অধ্যক্ষ শরীফ সাদীঃ বাবা ডাকতেন ‘খুকুমণি’।ইলিশ-বাড়িরচর গ্রামে পাক-ভারত যুদ্ধের সময়ে ‘মুজিব ভাইয়ের সহযোদ্ধা কারা-সঙ্গী ভাষা সংগ্রামী এম এ ওয়াদুদ-এঁর ঔরসে এবং শিক্ষক মা রহিমা বেগমের উদরে জন্ম নেওয়া আদুরে কন্যা মেঘনা-পাড়ের মেঘলা-বরণ খুকুমনি। ৬ কিবা ৭ বছরের শিশু বাবার হাত ধরে যায় ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে। কে জানতো বাবার স্বপ্নের কথা? কন্যাই হবে রাজনীতির উত্তরাধিকার? সেই শিশুটি শালবৃক্ষের শীর্ষে চড়েছিলো, বঙ্গবন্ধুর কাঁধে উঠেছিলো।
জাতির পিতার বুক কোল কাঁধ ছিলো শেখ হাসিনাসহ কেবল ৫ ভাই-বোনের একচ্ছত্র অধিকারে। সেইখানে সেই বিরল জায়গা পেয়ে গেলো ৭ বছরের শিশুটি। অনেক উঁচু মানুষটি একদিন কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন খুকুমণিকে, এমন ভাগ্য ক’জনার হয়? সেই পরশেই হয়তো কন্যাটি মেধায় যোগ্যতায় উঠে আসে দল ও সরকারের অন্যতম শীর্ষস্থানে। ইত্তেফাকের সাংবাদিক, ভাষাবীর, বঙ্গবন্ধুর বিশ্বস্ত সহচর, রাজনীতিবিদ বাবা এবং আজীবন শিক্ষার দীপ শিখা প্রজ্জ্বালনকারী শিক্ষক মায়ের আদর্শে, মেধায়-মননে, যোগ্যতায় গড়ে ওঠা খুকু।
স্কুলের গন্ডি পেরুনোর পরই বাবাকে হারান কিন্তু বাবার স্বপ্নকে হারাননি। ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন, ‘৮৭ সনে জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ঢাকা মেডিকেল কলেজকে প্রতিনিধিত্ব করে শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণে পরিপার্শ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাবা-মায়ের প্রণোদনায় গড়ে ওঠা তাদের কন্যাটি ছাত্রজীবন থেকেই সেবাধর্মী কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন, সারাদেশে সুপরিচিত ও জনপ্রিয় “সন্ধানী” (অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো রক্তদানকারী) সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব করেছেন। এমবিবিএস পাশ করে উচ্চ শিক্ষা নিতে চলে গেছেন দেশের বাইরে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স অন পাবলিক হেলথ, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রী,হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পীস কনফ্লিক্ট বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করা সেই খুকু এসে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাজনীতির মঞ্চে আরোহন করেন। বাবা যেমন ‘৪৮ সন থেকেই মুজিব ভাইয়ের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন,একসাথে কারাভোগ করেছেন, তেমনি খুকুমনিও মুজিবকন্যার পাশে নির্ভয়ে নিঃশংকচিত্তে এসে দাঁড়িয়ে যান। ১/১১’র ভয়ংকর চোরাগলিতে যখন আওয়ামী লীগের বাঘা বাঘা নেতারা চোরাগোপ্তা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে, যখন সংস্কারবাদীরা নেত্রীর রাজনীতিকে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের যূপকাষ্ঠে বলি দিতে উদ্যত,যখন এক-এগারো সরকারের কারাগারে শেখ হাসিনা বন্দী, তখন এই ক্ষুরধার বিতার্কিক, শাণিত যুক্তির প্রজ্ঞাবান আইনজীবী ও চিকিৎসক খুকুমনি তাঁর স্বামী যিনি দেশে-বিদেশে যশস্বী হয়ে উঠেছেন সেই বিজ্ঞ আইনজীবী তৌফিক নাওয়াজকে নিয়ে একদিকে এজলাসে শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য আইনী যুদ্ধে লিপ্ত,আরেকদিকে তিনিই চেনা-অচেনা বাহিনীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে প্লেকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে সংগ্রামে সক্রিয়,আবার অন্যদিকে এই তিনিই পারমিশন পেয়ে কারাবন্দী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাভ্যন্তরে চিকিৎসা দিতে যান।
এতোক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন মেঘনা-পাড়ের ইলিশ-বাড়ি চাঁদরায়ের চাঁদপুর এবং স্বামী স্বরূপানন্দের চাঁদপুরের মহিয়সী নারী, বাবার আদরের খুকুমনি, তেজোদ্দীপ্ত প্রমিত রাজনীতিবিদ, বিজ্ঞ আইনজীবী, মানবিক চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ডা. দীপু মনি শ্রদ্ধাভাজনীয়াসু, আপনি অদম্য সাহসী,আপনি দুর্দান্ত মেধাবী। বৃথা বাক্য ব্যয় করেন না। মিডিয়ার সামনে শব্দ ও বাক্য চয়নে সতর্ক। মিতভাষী।
আপনিই প্রধানমন্ত্রীর নিদেশনায় বার্মা ও ভারতের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতে আইনী যুদ্ধ করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা ১ লক্ষ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জয় করে এনেছেন,ফলে সেখানে অনেক ক’টি তেল-গ্যাস ক্ষেত্রের উপর বাংলাদেশের একচ্ছত্র দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল মৎস্য সম্পদ ও অপ্রাণীজ সম্পদে বাংলাদেশের একক মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুলে গেছে “ব্লু-ইকোনোমিক বাংলাদেশের” এক বিশাল সম্ভাবনার দরজা।
আপনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার পর ১০/১২/১৫ বছর বেতন না পাওয়া নন-এমপিও প্রায় দেড় লক্ষ শিক্ষকের সরকারি বেতন হয়েছে। প্রায় সোয়া লক্ষ বেকার যুব-যুবাকে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে এমপিওভূক্ত পদে চাকুরী দিয়েছেন। ম্যনেজিং কমিটি/গভর্নিং বডি’র কোটি কোটি টাকার ঘুষ-বাণিজ্য থেকে এরা রেহাই পেয়েছে।
বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় আপনি নতুন ১ লক্ষ ৪০ হাজার পদ সৃষ্টি করেছেন।
বেসরকারি কলেজে প্রায় ৭০ হাজার প্রভাষককে পদোন্নতির মাধ্যমে সহকারী অধ্যাপক পদে উন্নীত করেছেন।
এমনি আরও অসংখ্য উদাহরণ দিয়ে সম্ভাষণপত্রটিকে সুবিশাল করা ঠিক হবে না। আপনাকে সকৃতজ্ঞ অভিবাদন —রাজনীতির বিশুদ্ধ আকাশ থেকে খসে পড়া আরেকজন প্রয়াত মেধাবী নেতা
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এর নামে কিশোরগঞ্জের একটি কলেজের নামকরন আপনি মন্ত্রণালয় থেকে করে দিয়েছেন। জানি, আপনিও তাঁকে বিপুলভাবে শ্রদ্ধা করেন। আপনার অভিব্যক্তি – “আশরাফ ভাইয়ের জন্য এমন কি-বা করতে পারলাম”। যতটুকু করেছেন তার জন্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ভক্তদের হৃদ-গহীন থেকে আপনাকে সুবচন-সম্ভাষণে ।
লেখকঃ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ।