জেলহত্যা দিবস এ হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আজ কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে সেনাবাহিনীর কয়েকজন বিপথগামী সদস্য যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সভ্য দুনিয়ায় এ ধরনের ঘটনার নজির নেই।

সেদিন নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বাংলাদেশের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী জাতীয় চার নেতা-সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামান। বঙ্গবন্ধুর দৈহিক অনুপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান ছিল অমূল্য। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তারা। বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ঘাতকদের ইচ্ছায় গঠিত মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে রাজি হননি এ নেতারা। এভাবে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদও জানিয়েছিলেন বলতে হবে।

মূলত এ কারণেই বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদের শাসনামলে তাদের গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং একপর্যায়ে তাদের হত্যার জন্য সেখানে পাঠানো হয় ঘাতকদের। কারারক্ষীরা বাধা দিলে খোদ মোশতাকের পক্ষ থেকে নির্দেশ আসে ঘাতকদের কাজে সহায়তা করার জন্য। তারা ভেতরে গিয়ে বেছে বেছে চার নেতাকে একত্র করে এবং গুলি চালিয়ে ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

এ হত্যাকাণ্ড একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ এবং বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডেরই ধারাবাহিকতা। ১৫ আগস্টের খুনিচক্রই জেলহত্যাকাণ্ড ঘটায়। তারা খবর পেয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীরই একটি অংশ পালটা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। এ অবস্থায় কিছুটা জিঘাংসা থেকেও ঘাতকরা জেলহত্যার ঘটনা ঘটায় বলে ধারণা। এমনও মনে করা হয়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক শক্তিকে নিঃশেষ করার হীন পরিকল্পনা ছিল, তার পুনরুত্থানে নেতৃত্বদানে সক্ষম নেতাদের শেষ করে দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। জেলহত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে তারা বিদেশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় বিমানবন্দর দিয়ে। কীভাবে সেটা সম্ভব হয়েছিল, তা আজও এক রহস্য। জেলহত্যার ঘটনা তদন্তে একটি বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠিত হলেও সেটি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারেনি। সংশ্লিষ্ট থানায় একটি মামলাও দায়ের হয়েছিল। এর সবকিছুই কার্যত বাতিল বা বন্ধ হয়ে যায় একই বছরের ৭ নভেম্বর আরেকটি সেনা অভ্যুত্থানের ওপর ভর করে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর। তিনি বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার ঘটনার তদন্ত ও বিচারের কোনো উদ্যোগ নেননি। বরং এ সময় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়।

চার নেতা হত্যার বিচারে কোনো আইনগত বাধা না থাকলেও সে প্রক্রিয়াও বন্ধ ছিল দীর্ঘ ২১ বছর। দুর্ভাগ্যজনক বলতে হবে, বিরুদ্ধপক্ষের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন থাকাটাই ছিল এর কারণ। এটা ছিল আইনের শাসনের এক চরম লঙ্ঘন। জেলহত্যার বিচারের যে প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ করেছি, তাও হতাশাব্যঞ্জক বলা চলে। এ মামলায় যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর নিু আদালত এ মামলার রায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিলেও ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামিকে বেকসুর খালাস এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া চারজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। আসামিদের খালাস করে দেওয়া হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল এবং বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বহাল রাখার আরজি জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দুই আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। তবে এ দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ডাদেশ কার্যকর করা প্রয়োজন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর