেলায় বৃষ্টিতে বেশির ভাগই ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পানিতে ডুবে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন : ধান পচে যাচ্ছে ক্ষেতে

আপডেট টাইম : ০৬:৫০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যশোরের ক্ষেতের পাকা ধান নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন কৃষক। কাটা ধান পচে যাচ্ছে ক্ষেতে, এক দিকে শ্রমিক সংকট ও অন্য দিকে ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে বৈরি আবহাওয়া কারণে চাষিদের কপালে দেখা দিয়েছে চিন্তার ভাঁজ। ক্ষেতে কেটে রাখা ধান বৃষ্টির পানিতে ভাসছে। ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে নেই হাসি।
কৃষক নজরুল শেখ জানান, ‘ধান ভালো হয়েছিল। পাকা ধান প্রায় এক সপ্তাহ আগে কেটে ক্ষেতেই রোদে শুকাতে দিয়েছিলেন। কিন্তু ঝড়-বাদল শুরু হওয়ায় কাটা ধান আর বাড়ি আনা সম্ভব হয়নি। এখন ক্ষেতে হাঁটুপানি জমেছে। ভাসছে কাটা ধান। ধানগাছ পচে যাচ্ছে। অনেক ধানে অঙ্কুর গজিয়েছে। ধান নিয়ে খুবই বিপদে আছি।’ শুধু নজরুল শেখ নন, এমন বিপদে আছেন যশোরের আট উপজেলার আরও অনেক কৃষক।

কয়েকজন কৃষকেরা জানান, ঈদের দিন থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয় জেলাটিতে। এরপর টানা দু’দিন কড়া তাপদাহের পর গেল পাঁচদিন ধরে থেমে থেমে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ঝড় বইছে। বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো বাতাসে জেলার বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
যশোর বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রীত আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত ৫ দিনে যশোরে ১০২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে ফসলের মাঠগুলোতে পানি জমে পাকা কাটা ধান নষ্ট হচ্ছে।

মনিরামপুর উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের কৃষক আমির হোসেন এবার সাড়ে ৮ বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তার ক্ষেতের সব ধান পেকে গেছে। তিনি সাড়ে চার বিঘা জমির ধান কেটে খেতে শুকাতে দিয়েছিলেন। তিন দিনের বৃষ্টিতে তার ক্ষেতে প্রায় এক হাত পানি জমে গেছে।
ঝিকরগাছা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, চার বিঘাধানের মধ্যে ১০ কাঠা জমির ধান বাড়িতে এনেছি। বাকি ধান মাঠে ভিজছে। বিচালী হবে না, আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ কৃষক চরম লোকসানের মধ্যে পড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপঙ্কর দাশ বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৪৫৯ মেট্রিক টন। বুধবার পর্যন্ত ৯৫ হাজার ১০৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। জেলার ৬০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ জমির ধান কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। বৃষ্টিতে ক্ষেতে কেটে রাখা ধানের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের গাছ থেকে শিষ ভেঙে পড়ছে। ধানের অঙ্কুরোদগম শুরু হয়েছে। ভিজে যাওয়া ধানের দাম কম হবে। তবে আর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। সবচেয়ে বেশি মনিরামপুর, চৌগাছা, শার্শা ও সদর উপজেলায় বৃষ্টিতে বেশির ভাগই ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি কর্মকর্তারা।