ঢাকা ০১:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিতকামী ও সমবেদনার প্রতীক ছিলেন আমাদের নবীজি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১৬২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাসুল (সা.) একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যত আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল, তা ছিল মানুষের কল্যাণে। কাউকে নিঃশেষ করে ফেলা রাসুলের (সা.) সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল না।

রাসুলের (সা.) হৃদয়ে মানবতার সংস্কার ও সংশোধনের যে মনোভাব সক্রিয় ছিল, তা বুঝতে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—

১. মক্কি জীবনে যখন রাসুলের (সা.) প্রতি চরম নির্যাতন-জুলুম শুরু হলো এবং কোরাইশদের আক্রমণ অতিমাত্রায় ধারণ করল। তৎকালীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার প্রধান কারিগর ছিল দুজন— আবু জাহল ও ওমর ইবনুল খাত্তাব।

এমন কট্টর শত্রুর ব্যাপারে কোনো দুনিয়াবি রাজনীতিক চরম প্রতিহিংসা মনোভাব পোষণ না করে এবং মনে মনে তার ধ্বংস কামনা না করে পারত না। কিন্তু হিংস্রতার আগুনে নিরন্তর দগ্ধ হয়েও রাসুল (সা.) কাতর কণ্ঠে দোয়া করতেন, আল্লাহতায়ালা যেন এই দুজনের একজনকে ইসলামের জন্য কবুল করে।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানবতার এ কাফলা শত্রুদের ধ্বংস থেকে ও তাদের সংশোধন বেশি কামনা করতেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে ভালো আশা করতেন, অবশেষে হযরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে রাসুলের (সা.) দোয়া কবুল হয়।

২. ওহুদের ঘটনা মুসলমানদের জন্য মর্মান্তিক বেদনার ঘটনা। মুসলমানদের কিছু ভুলত্রুটির কারণে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয় এবং সেই যুদ্ধে স্বয়ং রাসুল (সা.) গুরুতর আহত হন।

তখন মুসলমানদের এক চরম তিক্ততার পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল, সেই কঠিন পরিস্থিতির সময় কোন কোন সাহাবি রাসুল (সা.) কে অনুরোধ করলেন। আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে বদদোয়া করুন, যাতে তাদের ওপর আল্লাহতায়ালার আজাব অবতীর্ণ হয়।

তিনি জবাব দিলেন, আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয়নি। আমাকে পাঠানো হয়েছে বার্তাবাহক ও সুসংবাদদাতা হিসেবে। এই বলে তিনি শত্রুদের জন্য দোয়া করলেন,  হে আল্লাহ আমার জাতির লোকদের সুপথ দেখাও, কেননা তারা জানে না।

তা ছাড়া হযরত আলীকে (রা.) খায়বার অভিযানকালে কামুস দুর্গ জয়ের জন্য রাসুল (সা.) বিশেষ পতাকা দিয়ে বললেন— হে আলি, তোমার দ্বারা যদি একজন মানুষও হেদায়াত পায়, তবে সেটি তোমার জন্য মস্ত বড় নিয়ামত হবে।

অর্থাৎ শত্রুর শারীরিক ক্ষতি সাধন ও রক্তপাত করাই আসল উদ্দেশ্য নয়; বরং যত বেশি সম্ভব, মানুষের মন মগজে পরিবর্তন আসুক এবং তারা নয়াজীবন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করুক।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে শত্রুপক্ষের ব্যাপারে এ ধরনের ধারণা রাখার তৌফিক দান করুক। আমিন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হিতকামী ও সমবেদনার প্রতীক ছিলেন আমাদের নবীজি

আপডেট টাইম : ০৫:৫৭:১২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাসুল (সা.) একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শত্রুপক্ষের সঙ্গে যত আন্দোলন-সংগ্রাম ছিল, তা ছিল মানুষের কল্যাণে। কাউকে নিঃশেষ করে ফেলা রাসুলের (সা.) সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল না।

রাসুলের (সা.) হৃদয়ে মানবতার সংস্কার ও সংশোধনের যে মনোভাব সক্রিয় ছিল, তা বুঝতে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো—

১. মক্কি জীবনে যখন রাসুলের (সা.) প্রতি চরম নির্যাতন-জুলুম শুরু হলো এবং কোরাইশদের আক্রমণ অতিমাত্রায় ধারণ করল। তৎকালীন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতার প্রধান কারিগর ছিল দুজন— আবু জাহল ও ওমর ইবনুল খাত্তাব।

এমন কট্টর শত্রুর ব্যাপারে কোনো দুনিয়াবি রাজনীতিক চরম প্রতিহিংসা মনোভাব পোষণ না করে এবং মনে মনে তার ধ্বংস কামনা না করে পারত না। কিন্তু হিংস্রতার আগুনে নিরন্তর দগ্ধ হয়েও রাসুল (সা.) কাতর কণ্ঠে দোয়া করতেন, আল্লাহতায়ালা যেন এই দুজনের একজনকে ইসলামের জন্য কবুল করে।

এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, মানবতার এ কাফলা শত্রুদের ধ্বংস থেকে ও তাদের সংশোধন বেশি কামনা করতেন, চূড়ান্ত পর্যায়ে পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে ভালো আশা করতেন, অবশেষে হযরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে রাসুলের (সা.) দোয়া কবুল হয়।

২. ওহুদের ঘটনা মুসলমানদের জন্য মর্মান্তিক বেদনার ঘটনা। মুসলমানদের কিছু ভুলত্রুটির কারণে যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয় এবং সেই যুদ্ধে স্বয়ং রাসুল (সা.) গুরুতর আহত হন।

তখন মুসলমানদের এক চরম তিক্ততার পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল, সেই কঠিন পরিস্থিতির সময় কোন কোন সাহাবি রাসুল (সা.) কে অনুরোধ করলেন। আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে বদদোয়া করুন, যাতে তাদের ওপর আল্লাহতায়ালার আজাব অবতীর্ণ হয়।

তিনি জবাব দিলেন, আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয়নি। আমাকে পাঠানো হয়েছে বার্তাবাহক ও সুসংবাদদাতা হিসেবে। এই বলে তিনি শত্রুদের জন্য দোয়া করলেন,  হে আল্লাহ আমার জাতির লোকদের সুপথ দেখাও, কেননা তারা জানে না।

তা ছাড়া হযরত আলীকে (রা.) খায়বার অভিযানকালে কামুস দুর্গ জয়ের জন্য রাসুল (সা.) বিশেষ পতাকা দিয়ে বললেন— হে আলি, তোমার দ্বারা যদি একজন মানুষও হেদায়াত পায়, তবে সেটি তোমার জন্য মস্ত বড় নিয়ামত হবে।

অর্থাৎ শত্রুর শারীরিক ক্ষতি সাধন ও রক্তপাত করাই আসল উদ্দেশ্য নয়; বরং যত বেশি সম্ভব, মানুষের মন মগজে পরিবর্তন আসুক এবং তারা নয়াজীবন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করুক।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে শত্রুপক্ষের ব্যাপারে এ ধরনের ধারণা রাখার তৌফিক দান করুক। আমিন।