ঢাকা ০৮:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানের আমলগুলো ধরে রাখবেন যেভাবে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:০৫:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মে ২০২২
  • ১৪২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজান মাসজুড়ে যেসব অভ্যাস ও গুণ নিজেদের মধ্যে গঠন করেছেন তা কীভাবে ধরে রাখবেন? যে অভ্যাসগুলো অব্যাহত থাকলে বছরজুড় যে কেউ থাকবে নিরাপদ ও গুনাহমুক্ত। এটি মানুষের জীবনে অনেক বড় পাওয়া ও মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। সেই উপায়গুলো কী?

ইসলাকি স্কলার ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নিজেদের ভালো অভ্যাস গঠনে তৈরি করতে পারে। কোনো মানুষ যদি নিয়মিত ভালো কাজ করে তবে সে নিয়মিত কাজের একটি প্রভাব বা অভ্যাস তার মধ্যে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। যেমন-

১. নিয়মিত নামাজ পড়লে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়;

২. রোজা রাখলে রোজা পালনের অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়;

৩. মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্যধারণ করলে তাও তৈরি হয়।

এসবই মুমিন মুসলমানের ভালো ও কল্যাণকর অভ্যাস। যা রমজান মাসের এক কার্যকরী সুযোগে অর্জন করেছেন। রমজান চলে গেছে এখন তা অভ্যাসে পরিণত করা বরং জারি রাখা জরুরি।

রমজানে যে ব্যক্তি নিয়মিত রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর ইচ্ছায় সে ব্যক্তির মাঝে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি হয়েছে। গুনার অভ্যাস দূর হয়ে গেছে।

আবার রমজানের পরে অনেকেই সে ভালো গুণগুলো থেকে দূরে সরে যায়। এ কারণেই রমজানের ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার রয়েছে ৮টি উপায়। তাহলো-

১. সপ্তাহিক রোজা রাখা

রমজানের পর প্রত্যেক সপ্তাহে ২ দিন রোজা পালন করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে সুন্নাত হলো সোম ও বৃহস্পতিবার দিন রোজা রাখা। তাতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়। রোজা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই দেয় না বরং তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারও রয়েছে।

স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, রোজা বা উপবাস পালন মানুষের শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারি। রোজায় মানুষের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম, মনোযোগ ও শারীরিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়।

তাই সুন্নাতের অনুসরণ করে সাপ্তাহিক দুইদিন রোজা রাখা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সপ্তাহে ২দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে পৌছানো হয়। আর আমি এটি ভালোবাসি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার কাজে হিসাব পৌছানো হোক।’ (তিরমিজি)

২. দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা

দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা। কেননা দান-সহযোগিতা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। রমজানে যেভাবে বেশি সাওয়াব লাভের আশায় মানুষ দান-সাদকাহ করে, রমজান পরবর্তী সময়েও গরিবদের দান-সাদকাহের অভ্যাস চালু রাখা।

দানের কার্যকারিতা শুধু আখেরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান-সাদকা মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে দেয়।’

এ দান-সাদকার ফলে সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে। তাতে পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ তৈরি হয়।

৩. নিয়মিত কোরআন পড়া

রমজানের পরে নির্ধারিত একটি সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি রাখা। যেভাবে রমজান মাসে মানুষ সুনির্ধারিত সময়ে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।

কোরআন তেলাওয়াতও মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য মহাসহায়ক। কোরআন তেলাওয়াত উত্তম ইবাদত। কোরআন পরকালে শুধু তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশই করবে না বরং দুনিয়াতে অনেক অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

৪. অর্থসহ কোরআন শেখা

রমজানের পর সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন অধ্যয়ন তথা অর্থসহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়া। তা নিজে নিজেও হতে পারে আবার মসজিদ কিংবা পাঠাগারে দরসে বসার মাধ্যমেও হতে পারে।

রমজান মাসে কোরআন নাজিল করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রমজান মাস। এ মাসে আল্লাহ কোরআন নাজিল করেছেন, মানুষের হেদায়েত লাভের জন্য। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

রমজানের পরে কোরআন বুঝার নিয়মিত চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একটা সময় কোরআন বুঝা সহজ হয়ে যাবে। আর সে আলোকে গড়ে ওঠবে মানুষ জীবন।

৫. কোরআনের আলোকে নিজেকে পরিচালনা করা

রমজান মাসে কুরআনের যেসব জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ। রমজানের পরেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। কোরআনুল কারিমের সব ঘটনাগুলোই অর্থবহ এবং পরিপূর্ণ। কোরআনের সে ঘটনাগুলোর আলোকেই নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

