ঢাকা ০৭:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত ভুল অস্ত্রোপচার, যা ঘটেছিল প্রিয়াঙ্কা সঙ্গে সচিবালয়ে উপদেষ্টা হাসান আরিফের তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন সাবেক সচিব ইসমাইল রিমান্ডে অবশেষে বিল পাস করে ‘শাটডাউন’ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র চাঁদাবাজদের ধরতে অভিযান শুরু হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার নির্বাচনের পর নিজের নিয়মিত কাজে ফিরে যাবেন ড. ইউনূস ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আহত ১৬ জুলাই আন্দোলন বিগত বছরগুলোর অনিয়মের সমষ্টি: ফারুকী তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ‘সড়কে নৈরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রভাব জড়িত

অভিযান চলছে পরিকল্পনা মতোই

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২
  • ১১০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিকল্পনা মতোই চলছে। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি পশ্চিমের তৈরি ‘রাশিয়াবিরোধী’দের ধ্বংস করবেন। এ দিনই ইউক্রেন তথা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দখল নিয়েছে রুশ সেনা। এদিকে, বেলারুশে প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে দু’দেশই যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বেসামরিক মানুষদের উদ্ধারের পথ করে দেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন যে, রুশ সেনা পারমাণবিক অস্ত্র সহ সকল হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং দাবি করেছেন যে, তাদের আক্রমণ সময়সূচী অনুযায়ী চলছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান সময়সূচির সাথে সঙ্গতি রেখে কঠোরভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। নির্ধারিত সমস্ত উদ্দেশ্য সফলভাবে সমাধান করা হচ্ছে।’ রাশিয়ার অভিযান লজিস্টিক সমস্যা, কৌশলগত ভুল এবং ইউক্রেন থেকে অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধের মুখে হোঁচট খেয়েছে বলে পশ্চিমা সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া বিবৃতিগুলোকে খণ্ডন করে পুতিন এই মন্তব্যগুলো করেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তার সামরিক বাহিনী নিরাপদ করিডোর অফার করেছে যাতে বেসামরিক নাগরিকরা তাদের শহরে গোলাবর্ষণ এবং যুদ্ধ থেকে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে পারে। বেলারুশে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় ইউক্রেনের সাথে রাশিয়া এ বিষয়ে সম্মত হয়।

রুশ প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের বাহিনী বেসামরিক মানুষকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করছে। তার দাবিগুলো যাচাই করা হয়নি। তিনি রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের সৈন্যদের নাৎসিদের মতো আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। তার বৃহস্পতিবারের ভাষণে, পুতিনও যুদ্ধের জন্য তার বিবৃত যৌক্তিকতাকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন, যা ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা ভিত্তিহীন প্রচার হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘এখন ইউক্রেনের ভূখণ্ডে, আমাদের সৈন্য এবং অফিসাররা রাশিয়ার জন্য, ডনবাসের নাগরিকদের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য, ইউক্রেনের ডিনাজিফিকেশন এবং নিরস্ত্রীকরণের জন্য লড়াই করছে, যাতে আমাদের সীমান্তে রাশিয়া বিরোধীদের দ্বারা আমরা হুমকির সম্মুখীন হতে না পারি। যা পশ্চিমারা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করে আসছে,’ তিনি বলেন।

