কোরআন-হাদিসে সপ্তাহের সাত দিনের বর্ণনা যেমন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সেকেন্ড, মিনিট ও ঘণ্টার ধারাক্রমে ২৪ ঘণ্টায় হয় এক দিন। তা হতে পারে সপ্তাহের সাত দিনের যেকোনো দিন। ছোটবেলা থেকে লোকমুখে শুনে শুনে এই বারগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায় সব পেশার মানুষ। প্রত্যেকেই এই বার সম্পর্কে সচেতন। কারণ আজ কী বার—যে জানে না সে উদাসীন, গাফিল। সপ্তাহের সাত দিনের প্রত্যেক বারের উল্লেখ কোরআন-হাদিসে পাওয়া যায়। সবার জ্ঞাতার্থে কোরআন-হাদিসের আলোকে নিম্নে তা তুলে ধরা হলো—

শুক্রবার/জুমাবার : 

শুক্রবারের আরবি শব্দ জুমুআ। অর্থ একত্র হওয়া। জমায়েত হওয়া। যেহেতু এ দিনে মানুষ আল্লাহর হুকুম পালনের লক্ষ্যে আল্লাহর ঘরে জমায়েত হয়, এ জন্য একে জুমুআ বলা হয়। জুমুআ তথা শুক্রবারের কথা কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, যখন তোমাদের শুক্রবার দিন নামাজের দিকে ডাকা হয়, তখন আল্লাহর জিকিরের দিকে ধাবিত হও। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমুআ, আয়াত : ৯)

বিভিন্ন হাদিসেও শুক্রবারের উল্লেখ আছে। যেমন—

১. আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শুক্রবারে গোসল করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির জন্য আবশ্যক।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৫)

২. আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) জুমুআর (শুক্রবারের) নামাজ পড়তেন যখন সূর্য হেলে পড়ত। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৯৪)

শনিবার :

আরবিতে শনিবারকে বলা হয় ইয়াউমুস সাবত। পবিত্র কোরআনে শনিবারের কথা উল্লেখ আছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা জান তোমাদের মধ্য থেকে যারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করেছে। ফলে আমি তাদের বলেছি তোমরা হীন বানর বনে যাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৬৫)

তেমনি হাদিসে এই নাম উল্লেখ আছে। আবদুল্লাহ ইবনে বুসর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমাদের ওপর নির্ধারিত ফরজ রোজা ছাড়া শনিবার দিন রোজা রেখো না…।’ (ইবনে মাজা, হাদিস : ১৭২৬)

রবিবার :

আরবিতে রবিবারকে বলা হয় ইয়াউমুল আহাদি। রবিবারের কথা হাদিস শরিফে পাওয়া যায়।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) তাবেঈ নাফে (রহ.)-কে বলেন, হে নাফে, আমার রক্ত উথলে উঠেছে। একজন শিঙ্গাকারকে তালাশ করো। আর নির্বাচন করো একজন ভালো সঙ্গীকে—বৃদ্ধও না শিশুও না। কারণ আমি নবীজির কাছ থেকে বলতে শুনেছি, খাওয়াদাওয়ার আগে শিঙ্গা লাগানো উত্তম। এতে আছে শিফা ও বরকত। এটি বিবেক ও স্মরণশক্তিকে বৃদ্ধি করে। তাই আল্লাহর বরকত লাভের উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার শিঙ্গা লাগাও। আর বুধবার, শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার শিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকো। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪৮৭)

সোমবার :

একটি হাদিসে সোমবারের কথা উল্লেখ আছে। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আবু বকর (রা.)-এর ঘরে প্রবেশ করলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, নবীজিকে কাফন দিয়েছ কতটি কাপড়ে? তিনি বলেন, তিনটি ছোট সাদা কাপড়ে। যাতে ছিল না কামিস ও ইমামা। আবু বকর (রা.) বললেন, কোন দিন তিনি ইন্তেকাল করেছেন? আয়েশা (রা.) বললেন, সোমবার দিন। (বুখারি, হাদিস : ১৩৭১)

মঙ্গলবার :

আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) সোমবার নবুয়তপ্রাপ্ত হয়েছেন। আর আলী (রা.) মঙ্গলবার নামাজ আদায় করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৭২৮)

বুধবার :

আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বলেন। আমি নবীজিকে বলতে শুনেছি, খাওয়াদাওয়ার আগে শিঙ্গা লাগানো উত্তম। এটা জ্ঞান ও স্মরণশক্তি বাড়ায়। হাফেজের মুখস্থশক্তি বৃদ্ধি করে। অতএব যে শিঙ্গা লাগাতে চায় সে যেন আল্লাহর নাম নিয়ে বৃহস্পতিবার লাগায়। এবং শুক্র, শনি, রবি শিঙ্গা লাগাও। সোম, মঙ্গলবারেও শিঙ্গা লাগাও। তবে বুধবার শিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকো। কারণ এদিন আইয়ুব (আ.) পরীক্ষায় নিপতিত হয়েছিলেন। এবং কুষ্ঠরোগ ও শ্বেতরোগ বুধবার দিনে বা রাতেই প্রকাশ পেয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৪৮৮)

বৃহস্পতিবার :

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, বৃহস্পতিবার! হায় বৃহস্পতিবার! এদিন নবীজির ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছিল। এ অবস্থায় নবীজি বলেন, আমার কাছে কিছু নিয়ে আসো। আমি একটি পত্র লিখে দেব যার পরে আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না তোমরা। তখন সাহাবায়ে কেরাম মতানৈক্যে পতিত হলেন…।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪২৫৩)

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর