হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারত থেকে করোনামুক্ত সনদ নিয়ে দেশে প্রবেশ করলেও বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের স্বাস্থ্য বিভাগে এসে তন্ময় মন্ডল (২৫) নামে এক বাংলাদেশির শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তিনি করোনার উচ্চমাত্রা ‘ওমিক্রনে’ আক্রান্ত কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য বুধবার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল চেকপোস্টে করোনা শনাক্ত হওয়া তন্ময় মন্ডলের বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার তালতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের অখিল মন্ডলের ছেলে।
মঙ্গলবার ভারত থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে তিনি দেশে আসেন। ইমিগ্রেশন পার হলেই জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছান। এ সময় স্ক্রিনিং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তন্ময় মন্ডলের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। ভারতে যখন ওমিক্রনের তাণ্ডব চলছে, তখন করোনামুক্ত সনদ নিয়ে তন্ময় মন্ডল দেশে প্রবেশ করার পর করোনা শনাক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। কিভাবে ভারত থেকে তিনি করোনামুক্ত সনদ পেলেন কিংবা ভারতের করোনা পরীক্ষা কতটুকু সঠিক? এসব প্রশ্ন নিয়ে দিনভর আলোচনা-সমালোচনা চলে।
এ পরিস্থিতিতে তন্ময় মন্ডলকে পুলিশ পাহারায় মঙ্গলবার রাত ৯টা ২৮ মিনিটে ভর্তি করা হয় যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসক তারেক আহমেদ শামস তাকে ভর্তি করেন এবং করোনা ওয়ার্ডে (রেডজোনে) পাঠিয়ে দেন।
ডা. আহমেদ তারেক শামস্ ভর্তি করার সময় বলেন, তন্ময় মন্ডলের শরীরে করোনার উচ্চ মাত্রা ‘ওমিক্রন’ আছে কিনা তা পরীক্ষা না করে বলা সম্ভব নয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাকে ‘ওমিক্রন’ পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক বুধবার রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ‘ওমিক্রন’ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই নমুনার একটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনোম সেন্টারে এবং অপরটি ঢাকায় পাঠানো হয়। যশোরে এটি ছিল ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীর প্রথম ‘ওমিক্রন’ পরীক্ষা।
ভারত ফেরত তন্ময় মন্ডল বলেন, প্রায় তিন মাস আগে চিকিৎসার জন্য ও অন্যান্য কিছু কাজ নিয়ে আমি ভারতে যাই। ফেরার জন্য করোনা পরীক্ষা করি। গত সোমবার ফল আসে নেগেটিভ। তবে মঙ্গলবার ভারতের চেকপোস্ট পার হওয়ার সময় আমার শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় আবার করোনা পরীক্ষা করাতে হয়। পরীক্ষার পর জানতে পারি আমি করোনা পজিটিভ। তবে আমার শরীরে কোনো ধরনের উপসর্গ নেই। এখন যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি আছি। আরো পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, তন্ময় নামের একজন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাকে রেডজোনে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। পুলিশ প্রশাসনকে বলে রেডজোন গেটে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বেনাপোলে স্বাস্থ্য বিভাগের পরীক্ষা কেন্দ্রে ভারত ফেরতযাত্রী তন্ময় মন্ডলের করোনা পরীক্ষা করা হয়। সেখানে তার শরীরে করোনা ভাইরাস ধরা পড়েছে। এখন তিনি যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি করোনার উচ্চমাত্রা ‘ওমিক্রন’ আক্রান্ত কিনা পরীক্ষা করা হবে।
এদিকে বেনাপোল চেকপোস্টে হেলথ স্ক্রিনিং সেন্টারের স্থান নির্বাচনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা বুধবার বেনাপোল চেকপোস্ট এলাকা পরিদর্শন করেন। এখানে পাসপোর্টযাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কার্যক্রম দেখেন ও নানা দিক নির্দেশনা দেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইদুর রহমান (স্বাস্থ্য ও উন্নয়ন) ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন। পরে তারা বেনাপোলের তালশারী গ্রামে একটি ১০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ হলেও তা আজো চালু না হওয়ায় ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলী, প্রকল্প কর্মকর্তা ও চিকিৎসকবৃন্দ, বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক আব্দুল জলিল, পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন খান, ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রাজু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।