এদিকে, বেলারুশে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন যে, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ করবে না, সেটি হচ্ছে প্রধানত ‘ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ’। তিনি যোগ করেছেন যে, ইউক্রেনীয়রা তাদের কোন সরকার আছে তা বেছে নেবে। তিনি বলেন, রাশিয়া ‘শেষ পর্যন্ত’ ইউক্রেনে তাদের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ অন্যান্য বিদেশী নেতারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সন্দেহের মধ্যে ‘শেষ পর্যন্ত’ তাদের ‘পূর্ণ-আক্রমণ’ চালিয়ে যাওয়ার মস্কোর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবারেই রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। এটি ইউক্রেন তো বটেই, ইউরোপেরও সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন। ‘এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তদারকির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন,’ স্থানীয় কর্তৃপক্ষর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলোর অবস্থা সবসময় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এর আগে বোমা হামলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়। এর জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও পরে জানা যায়, ইউক্রেনের সেনাদের গোলাতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আগুন ধরে থাকতে পারে। পরে সে আগুন নেভানো হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিকিরণ স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদুৎ কেন্দ্রটি ১৯৮৪ সালে ১৯৯৫ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। অর্থাৎ এটি তৈরি করতে ১১ বছর সময় লেগেছিল। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি রিয়েক্টর থেকে ৫,৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৪০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। স্বাভাবিক সময়ে জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ইউক্রেনের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচভাগের এক ভাগ আসে। রাজধানী কিয়েভ থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার সিদ্ধান্ত: বৃহস্পতিবারের প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে দু’দেশই যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে আটকে পড়া অসামরিক মানুষদের উদ্ধারের পথ করে দেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার জবাব মেলেনি। বৈঠকের পরে দুই দেশের তরফেই মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তৃতীয় দফার বৈঠক বসবে। সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি ধরেই বৈঠক এগোচ্ছে। বৈঠক শেষের পর জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলক তার সরকারি টুইটারে হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘দ্বিতীয় দফার আলোচনা শেষ হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, ইউক্রেনের প্রয়োজনীয় ফলাফল এখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র বেসামরিক জনগণকে মানবিক করিডোর দেয়ার বিষয়ে একটি সমাধানসূত্রের সন্ধান মিলেছে।’

পরিস্থিতির অবনতি না ঘটানোর হুঁশিয়ারি: গতকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন হুঁশিয়ার করেছেন এই বলে যে, যারা ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিরোধিতা করছে, তারা যেন তার দেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটায়। এক সরকারি সভায় ভাষণ দেয়ার সময় পুতিন একথা বলেন। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা রসিয়া টিভি ২৪ চ্যানেলে এই ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ‘প্রতিবেশী দেশের প্রতি আমাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই,’ ঐ ভাষণে তিনি বলেন। সম্পর্কের অবনতি ঘটে এমন কোন পদক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলো নেবে না বলে তার সরকার মনে করে। তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়, সেটাই সবার চিন্তা করা উচিত।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য এমন সময় এলো যখন রাশিয়ার ওপর কীভাবে চাপ বাড়ানো যায় তার পথ খুঁজে বের করার জন্য পশ্চিমা দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে এক বৈঠক শুরু করেছেন।

যুদ্ধ থামাতে সরাসরি পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে চান জেলেনস্কি: বেলারুশ সীমান্তে দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠকের মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বসতে চাইলেন ইউক্রনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার এক মাত্র পথ, আমার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখোমুখি আলোচনা।’ তবে জেলেনস্কির ওই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ক্রেমলিন।
পুরো ইউক্রেনের দখল চান পুতিন: ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, পুতিন পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে আলাপের পরে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে পুতিন নিজেও বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে নব্য-নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচাতে শেষপর্যন্ত যাবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত থামাবার জন্য বারবার কূটনৈতিক পথে আলোচনার চেষ্টা করছেন ম্যাখোঁ। বৃহস্পতিবার তিনি আবার ফোন করেছিলেন পুতিনকে। দেড় ঘণ্টা ধরে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। এরপর ম্যাখোঁর ঘনিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ম্যাখোঁর মতে, পুতিনের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে, আরো ভয়ঙ্কর সময় আসছে। তার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

পুতিনও জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলছে। তিনি নব্য-নাৎসীদের হাত থেকে পুরো ইউক্রেনকে মুক্ত করতে চান। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মানুষের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। ম্যাখোঁ পরে টুইট করে বলেছেন, ‘পুতিন ইউক্রেনে হামলা থামাতে রাজি নন। কিন্তু মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে আলোচনা দরকার। আমি সেই প্রয়াস চালিয়ে যাব। আমাদের আরো ভয়ঙ্কর পরিণতি এড়িয়ে যেতে হবে।’ পুতিনকে ম্যাখোঁ বলেছেন, তিনি নিজের কাছেই মিথ্যা কথা বলছেন এবং একটা বড় ভুল করছেন। ম্যাখোঁর এক সহযোগী সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন, কোন পর্যায়ে গেলে একজন প্রেসিডেন্ট আরেকজন প্রেসিডেন্টকে বলতে পারেন, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এমন কোনো কথা বলেননি, যাতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। তিনি সেনা অভিযান চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

ইউক্রেনে বিদেশী সেনাদের যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেয়া হবে না: রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, ইউক্রেনের পক্ষে লড়াইয়ে নামা পশ্চিমা ‘ভাড়াটে সেনাদের’ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে কোনো অধিকার ভোগ করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বলতে চাই, কিয়েভের জাতীয়তাবাদী শাসনের পক্ষে লড়াই করার জন্য পশ্চিমারা যে ভাড়াটে সৈন্যদের ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে তাদের কাউকেই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে যোদ্ধা হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না বা যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেয়া হবে না।’

অর্থাৎ, যুদ্ধে কোনো বিদেশী সেনাকে যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেবে না রাশিয়া। এর ফলে আটক হওয়া বিদেশী সেনাদের নির্বিচারে হত্যা করার অনুমতি পাবে রুশ সেনারা। বিদেশী সেনাদের উদ্দেশ্যে কোনাশেনকভ বলেন, ‘ভাগ্য সহায় হলে আপনারা সর্বোচ্চ অপরাধী হিসেবে বিচারের আশা করতে পারেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের জন্য লড়াই করা ভাড়াটে সেনারা পশ্চিমাদের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করেই নাশকতা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশী ভাড়াটে সৈনারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কনভয় এবং সহায়তা প্রদানকারী বিমানগুলোতে আক্রমণ করছে। সূত্র : তাস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, স্কাই নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশ ও জাতি গঠনে “দৈনিক আমার দেশ” পত্রিকার কাছে নেত্রকোণার জনগণের প্রত্যাশা শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

অভিযান চলছে পরিকল্পনা মতোই

আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইউক্রেনে রাশিয়ার সেনা অভিযান রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরিকল্পনা মতোই চলছে। বৃহস্পতিবার তিনি নিজেই এই তথ্য জানিয়ে বলেছেন যে, তিনি পশ্চিমের তৈরি ‘রাশিয়াবিরোধী’দের ধ্বংস করবেন। এ দিনই ইউক্রেন তথা ইউরোপের সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দখল নিয়েছে রুশ সেনা। এদিকে, বেলারুশে প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে দু’দেশই যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে আটকে পড়া বেসামরিক মানুষদের উদ্ধারের পথ করে দেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

প্রেসিডেন্ট পুতিন বৃহস্পতিবার একটি টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন যে, রুশ সেনা পারমাণবিক অস্ত্র সহ সকল হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং দাবি করেছেন যে, তাদের আক্রমণ সময়সূচী অনুযায়ী চলছে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ সামরিক অভিযান সময়সূচির সাথে সঙ্গতি রেখে কঠোরভাবে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে। নির্ধারিত সমস্ত উদ্দেশ্য সফলভাবে সমাধান করা হচ্ছে।’ রাশিয়ার অভিযান লজিস্টিক সমস্যা, কৌশলগত ভুল এবং ইউক্রেন থেকে অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধের মুখে হোঁচট খেয়েছে বলে পশ্চিমা সরকার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দেয়া বিবৃতিগুলোকে খণ্ডন করে পুতিন এই মন্তব্যগুলো করেন। তিনি দাবি করেছেন যে, তার সামরিক বাহিনী নিরাপদ করিডোর অফার করেছে যাতে বেসামরিক নাগরিকরা তাদের শহরে গোলাবর্ষণ এবং যুদ্ধ থেকে জীবনের ঝুঁকি এড়াতে পারে। বেলারুশে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় ইউক্রেনের সাথে রাশিয়া এ বিষয়ে সম্মত হয়।

রুশ প্রেসিডেন্ট অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের বাহিনী বেসামরিক মানুষকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে এবং বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করছে। তার দাবিগুলো যাচাই করা হয়নি। তিনি রাশিয়া এবং জার্মানির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের সৈন্যদের নাৎসিদের মতো আচরণের জন্য অভিযুক্ত করেছিলেন। তার বৃহস্পতিবারের ভাষণে, পুতিনও যুদ্ধের জন্য তার বিবৃত যৌক্তিকতাকে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন, যা ইউক্রেন এবং পশ্চিমারা ভিত্তিহীন প্রচার হিসাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘এখন ইউক্রেনের ভূখণ্ডে, আমাদের সৈন্য এবং অফিসাররা রাশিয়ার জন্য, ডনবাসের নাগরিকদের জন্য শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য, ইউক্রেনের ডিনাজিফিকেশন এবং নিরস্ত্রীকরণের জন্য লড়াই করছে, যাতে আমাদের সীমান্তে রাশিয়া বিরোধীদের দ্বারা আমরা হুমকির সম্মুখীন হতে না পারি। যা পশ্চিমারা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করে আসছে,’ তিনি বলেন।

এদিকে, বেলারুশে বৃহস্পতিবারের বৈঠকের আগে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন যে, রাশিয়া তার লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত যুদ্ধ শেষ করবে না, সেটি হচ্ছে প্রধানত ‘ইউক্রেনের নিরস্ত্রীকরণ’। তিনি যোগ করেছেন যে, ইউক্রেনীয়রা তাদের কোন সরকার আছে তা বেছে নেবে। তিনি বলেন, রাশিয়া ‘শেষ পর্যন্ত’ ইউক্রেনে তাদের সামরিক অভিযান চালিয়ে যাবে। বৃহস্পতিবার একটি সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ অন্যান্য বিদেশী নেতারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন সন্দেহের মধ্যে ‘শেষ পর্যন্ত’ তাদের ‘পূর্ণ-আক্রমণ’ চালিয়ে যাওয়ার মস্কোর পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবারেই রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। এটি ইউক্রেন তো বটেই, ইউরোপেরও সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সে অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন। ‘এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র তদারকির সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন,’ স্থানীয় কর্তৃপক্ষর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া এক বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিটগুলোর অবস্থা সবসময় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

এর আগে বোমা হামলায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আগুন ধরে যায়। এর জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও পরে জানা যায়, ইউক্রেনের সেনাদের গোলাতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আগুন ধরে থাকতে পারে। পরে সে আগুন নেভানো হয়। স্থানীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিকিরণ স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদুৎ কেন্দ্রটি ১৯৮৪ সালে ১৯৯৫ সালের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। অর্থাৎ এটি তৈরি করতে ১১ বছর সময় লেগেছিল। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছয়টি রিয়েক্টর থেকে ৫,৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর মাধ্যমে প্রায় ৪০ লাখ বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়। স্বাভাবিক সময়ে জেপোরোজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ইউক্রেনের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচভাগের এক ভাগ আসে। রাজধানী কিয়েভ থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ৫৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

‘মানবিক করিডোর’ দেয়ার সিদ্ধান্ত: বৃহস্পতিবারের প্রতিনিধি স্তরের বৈঠকে দু’দেশই যুদ্ধ-পরিস্থিতিতে আটকে পড়া অসামরিক মানুষদের উদ্ধারের পথ করে দেয়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। বৈঠকে ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার দাবিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার জবাব মেলেনি। বৈঠকের পরে দুই দেশের তরফেই মধ্যস্থতাকারীরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই তৃতীয় দফার বৈঠক বসবে। সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি ধরেই বৈঠক এগোচ্ছে। বৈঠক শেষের পর জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইল পোডোলক তার সরকারি টুইটারে হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘দ্বিতীয় দফার আলোচনা শেষ হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত, ইউক্রেনের প্রয়োজনীয় ফলাফল এখনও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। শুধুমাত্র বেসামরিক জনগণকে মানবিক করিডোর দেয়ার বিষয়ে একটি সমাধানসূত্রের সন্ধান মিলেছে।’

পরিস্থিতির অবনতি না ঘটানোর হুঁশিয়ারি: গতকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন হুঁশিয়ার করেছেন এই বলে যে, যারা ইউক্রেনে রুশ অভিযানের বিরোধিতা করছে, তারা যেন তার দেশের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা জারি করে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটায়। এক সরকারি সভায় ভাষণ দেয়ার সময় পুতিন একথা বলেন। রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে থাকা রসিয়া টিভি ২৪ চ্যানেলে এই ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। ‘প্রতিবেশী দেশের প্রতি আমাদের কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই,’ ঐ ভাষণে তিনি বলেন। সম্পর্কের অবনতি ঘটে এমন কোন পদক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলো নেবে না বলে তার সরকার মনে করে। তিনি বলেন, ‘সম্পর্ক কীভাবে স্বাভাবিক করা যায়, কীভাবে সহযোগিতা বাড়ানো যায়, সেটাই সবার চিন্তা করা উচিত।’ রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য এমন সময় এলো যখন রাশিয়ার ওপর কীভাবে চাপ বাড়ানো যায় তার পথ খুঁজে বের করার জন্য পশ্চিমা দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ব্রাসেলসে এক বৈঠক শুরু করেছেন।

