হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌর এলাকায় রয়েছে কুমার নদের চৌমুখা ঘাট। যেখানে পারাপারের জন্য নেই কোনো সেতু কিংবা সাঁকো। আছে কেবল নৌকা। আর এভাবেই চলছে যুগের পর যুগ। স্বাধীনতার এতো বছরেও এর কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। ঝুঁকি আর ভোগান্তি মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সদরের কুমার নদীর চৌমুখা ঘাট। ঘাটের এক পাড়ে চৌমুখা গ্রাম অন্য পাড়ে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিস, হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, হাসপাতালসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয় অবস্থিত। এই ঘাটে রশি টেনে নৌকায় পারাপার হন দুই পারের অন্তত বিশ হাজার মানুষ। এখানে একটি সেতুর খুব প্রয়োজন। সেতুর অভাবে মানুষের পারাপারে নৌকাই এখন একমাত্র ভরসা।
এলাকাবাসী জানান, একযুগ আগে নগরকান্দা পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আলিমুজ্জামান টুলু মোল্যা তার ব্যক্তিগত অর্থায়নে প্রায় ৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এখানে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেন।
এলাকাবাসী দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছর এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। মাঝে মধ্যে সাঁকোটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়তো, চৌমুখা গ্রামবাসী তাদের নিজ উদ্যোগে সংস্কার করেছেন বহুবার। কিন্তু এই জোড়াতালি দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। যথাযথ সংস্কার না হওয়ায় শেষমেশ বাঁশ পচে সাঁকোটি একেবারেই ভেঙে গেছে। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে প্রায় তিন বছর ধরে রশি টেনে নৌকায় চলছে পারাপার।
এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী শফিকুল বলেন, এখানে পারাপারে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় মানুষদের। ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন নৌকায় পারাপার হচ্ছে। সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কের মধ্যে। তাছাড়া নগরকান্দা কৃষিনির্ভর এলাকা। কৃষকদের উৎপাদিত ফসল হাট বাজারে নিতে হয় প্রতিনিয়ত। কিন্তু সেতুর অভাবে পারাপারের চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
নিজাম বাবু, নকিব নিজাম, এহসানুল হকসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, এলাকার মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। কৃষকদের বাধ্য হয়ে বিকল্প সড়ক দিয়ে অনেক পথ ঘুরে যানবাহনে করে ধান, পাট, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য হাট বাজারে নিতে হয়। ফলে প্রচুর লোকসান গুনতে হয় এখানকার কৃষকদের।
স্থানীয়দের দাবি, এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণ করা হলে কুমার নদীর দুই পাড়ে ব্যাপক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে হাজারো মানুষ। কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও সামাজিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটবে বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই সরকার বলেন, বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নৌকায় পার হচ্ছে। এভাবে চলাচল করা জীবনের জন্য নিরাপদ নয়। বাঁশের সাঁকো বা নৌকায় পারাপার এটা কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। এখানে সেতু দরকার। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করে সেতু নির্মাণের জোর চেষ্টা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী (স্থানীয় সরকার বিভাগ) মোশাররফ বলেন, নগরকান্দা পৌর এলাকায় উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পাশে কুমার নদের উপর একটি পাকা সেতু নির্মাণ করার দায়িত্ব পৌরসভার। যদি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করতে না পারে, তাহলে আমাদের নির্মাণ করার অনুমতি অথবা সহায়তা চাইলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।