হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাগেরহাটের ইউসুফ মোল্লা, দিনাজপুরের মতিউর রহমান, বান্দরবানের উমেচিং মারমাসহ দেশের ৬৪ জেলায় এবার পরীক্ষামূলকভাবে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ চাষ হয়েছে। কোথাও এই ধান মাঠে দোল খাচ্ছে, কোথাও কোথাও উঠে গেছে চাষির গোলায়।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবন করে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০। এই জাতটি উচ্চ জিংকসমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তত্ত্বাবধানে এই ধানের চাষ করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনী মাঠ থেকে আবার বীজ সংগ্রহ করে আরো ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই ধান।
পরীক্ষামূলক এই ধান চাষ করা চাষিদের মধ্যে এগিয়ে রয়েছেন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের চাষি ইউসুফ মোল্লা। তাঁর ক্ষেতের ধান পাকায় এরই মধ্যে কেটে সংগ্রহ করা হয়েছে। ৮০ শতক জমিতে ৫০ মণ ধান পেয়েছেন তিনি। ইউসুফ মোল্লা বলেন, তাঁর খরচ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা।
আরেক সফল চাষি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মতিউর রহমান। উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের বড় বৈদ্যনাথপুর গ্রামের এই চাষি প্রথম বছরেই ৫০ একর জমিতে বঙ্গবন্ধু ধান চাষ করেছেন। ক্ষেত ভরে গেছে ধানের ছড়ায়। হাসি ফুটেছে মতিউরের চোখেমুখে।
এই ধান চাষ হয়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও। বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের উদালবনিয়াপাড়ায় উমেচিং মারমার তিন বিঘা জমিতে এখন দোল দিচ্ছে সেই ধান। আগামী সপ্তাহে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন এই চাষি।
ব্রির গবেষকদের মতে, বঙ্গবন্ধু ধান ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিনের মধ্যে হেক্টরপ্রতি ৭.৮ টন উৎপাদন সম্ভব। এই ধানের চাল মাঝারি চিকন ও সাদা। এতে জিংকের পরিমাণ রয়েছে প্রতি কেজিতে ২৫.৭ মিলিগ্রাম, যা জিংকের অভাব পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া চালের অ্যামাইলোজ ২৬.৮ শতাংশ ও প্রোটিন ৭.৮ শতাংশ। এ ধান নাজিরশাইল বা জিরা ধানের দানার মতো। চালের গুণগত মান অত্যন্ত ভালো এবং ভাত ঝরঝরে।
গত সোমবার দিনাজপুরের চাষি মতিউরের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ধানগাছগুলো বাতাসে দুলছে। ছড়াগুলো নুয়ে পড়ছে। মতিউর জানান, তাঁর ক্ষেতে বঙ্গবন্ধু ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে এই ধান কেটে মাড়াই করে ঘরে তোলা যাবে।
নতুন ধান চাষ সম্পর্কে চাষি মতিউর রহমান বলেন, ‘নয়া জাতের বঙ্গবন্ধু ধান আবাদে ১০ থেকে ১৪ দিন সময় কম নাগে। সার ও টিকনাশকও কম দিবার নাগে। ফলনও বেশি হবি। অইন্য ধানের তুলনায় দু-এক সপ্তাহ আগত ধান কাটা যায়। ঝড়বৃষ্টিত ফসল নষ্টও কম হয়। সময় বাঁচে, খরচ বাঁচেছে। ’
চাষি মতিউর জানান, উত্তরাঞ্চলে শীত বেশি হওয়ায় অন্যান্য জাতের ধানের বীজ বপনের পর ঘন কুয়াশায় অনেক চারা নষ্ট হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জাতের বীজ বপনের পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই রোপণ করতে পারায় চারা নষ্ট হয় না বললেই চলে।
বিএডিসি দিনাজপুর কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান সরকার জানান, বঙ্গবন্ধু ধানের ফ্লাগ লিড ভালো থাকায় ফলন ভালো হয়। অন্যান্য ধানে ফ্লাগ লিড কম থাকায় চিটা বেশি হয়। বঙ্গবন্ধু ধান ১৪৫ থেকে ১৪৮ দিনের মধ্যে উৎপাদন পর্যায়ে যায়; যেখানে অন্যান্য ধানে প্রায় ১৬০ দিন লাগে।
গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ লিয়াজোঁ কর্মকর্তা এম আব্দুল মোমিন গত সোমবার বলেন, ‘ব্রি উদ্ভাবিত ধান বঙ্গবন্ধু ১০০ জাতটি গত বছরের জুলাইয়ে রিলিজ করা হয়। বীজ তৈরির লক্ষ্যে বিএডিসির মাধ্যমে দেশের সব জেলায় চাষের জন্য ১২ টন বীজ দেওয়া হয়েছিল। প্রদর্শনী প্লট করার জন্য কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে পাঁচ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়েছিল। সব জায়গা থেকে ভালো ফলনের খবর আসছে। ’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হরিশ্বর কালোয়া গ্রাম, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ পৌরসভার কামারগাঁও গ্রাম, ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার ধোপাঘাট, ফুলপুর উপজেলার ইমাদপুর, নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার গুহিয়ালা গ্রামে, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন উপজেলায় ১২ জন কৃষকের ক্ষেতে এবং শেরপুর জেলার পাঁচ উপজেলার ২০টি প্লটে এই ধান চাষ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।