যুদ্ধ থামাতে সরাসরি পুতিনের সঙ্গে কথা বলতে চান জেলেনস্কি: বেলারুশ সীমান্তে দ্বিতীয় দফার শান্তি বৈঠকের মধ্যেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার বসতে চাইলেন ইউক্রনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। বৃহস্পতিবার রাতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধ করার এক মাত্র পথ, আমার সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখোমুখি আলোচনা।’ তবে জেলেনস্কির ওই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ক্রেমলিন।
পুরো ইউক্রেনের দখল চান পুতিন: ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছেন, পুতিন পুরো ইউক্রেন দখল করতে চান। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে আলাপের পরে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে পুতিন নিজেও বলেছেন, তিনি ইউক্রেনকে নব্য-নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচাতে শেষপর্যন্ত যাবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত থামাবার জন্য বারবার কূটনৈতিক পথে আলোচনার চেষ্টা করছেন ম্যাখোঁ। বৃহস্পতিবার তিনি আবার ফোন করেছিলেন পুতিনকে। দেড় ঘণ্টা ধরে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। এরপর ম্যাখোঁর ঘনিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ম্যাখোঁর মতে, পুতিনের সঙ্গে কথা বলে তার মনে হয়েছে, আরো ভয়ঙ্কর সময় আসছে। তার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

পুতিনও জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের অভিযান পরিকল্পনামাফিক চলছে। তিনি নব্য-নাৎসীদের হাত থেকে পুরো ইউক্রেনকে মুক্ত করতে চান। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মানুষের মধ্যে কোনো ফারাক নেই। ম্যাখোঁ পরে টুইট করে বলেছেন, ‘পুতিন ইউক্রেনে হামলা থামাতে রাজি নন। কিন্তু মানবিক বিপর্যয় রোধ করতে আলোচনা দরকার। আমি সেই প্রয়াস চালিয়ে যাব। আমাদের আরো ভয়ঙ্কর পরিণতি এড়িয়ে যেতে হবে।’ পুতিনকে ম্যাখোঁ বলেছেন, তিনি নিজের কাছেই মিথ্যা কথা বলছেন এবং একটা বড় ভুল করছেন। ম্যাখোঁর এক সহযোগী সংবাদসংস্থাকে বলেছেন, ‘আপনারা বুঝতে পারছেন, কোন পর্যায়ে গেলে একজন প্রেসিডেন্ট আরেকজন প্রেসিডেন্টকে বলতে পারেন, আপনি মিথ্যা কথা বলছেন।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘প্রেসিডেন্ট পুতিন এমন কোনো কথা বলেননি, যাতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। তিনি সেনা অভিযান চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’

ইউক্রেনে বিদেশী সেনাদের যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেয়া হবে না: রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ বলেছেন, ইউক্রেনের পক্ষে লড়াইয়ে নামা পশ্চিমা ‘ভাড়াটে সেনাদের’ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের অধীনে কোনো অধিকার ভোগ করতে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আমি একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে বলতে চাই, কিয়েভের জাতীয়তাবাদী শাসনের পক্ষে লড়াই করার জন্য পশ্চিমারা যে ভাড়াটে সৈন্যদের ইউক্রেনে পাঠাচ্ছে তাদের কাউকেই আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে যোদ্ধা হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না বা যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেয়া হবে না।’

অর্থাৎ, যুদ্ধে কোনো বিদেশী সেনাকে যুদ্ধবন্দীর মর্যাদা দেবে না রাশিয়া। এর ফলে আটক হওয়া বিদেশী সেনাদের নির্বিচারে হত্যা করার অনুমতি পাবে রুশ সেনারা। বিদেশী সেনাদের উদ্দেশ্যে কোনাশেনকভ বলেন, ‘ভাগ্য সহায় হলে আপনারা সর্বোচ্চ অপরাধী হিসেবে বিচারের আশা করতে পারেন।’ তিনি অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের জন্য লড়াই করা ভাড়াটে সেনারা পশ্চিমাদের দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করেই নাশকতা চালাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশী ভাড়াটে সৈনারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর কনভয় এবং সহায়তা প্রদানকারী বিমানগুলোতে আক্রমণ করছে। সূত্র : তাস, দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট, স্কাই নিউজ, বিবিসি, রয়টার্স।