ঢাকা ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিবাহবিচ্ছেদ : যা কখনোই কাম্য নয়-১

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ২৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। মহামারির মতো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা। অর্থনৈতিক কারণে অশান্তির কারণেও ভাঙন ধরেছে অনেক সংসারে। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে। স্বার্থের সংঘাত, অর্থের অভাব, পর নর-নারীতে আসক্ত ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, যৌতুক, মতের অমিল আর আত্মসম্মান মোকাবিলায় চূড়ান্ত হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ভাঙছে একটি সংসার। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ডিভোর্স দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা। তবে এটা কেবল শহরের হিসাব। করোনার ধাক্কায় আয় সঙ্কুচিত হয়েছে বহু মানুষের। তবে সঙ্কটকালের এই অভিঘাত এখানেই থেমে নেই।
ঢাকার দুই সিটির তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৪ হাজার ৫৬৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে ১ হাজার ১৪১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২। এই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে বেড়েছে ৯৯টি বিচ্ছেদ।

কী ভয়াবহ অবস্থা! যদিও সংবাদে যা এসেছে তা দাপ্তরিক হিসাব। বাস্তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। এটা আমরা বলতে পারি ফতোয়া বিভাগের অভিজ্ঞতা থেকে। নানা পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রবণতা ক্রমবর্ধমান, যা একটি সমাজের জন্য, বিশেষত মুসলিম সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক ও আশঙ্কাজনক। কারণ, বিবাহ-বিচ্ছেদের কুফল অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সমাজে বিচ্ছেদ প্রবণতার এই ক্রমবর্ধমান বিস্তার কেন। সমাজবিজ্ঞানীরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানা কারণ বর্ণনা করেছেন।

তবে যে কথাটি প্রায় সবাই বলছেন তা হচ্ছেÑ ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। বাস্তবেই এটা অনেক বড় কারণ। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন-দর্শন ও জীবনধারা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা, বিনয় ও ছাড়ের মানসিকতা; এই সবই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এরপর পর্দা-পুশিদা রক্ষা, পরপুরুষ বা পরনারীর সাথে সম্পর্ক ও মেলামেশা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদিও বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসন, যা পালন না করাও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ।
পরিসংখ্যানও বিষয়টিকে সমর্থন করে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গবেষণা-পরিসংখ্যান বলছে, বিচ্ছেদের যেসব আবেদন ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে তার মধ্যে ৮৭ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে পরকীয়ার জের ধরে। কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়া, কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীর। কাজেই সমাজবিজ্ঞানীদের কর্তব্য, এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। কেন এই সমাজে পরকীয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রতিকারের উপায় কীÑ তা নিয়ে নির্মোহ চিন্তা-ভাবনার এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন আছে।

পরিসংখ্যানের আরেকটি দিক হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ তালাক গ্রহণ করছেন নারী আর ২৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষ। ২০১৮ সালেও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেয়া হয়েছে, যা ৭০ শতাংশ। এর কারণ হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এই যে, সাধারণত নারীরা নির্যাতিত হওয়ায় তারাই বিচ্ছেদের পদক্ষেপ বেশি নিচ্ছে; তবে এর সাথে অনেকেই আরো যা বলছেন তা হচ্ছেÑ ‘মেয়েরা এখন অনেক অধিকার পেয়েছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই বেশি অধিকার পেয়ে স্বামীকে তালাক দিতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

আগেকার দিনের মায়েরা সংসার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। এখন একক পরিবার হওয়ায় এবং বাইরে চাকরি-বাকরির ও সার্বিক স্বাধীনতার বিস্তার ঘটায় বাইরের মানুষের সাথে তাদের মেলামেশা বেড়েছে এবং স্বামীদের চেয়ে বাইরের বন্ধু-বান্ধবদের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তাই পারিবারিক অবস্থা একটু খারাপ হলেই তালাকের চিন্তা করছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা খুব বেশি অত্যাচারী হয়ে থাকে। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ও আধুনিক সংস্কৃতির কারণে সংসার ভাঙছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিবাহবিচ্ছেদ : যা কখনোই কাম্য নয়-১

আপডেট টাইম : ০৯:৩৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ। মহামারির মতো সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রবণতা। অর্থনৈতিক কারণে অশান্তির কারণেও ভাঙন ধরেছে অনেক সংসারে। রাজধানী ঢাকায়ই দিনে ৩৮টি বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি মাসে ৯৯টি বিচ্ছেদ বেড়েছে। স্বার্থের সংঘাত, অর্থের অভাব, পর নর-নারীতে আসক্ত ও মাদকাসক্ত হয়ে পড়া, যৌতুক, মতের অমিল আর আত্মসম্মান মোকাবিলায় চূড়ান্ত হচ্ছে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত।

ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ঘণ্টায় ভাঙছে একটি সংসার। এক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ ডিভোর্স দিচ্ছেন নারীরা, ৩০ শতাংশ দিচ্ছেন পুরুষরা। তবে এটা কেবল শহরের হিসাব। করোনার ধাক্কায় আয় সঙ্কুচিত হয়েছে বহু মানুষের। তবে সঙ্কটকালের এই অভিঘাত এখানেই থেমে নেই।
ঢাকার দুই সিটির তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে ৪ হাজার ৫৬৫টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছে, অর্থাৎ প্রতি মাসে ১ হাজার ১৪১টি। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪২। এই হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে বেড়েছে ৯৯টি বিচ্ছেদ।

কী ভয়াবহ অবস্থা! যদিও সংবাদে যা এসেছে তা দাপ্তরিক হিসাব। বাস্তবে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। এটা আমরা বলতে পারি ফতোয়া বিভাগের অভিজ্ঞতা থেকে। নানা পরিসংখ্যান বলছে, এই প্রবণতা ক্রমবর্ধমান, যা একটি সমাজের জন্য, বিশেষত মুসলিম সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক ও আশঙ্কাজনক। কারণ, বিবাহ-বিচ্ছেদের কুফল অনেক দূর পর্যন্ত গড়ায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমান সমাজে বিচ্ছেদ প্রবণতার এই ক্রমবর্ধমান বিস্তার কেন। সমাজবিজ্ঞানীরা নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নানা কারণ বর্ণনা করেছেন।

তবে যে কথাটি প্রায় সবাই বলছেন তা হচ্ছেÑ ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব। বাস্তবেই এটা অনেক বড় কারণ। ধর্মীয় অনুশাসনের বিষয়টি অনেক বিস্তৃত। বিশ্বাস ও মূল্যবোধ, জীবন-দর্শন ও জীবনধারা, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক সম্পর্ক, একে অপরের হক সম্পর্কে সচেতনতা, বিনয় ও ছাড়ের মানসিকতা; এই সবই ধর্মীয় অনুশাসনের অন্তর্ভুক্ত। এরপর পর্দা-পুশিদা রক্ষা, পরপুরুষ বা পরনারীর সাথে সম্পর্ক ও মেলামেশা থেকে বিরত থাকা ইত্যাদিও বিশেষ ধর্মীয় অনুশাসন, যা পালন না করাও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি ও বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ।
পরিসংখ্যানও বিষয়টিকে সমর্থন করে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গবেষণা-পরিসংখ্যান বলছে, বিচ্ছেদের যেসব আবেদন ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে তার মধ্যে ৮৭ শতাংশ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে পরকীয়ার জের ধরে। কোনো ক্ষেত্রে স্বামীর পরকীয়া, কোনো ক্ষেত্রে স্ত্রীর। কাজেই সমাজবিজ্ঞানীদের কর্তব্য, এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা। কেন এই সমাজে পরকীয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর প্রতিকারের উপায় কীÑ তা নিয়ে নির্মোহ চিন্তা-ভাবনার এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন আছে।

পরিসংখ্যানের আরেকটি দিক হচ্ছে, বিবাহবিচ্ছেদে পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে। এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ শতাংশ তালাক গ্রহণ করছেন নারী আর ২৫ ভাগ তালাক দিচ্ছেন পুরুষ। ২০১৮ সালেও নারীদের তরফে ডিভোর্স বেশি দেয়া হয়েছে, যা ৭০ শতাংশ। এর কারণ হয়তো অনেক ক্ষেত্রে এই যে, সাধারণত নারীরা নির্যাতিত হওয়ায় তারাই বিচ্ছেদের পদক্ষেপ বেশি নিচ্ছে; তবে এর সাথে অনেকেই আরো যা বলছেন তা হচ্ছেÑ ‘মেয়েরা এখন অনেক অধিকার পেয়েছেন। সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুই দিক থেকেই বেশি অধিকার পেয়ে স্বামীকে তালাক দিতে আগের চেয়ে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।

আগেকার দিনের মায়েরা সংসার ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকতেন। এখন একক পরিবার হওয়ায় এবং বাইরে চাকরি-বাকরির ও সার্বিক স্বাধীনতার বিস্তার ঘটায় বাইরের মানুষের সাথে তাদের মেলামেশা বেড়েছে এবং স্বামীদের চেয়ে বাইরের বন্ধু-বান্ধবদের দিকে বেশি ঝুঁকছে। তাই পারিবারিক অবস্থা একটু খারাপ হলেই তালাকের চিন্তা করছে। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরা খুব বেশি অত্যাচারী হয়ে থাকে। এ ছাড়া তথ্য-প্রযুক্তির প্রভাব, সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ও আধুনিক সংস্কৃতির কারণে সংসার ভাঙছে।