যখনই কোরআনের কোনো ঘটনা বা জ্ঞান অর্জন করা হয়, তখনই সে ঘটনা বা গুণ দিয়ে নিজেকে মূল্যয়ন করুন। যদি তা থেকে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর সে গুণ না থাকলে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন।

কোরআনের জ্ঞান অনুযায়ী নিয়মিত এ অভ্যাস গঠনই মানুষকে আলোকিত জীবনে গঠনের পথ দেখায়। এর অন্যতম প্রমাণ হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

৬. বেশি বেশি দোয়া করা

কোরআনের অনেক ঘটনায় দোয়ার কথা এসেছে। কল্যাণ লাভে দোয়ার রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। রমজান মাসে দোয়া যেভাবে মানুষের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়নি। রমজান পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা জরুরি। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’

আল্লাহ তাআলা প্রতিদিনই মানুষকে ডেকে ডেকে বলেন, তাঁর কাছে দোয়া করার জন্য। নিজের গোনাহ মাফের আহ্বান করেন, রিজিক চাওয়ার আহ্বান করেন। এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া-

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা; ওয়া হাবলানা মিল্লা দুংকা রাহমাহ; ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ্‌হাব।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! (হেদায়েতের) সরল পথ দেখানোর পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনের দিকে পরিচালিত করো না। আর তোমার কাছ থেকে আমাদের অনুগ্রহ দান কর। নিশ্চয় তুমিই সব কিছুর দাতা।’ (সুরা আল-ইমরান : ৮)

সুতরাং যারা রমজানের পরেই আল্লাহর কাছে নিয়মিত দিনে-রাতে দোয়ার অভ্যাস গঠন করবে, তারাই সফলকাম হবে।

৭. প্রতিবেশি-বন্ধুরা মিলে ভালো কাজ করা

প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ভালো অভ্যাস গঠনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। কারো মাঝে অন্যায় বা খারাপ আচরণ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকতে ভালো কাজ বা গুণের পরামর্শ দেয়া। একে অপরকে নিয়মিত ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা।

ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিতে একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিদিনই নির্ধারিত একটা সময় ভালো কাজের আলোচনা হতে পারে। হতে পারে তা কুরআন শিক্ষা বা গবেষণার আসর।

৮. নিয়মিত নিজেকে মূল্যয়ন করা

প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত নিজের কাজের মূল্যয়ন করা। জবাবদিহিতার মনোভাব তৈরি করা। নিজেরে কাজের হিসাব নিজে নেওয়া। আর তাতে ভেসে উঠবে ভালো ও মন্দ কাজ প্রতিচ্ছবি। নিজেকে মূল্যয়নে কুরআনে সে আয়াতটি বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। আর তাহলো-

‘তোমার কিতাব (আমল বা কাজের হিসাব) পাঠ কর। আজ তোমার হিসাব (কাজের মূল্যয়ন) গ্রহণে তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১৪)

প্রতিদিন নিজের কাজের মূল্যয়ন অব্যাহত রাখলে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ সম্ভব হবে। পরকালে নিজেদের কাজের হিসাপ প্রদানও হবে সহজ। আর তাতেই আলোকিত জীবন লাভ করবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের পরবর্তী সময়ে উল্লেখিত কাজগুলো নিয়মিত পালন করার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রমজানের আমলগুলো ধরে রাখবেন যেভাবে

আপডেট টাইম : ০৫:০৫:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজান মাসজুড়ে যেসব অভ্যাস ও গুণ নিজেদের মধ্যে গঠন করেছেন তা কীভাবে ধরে রাখবেন? যে অভ্যাসগুলো অব্যাহত থাকলে বছরজুড় যে কেউ থাকবে নিরাপদ ও গুনাহমুক্ত। এটি মানুষের জীবনে অনেক বড় পাওয়া ও মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ। সেই উপায়গুলো কী?

ইসলাকি স্কলার ও মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষ ৩ সপ্তাহের প্রচেষ্টায় নিজেদের ভালো অভ্যাস গঠনে তৈরি করতে পারে। কোনো মানুষ যদি নিয়মিত ভালো কাজ করে তবে সে নিয়মিত কাজের একটি প্রভাব বা অভ্যাস তার মধ্যে এমনিতেই তৈরি হয়ে যায়। যেমন-

১. নিয়মিত নামাজ পড়লে নামাজের অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়;

২. রোজা রাখলে রোজা পালনের অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়;

৩. মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে ধৈর্যধারণ করলে তাও তৈরি হয়।

এসবই মুমিন মুসলমানের ভালো ও কল্যাণকর অভ্যাস। যা রমজান মাসের এক কার্যকরী সুযোগে অর্জন করেছেন। রমজান চলে গেছে এখন তা অভ্যাসে পরিণত করা বরং জারি রাখা জরুরি।

রমজানে যে ব্যক্তি নিয়মিত রোজা রাখে, নামাজ আদায় করে, ধৈর্যধারণ করে তবে এটা নিশ্চিত যে, আল্লাহর ইচ্ছায় সে ব্যক্তির মাঝে ভালো অভ্যাসগুলো তৈরি হয়েছে। গুনার অভ্যাস দূর হয়ে গেছে।

আবার রমজানের পরে অনেকেই সে ভালো গুণগুলো থেকে দূরে সরে যায়। এ কারণেই রমজানের ভালো অভ্যাসগুলো ধরে রাখার রয়েছে ৮টি উপায়। তাহলো-

১. সপ্তাহিক রোজা রাখা

রমজানের পর প্রত্যেক সপ্তাহে ২ দিন রোজা পালন করার চেষ্টা করা। বিশেষ করে সুন্নাত হলো সোম ও বৃহস্পতিবার দিন রোজা রাখা। তাতে খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা সহজ হয়। রোজা মানুষকে শুধু আধ্যাত্মিক উপকারই দেয় না বরং তাতে শারীরিক স্বাস্থ্যগত অনেক উপকারও রয়েছে।

স্বাস্থ্য গবেষণায় দেখা যায়, রোজা বা উপবাস পালন মানুষের শরীর ও মনের জন্য অনেক উপকারি। রোজায় মানুষের মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়। ঘুম, মনোযোগ ও শারীরিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। নার্ভের কার্যকারিতা বৃদ্ধি ও উন্নতি হয়।

তাই সুন্নাতের অনুসরণ করে সাপ্তাহিক দুইদিন রোজা রাখা জরুরি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি সপ্তাহে ২দিন (সোম ও বৃহস্পতিবার) রোজা রাখতেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সোমবার এবং বৃহস্পতিবার মানুষের কাজের হিসাব আল্লাহর কাছে পৌছানো হয়। আর আমি এটি ভালোবাসি যে, রোজা পালনরত অবস্থায় আমার কাজে হিসাব পৌছানো হোক।’ (তিরমিজি)

২. দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা

দানের অভ্যাস অব্যাহত রাখা। কেননা দান-সহযোগিতা মানুষকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। রমজানে যেভাবে বেশি সাওয়াব লাভের আশায় মানুষ দান-সাদকাহ করে, রমজান পরবর্তী সময়েও গরিবদের দান-সাদকাহের অভ্যাস চালু রাখা।

দানের কার্যকারিতা শুধু আখেরাতে নয়, বরং দুনিয়াতেও লাভ হয়। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দান-সাদকা মানুষের বিপদ-আপদ দূর করে দেয়।’

এ দান-সাদকার ফলে সমাজের গরিব ও অসহায় মানুষ সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারে। তাতে পাস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে সুন্দর সমাজ তৈরি হয়।

৩. নিয়মিত কোরআন পড়া

রমজানের পরে নির্ধারিত একটি সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআন তেলাওয়াতের অভ্যাস তৈরি রাখা। যেভাবে রমজান মাসে মানুষ সুনির্ধারিত সময়ে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকে।

কোরআন তেলাওয়াতও মানুষের মানসিক ও শারীরিক প্রশান্তির জন্য মহাসহায়ক। কোরআন তেলাওয়াত উত্তম ইবাদত। কোরআন পরকালে শুধু তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশই করবে না বরং দুনিয়াতে অনেক অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখবে।

৪. অর্থসহ কোরআন শেখা

রমজানের পর সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোরআন অধ্যয়ন তথা অর্থসহ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়া। তা নিজে নিজেও হতে পারে আবার মসজিদ কিংবা পাঠাগারে দরসে বসার মাধ্যমেও হতে পারে।

রমজান মাসে কোরআন নাজিল করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রমজান মাস। এ মাসে আল্লাহ কোরআন নাজিল করেছেন, মানুষের হেদায়েত লাভের জন্য। সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ণয়ের জন্য।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৪)

রমজানের পরে কোরআন বুঝার নিয়মিত চেষ্টা অব্যাহত রাখলে, একটা সময় কোরআন বুঝা সহজ হয়ে যাবে। আর সে আলোকে গড়ে ওঠবে মানুষ জীবন।

৫. কোরআনের আলোকে নিজেকে পরিচালনা করা

রমজান মাসে কুরআনের যেসব জ্ঞান অর্জন করেছে মানুষ। রমজানের পরেও তা যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। কোরআনুল কারিমের সব ঘটনাগুলোই অর্থবহ এবং পরিপূর্ণ। কোরআনের সে ঘটনাগুলোর আলোকেই নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সহজ হয়।

যখনই কোরআনের কোনো ঘটনা বা জ্ঞান অর্জন করা হয়, তখনই সে ঘটনা বা গুণ দিয়ে নিজেকে মূল্যয়ন করুন। যদি তা থেকে থাকে আলহামদুলিল্লাহ। আর সে গুণ না থাকলে তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করুন।

কোরআনের জ্ঞান অনুযায়ী নিয়মিত এ অভ্যাস গঠনই মানুষকে আলোকিত জীবনে গঠনের পথ দেখায়। এর অন্যতম প্রমাণ হলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তাঁর পুরো জীবনটাই ছিল কোরআনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।

৬. বেশি বেশি দোয়া করা

কোরআনের অনেক ঘটনায় দোয়ার কথা এসেছে। কল্যাণ লাভে দোয়ার রয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব। রমজান মাসে দোয়া যেভাবে মানুষের কার্যতালিকা থেকে বাদ যায়নি। রমজান পরবর্তী সময়েও তা অব্যাহত রাখা জরুরি। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’

আল্লাহ তাআলা প্রতিদিনই মানুষকে ডেকে ডেকে বলেন, তাঁর কাছে দোয়া করার জন্য। নিজের গোনাহ মাফের আহ্বান করেন, রিজিক চাওয়ার আহ্বান করেন। এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া-

رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ

উচ্চারণ : রাব্বানা লা তুযেগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা; ওয়া হাবলানা মিল্লা দুংকা রাহমাহ; ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ্‌হাব।’

অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! (হেদায়েতের) সরল পথ দেখানোর পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনের দিকে পরিচালিত করো না। আর তোমার কাছ থেকে আমাদের অনুগ্রহ দান কর। নিশ্চয় তুমিই সব কিছুর দাতা।’ (সুরা আল-ইমরান : ৮)

সুতরাং যারা রমজানের পরেই আল্লাহর কাছে নিয়মিত দিনে-রাতে দোয়ার অভ্যাস গঠন করবে, তারাই সফলকাম হবে।

৭. প্রতিবেশি-বন্ধুরা মিলে ভালো কাজ করা

প্রতিবেশি কিংবা বন্ধুর সঙ্গে ভালো অভ্যাস গঠনে পরস্পরের সঙ্গে সহযোগিতা করা। একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করা। কারো মাঝে অন্যায় বা খারাপ আচরণ থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকতে ভালো কাজ বা গুণের পরামর্শ দেয়া। একে অপরকে নিয়মিত ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত করা।

ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ দিতে একটি গ্রুপ তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে প্রতিদিনই নির্ধারিত একটা সময় ভালো কাজের আলোচনা হতে পারে। হতে পারে তা কুরআন শিক্ষা বা গবেষণার আসর।

৮. নিয়মিত নিজেকে মূল্যয়ন করা

প্রতিটি মানুষেরই উচিত নিয়মিত নিজের কাজের মূল্যয়ন করা। জবাবদিহিতার মনোভাব তৈরি করা। নিজেরে কাজের হিসাব নিজে নেওয়া। আর তাতে ভেসে উঠবে ভালো ও মন্দ কাজ প্রতিচ্ছবি। নিজেকে মূল্যয়নে কুরআনে সে আয়াতটি বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। আর তাহলো-

‘তোমার কিতাব (আমল বা কাজের হিসাব) পাঠ কর। আজ তোমার হিসাব (কাজের মূল্যয়ন) গ্রহণে তুমিই যথেষ্ট।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ১৪)

প্রতিদিন নিজের কাজের মূল্যয়ন অব্যাহত রাখলে গোনাহমুক্ত জীবন লাভ সম্ভব হবে। পরকালে নিজেদের কাজের হিসাপ প্রদানও হবে সহজ। আর তাতেই আলোকিত জীবন লাভ করবে মুমিন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের পরবর্তী সময়ে উল্লেখিত কাজগুলো নিয়মিত পালন করার মাধ্যমে নিজেদের উন্নতি লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।