ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে কাঁদিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১
  • ১৬০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খেলা শুরুর দুই ঘণ্টা বাকি তখনো। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই কিলোমিটার দূর থেকে দীর্ঘ যানজট। আরব আমিরাতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাকিস্তানিদের জনস্রোত এই স্টেডিয়াম ঘিরে। গাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, দ্রুত নেমে হাঁটা ধরছেন যে যার মতো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাবর আজমের দল যে পারফরম্যান্স, নিবেদন দেখিয়েছেন- তা অনবদ্য।

পাকিস্তানি দর্শকদের উত্তেজনার আগুনে যেন জল ঢেলে দিয়েছেন এক ম্যাথু ওয়েড। তবে এখানে হাসান আলীর দায়টাও আছে। ৯ বলে প্রয়োজন ১৮ রান। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে মিড উইকেটে খেলেছেন ওয়েড। তালুবন্দি করতে পারেননি এই পেসার। জীবন পেয়েই শর্ট ফাইন লেগে স্কুপ করে ছয়, এরপর টানা দুই ছয়ে ম্যাচই জিতিয়ে দেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। হতভম্ব দর্শকরা, হতভম্ব প্রেস বক্সে থাকা সাংবাদিকরা। ৯ বলের রান ওয়েড নিয়ে ফেলেছেন ৩ বলেই। অথচ হাসান আলী ক্যাচটি ধরতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

ওয়েডের টানা তিন ছয়ের পাকিস্তানি দর্শকের মাথায় যেন বাজ পড়ে। মুহূর্তেই দুবাইয়ের স্টেডিয়ামের গগনবিদারী গর্জন রূপ নেয় শ্মশানে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে শুরু। এরপর একের পর এক জয়। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে। পাকিস্তানের জয়রথ যেন থামছেই না। নিবেদন, তাড়না দেখে অনেকেই আগে থেকেই পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন ধরে নিয়েছিলেন। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনেও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেছিলেন, অনেকে পাকিস্তানকে ফাইনালে ধরে রেখেছেন কিন্তু আমরা মাঠেই প্রমাণ করবো।

এই শাহীন আফ্রিদি হতে পারতেন নায়ক। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক ফিঞ্চকে ফিরিয়েছেন সাজঘরে। ১ রান না হতেই অস্ট্রেলিয়ার নেই ১ উইকেট! এরপর ডেভিড ওয়ার্নার-মিচেল মার্শ হাল ধরেন খেলার। দুজনে বেশ ভালোভাবেই ফাইটব্যাক দেন। পাওয়ার প্লে-থেকে তোলেন ৫২ রান। এর পরেই ফেরেন মার্শ (২৮)। এরপর ক্রিজে এসে স্টিভেন স্মিথ ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলরা দ্রুত ফেরেন সাজঘরে। কিন্তু ওয়ার্নার থামেননি। প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছয় মেরে রানের চাকা সচল রেখেছেন অভিজ্ঞ ওয়ার্নার।

তবে দলের জন্য পর্যন্ত থাকতে পারেননি। ৩টি করে চার-ছয়ে আউট হন ৩০ বলে ৪৯ রান করে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে তার এই রান জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ওয়ার্নারের গড়া ভিতে দাঁড়িয়ে এবার ম্যাচ শেষ করে আসেন ওয়েড-স্টয়নিস। দুজনে ৪১ বলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৮১ রান। মাত্র ১৭ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত ছিলেন ওয়েড। ২টি চার ও ৪টি ছয় হাঁকিয়েছেন তিনি। আর স্টয়নিস অপরাজিত ছিলেন ৩১ বলে ৪০ রান করে।

শুরুতে শাহীন আফ্রিদি আগুন ঝরালেও পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত করেছেন শাদাব খান। ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট। শাহিন আফ্রিদি নেন ১ উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে রিজওয়ান আর বাবর আজমের ব্যাটে দারুণ শুরু করেছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত থামে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে। বাবর ৩৪ বলে ৩৯ রান করে আউট হলে ভাঙে ৭১ রানের ওপেনিং জুটি। রিজওয়ান তখনো খেলে যাচ্ছিলেন সমান তালে। বাবর আউট হলেও থামেনি তার ব্যাট।

দ্বিতীয় উইকেটে তার সঙ্গী হন ফখর জামান। তবে রানের চাকা থেমে গিয়েছিল। ১৫ ওভারে পাকিস্তান তোলে ১১৭ রান। হাতে ছিল তখনো ৯ উইকেট। ১৬তম ওভারে আসে মাত্র ৫ রান। সে সময় মারতে গিয়ে আউট হন রিজওয়ান। ওপেনিংয়ে নেমে আউট হন ১৮তম ওভারে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫২ বলে ৬৭ রান। ৩টি চার ও ৪টি ছয়ের মার ছিল তার ইনিংসে।
রিজওয়ান আউট হওয়ার পরেই পাকিস্তান আসিফ আলি ও শোয়েব মালিকের উইকেট হারায়। কিন্তু চার-ছয়ের ঝড় তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ফখর। মাত্র ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৫৫ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার আর ৪টি ছয়ের মার। শেষ চার ওভারে পাকিস্তান তোলে ৫৪ রান। সুপার টুয়েলভে সতীর্থরা জ্বলে উঠলেও ফখরের ব্যাট ছিল নিষ্প্রভ। সেমিফাইনালে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। ১টি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাকিস্তানকে কাঁদিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে

আপডেট টাইম : ১০:২৪:২২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ নভেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খেলা শুরুর দুই ঘণ্টা বাকি তখনো। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের দুই কিলোমিটার দূর থেকে দীর্ঘ যানজট। আরব আমিরাতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাকিস্তানিদের জনস্রোত এই স্টেডিয়াম ঘিরে। গাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই, দ্রুত নেমে হাঁটা ধরছেন যে যার মতো। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে বাবর আজমের দল যে পারফরম্যান্স, নিবেদন দেখিয়েছেন- তা অনবদ্য।

পাকিস্তানি দর্শকদের উত্তেজনার আগুনে যেন জল ঢেলে দিয়েছেন এক ম্যাথু ওয়েড। তবে এখানে হাসান আলীর দায়টাও আছে। ৯ বলে প্রয়োজন ১৮ রান। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে মিড উইকেটে খেলেছেন ওয়েড। তালুবন্দি করতে পারেননি এই পেসার। জীবন পেয়েই শর্ট ফাইন লেগে স্কুপ করে ছয়, এরপর টানা দুই ছয়ে ম্যাচই জিতিয়ে দেন এই উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান। হতভম্ব দর্শকরা, হতভম্ব প্রেস বক্সে থাকা সাংবাদিকরা। ৯ বলের রান ওয়েড নিয়ে ফেলেছেন ৩ বলেই। অথচ হাসান আলী ক্যাচটি ধরতে পারলে গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো।

ওয়েডের টানা তিন ছয়ের পাকিস্তানি দর্শকের মাথায় যেন বাজ পড়ে। মুহূর্তেই দুবাইয়ের স্টেডিয়ামের গগনবিদারী গর্জন রূপ নেয় শ্মশানে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে উড়িয়ে শুরু। এরপর একের পর এক জয়। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে। পাকিস্তানের জয়রথ যেন থামছেই না। নিবেদন, তাড়না দেখে অনেকেই আগে থেকেই পাকিস্তানকে চ্যাম্পিয়ন ধরে নিয়েছিলেন। ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনেও অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ বলেছিলেন, অনেকে পাকিস্তানকে ফাইনালে ধরে রেখেছেন কিন্তু আমরা মাঠেই প্রমাণ করবো।

এই শাহীন আফ্রিদি হতে পারতেন নায়ক। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক ফিঞ্চকে ফিরিয়েছেন সাজঘরে। ১ রান না হতেই অস্ট্রেলিয়ার নেই ১ উইকেট! এরপর ডেভিড ওয়ার্নার-মিচেল মার্শ হাল ধরেন খেলার। দুজনে বেশ ভালোভাবেই ফাইটব্যাক দেন। পাওয়ার প্লে-থেকে তোলেন ৫২ রান। এর পরেই ফেরেন মার্শ (২৮)। এরপর ক্রিজে এসে স্টিভেন স্মিথ ও গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলরা দ্রুত ফেরেন সাজঘরে। কিন্তু ওয়ার্নার থামেননি। প্রায় প্রতি ওভারেই চার-ছয় মেরে রানের চাকা সচল রেখেছেন অভিজ্ঞ ওয়ার্নার।

তবে দলের জন্য পর্যন্ত থাকতে পারেননি। ৩টি করে চার-ছয়ে আউট হন ৩০ বলে ৪৯ রান করে। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার মিছিলে তার এই রান জয়ের ভিত গড়ে দেয়। ওয়ার্নারের গড়া ভিতে দাঁড়িয়ে এবার ম্যাচ শেষ করে আসেন ওয়েড-স্টয়নিস। দুজনে ৪১ বলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৮১ রান। মাত্র ১৭ বলে ৪১ রান করে অপরাজিত ছিলেন ওয়েড। ২টি চার ও ৪টি ছয় হাঁকিয়েছেন তিনি। আর স্টয়নিস অপরাজিত ছিলেন ৩১ বলে ৪০ রান করে।

শুরুতে শাহীন আফ্রিদি আগুন ঝরালেও পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত করেছেন শাদাব খান। ৪ ওভারে মাত্র ২৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট। শাহিন আফ্রিদি নেন ১ উইকেট।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে রিজওয়ান আর বাবর আজমের ব্যাটে দারুণ শুরু করেছিল পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত থামে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান করে। বাবর ৩৪ বলে ৩৯ রান করে আউট হলে ভাঙে ৭১ রানের ওপেনিং জুটি। রিজওয়ান তখনো খেলে যাচ্ছিলেন সমান তালে। বাবর আউট হলেও থামেনি তার ব্যাট।

দ্বিতীয় উইকেটে তার সঙ্গী হন ফখর জামান। তবে রানের চাকা থেমে গিয়েছিল। ১৫ ওভারে পাকিস্তান তোলে ১১৭ রান। হাতে ছিল তখনো ৯ উইকেট। ১৬তম ওভারে আসে মাত্র ৫ রান। সে সময় মারতে গিয়ে আউট হন রিজওয়ান। ওপেনিংয়ে নেমে আউট হন ১৮তম ওভারে। তার ব্যাট থেকে আসে ৫২ বলে ৬৭ রান। ৩টি চার ও ৪টি ছয়ের মার ছিল তার ইনিংসে।
রিজওয়ান আউট হওয়ার পরেই পাকিস্তান আসিফ আলি ও শোয়েব মালিকের উইকেট হারায়। কিন্তু চার-ছয়ের ঝড় তুলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ফখর। মাত্র ৩১ বলে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। অপরাজিত থাকেন ৩২ বলে ৫৫ রান করেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ৩টি চার আর ৪টি ছয়ের মার। শেষ চার ওভারে পাকিস্তান তোলে ৫৪ রান। সুপার টুয়েলভে সতীর্থরা জ্বলে উঠলেও ফখরের ব্যাট ছিল নিষ্প্রভ। সেমিফাইনালে এসে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক। ১টি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও অ্যাডাম জাম্পা।