ঢাকা ০৯:৪০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হ্যাকিং নয়, চুরি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০১৬
  • ৩৪৮ বার

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ফিলিপাইন থেকে এই অর্থ ফেরত আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গোয়েন্দা তথ্য মতে, জালিয়াতির মাধ্যমে একইদিনে ২৩টি নির্দেশে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ গভর্নরের পদ ছাড়ার পর আতিউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, সাইবার আক্রমণে এ বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সিস্টেমের মধ্যে একটা ম্যালওয়্যার ঢুকেছিল। কীভাবে ঢুকেছিল, কোত্থেকে ঢুকেছে, কেমন করে ঢুকেছে- এটার জন্য আন্তর্জাতিক ফরেনসিক এক্সপার্টরা ইনভেস্টিগেশন করছে। ইনভেস্টিগেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে, ইনভেস্টিগেশন হলে আপনারা জানতে পারবেন।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ লোপাট হয়েছে দাবি করায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কাছেও এ ঘটনা কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা একসঙ্গে কাজ করেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে যে কমিউনিকেশন সিস্টেম সুইফট সিস্টেমের কথা বলা হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত নিরাপদ একটা ব্যবস্থা এ জাতীয় কমিউনিকেশনের জন্য। কাজেই সেখানে একটা ম্যলওয়্যার কিভাবে ঢুকলো সেটা বিরাট প্রশ্নের উদ্রেক করে। এটা পুরোপুরি কি শুধুই হ্যাকিং বা ম্যালওয়ারের ঘটনা।

সুমন

আহমেদ সাবির বলেন, এখানে ভেতরের কেউ জড়িত ছিলেন এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ হ্যাকিংয়ের যে ঘটনাগুলো আমরা দেখি বা যে ইতিহাসগুলো আমরা দেখি, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে সেখানে ইনসাইডাররা জড়িত থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ নিউইয়র্ক ফেড থেকে যায় শ্রীলংকা এবং ফিলিপাইনের দুটি ব্যাংকে। তবে সন্দেহজনক হওয়ায় শ্রীলংকায় প্যান এশিয়া ব্যাংকে জমা হওয়া দুই কোটি ডলার আটকে দেয়া হয়।

কিন্তু ফিলিপাইনে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪টি অ্যাকাউন্টে আট কোটি ১০ লাখ ডলার পৌঁছে যায় এবং সে টাকা তুলে নেয় অপরাধী চক্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা আমি বলবো না হ্যাকিং, এটা চুরি।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লেনদেনে কয়েক স্তরে তদারকি এবং নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আর তাই পুরো ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের নজরদারিতে ঘাটতি দেখছেন তিনি।

সুইফট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দেয়ার আর থ্রি স্টেজেজ ব্যাসিকালি মিনিমাম। মেকার, চেকার অ্যান্ড অ্যাপ্রুভার। একটা হলো প্রসেস করবে, সে কিন্তু জাস্ট প্রসেস করবে। একজন চেক করবে যে এটা ঠিক আছে কিনা। এদের ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড সব আলাদা। এরপর অ্যাপ্রুভ যে করবে সে কিন্তু কমপ্লিটলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

তিনি বলেন, ব্যাক অফিস ফ্রন্ট অফিস ছাড়াও অডিটর যারা ইন্টারনাল অডিটর তাদের কিন্তু এটা দেখার কথা। অতএব এই সিস্টেম ফেইলিয়র হয়ে গেলে তো ডিফিকাল্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে টাকা বেরিয়ে যাওয়ায় অর্থ উদ্ধার কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, রিজাল ব্যাংক থেকে চলে গেছে ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনো থেকে আবার চলে গেছে ফিলরেমে। ফিলরেম (মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান) থেকে আবার চলে গেছে হংকংয়ে। এখন এটা আদায় করা কঠিন।

তিনি মনে করেন, আইনগত পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। ওদেরকে ফাইন করবে, তারপরে আনবে। আর টাকাটা আনা মানেইতো বাংলাদেশকে দেওয়া নাতো।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপার না কূটনীতিক চ্যানেলেও চেষ্টা করতে হবে। জিনিসটা ডিফিকাল্ট হয়ে গেছে। টাকাটা যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে থাকতো তখন একটু হয়তো সুবিধা ছিল। তবে এখানে একটু আশার কথা যে রিজাল ব্যাংকের দোষ আছে। ওদের স্টপ করতে বলেছে এবং ওদের দেখা উচিত ছিল একটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের টাকা কী করে একটা ক্যাসিনোতে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ চুরি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই বক্তব্য দিতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই ম্যান্ডিয়েন্টের ফরেনসিক বিভাগ ঘটনা তদন্ত করছে।

এছাড়া রিজার্ভ চুরির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এবং সিআইডি আলাদা তদন্তে নেমেছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়েরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্তে। -বিবিসি

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকা লোপাট হ্যাকিং নয়, চুরি

আপডেট টাইম : ১০:৫২:২৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ ২০১৬

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে বাংলাদেশের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরির ঘটনায় নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া ফিলিপাইন থেকে এই অর্থ ফেরত আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়াও শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

গোয়েন্দা তথ্য মতে, জালিয়াতির মাধ্যমে একইদিনে ২৩টি নির্দেশে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয়।

রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় ১৫ মার্চ গভর্নরের পদ ছাড়ার পর আতিউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, সাইবার আক্রমণে এ বিপুল টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, সিস্টেমের মধ্যে একটা ম্যালওয়্যার ঢুকেছিল। কীভাবে ঢুকেছিল, কোত্থেকে ঢুকেছে, কেমন করে ঢুকেছে- এটার জন্য আন্তর্জাতিক ফরেনসিক এক্সপার্টরা ইনভেস্টিগেশন করছে। ইনভেস্টিগেশন প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে, ইনভেস্টিগেশন হলে আপনারা জানতে পারবেন।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ লোপাট হয়েছে দাবি করায় সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের কাছেও এ ঘটনা কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তথ্য প্রযুক্তি এবং ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা একসঙ্গে কাজ করেছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

তিনি বলেন, এখানে যে কমিউনিকেশন সিস্টেম সুইফট সিস্টেমের কথা বলা হচ্ছে, সেটা অত্যন্ত নিরাপদ একটা ব্যবস্থা এ জাতীয় কমিউনিকেশনের জন্য। কাজেই সেখানে একটা ম্যলওয়্যার কিভাবে ঢুকলো সেটা বিরাট প্রশ্নের উদ্রেক করে। এটা পুরোপুরি কি শুধুই হ্যাকিং বা ম্যালওয়ারের ঘটনা।

সুমন

আহমেদ সাবির বলেন, এখানে ভেতরের কেউ জড়িত ছিলেন এমন সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ হ্যাকিংয়ের যে ঘটনাগুলো আমরা দেখি বা যে ইতিহাসগুলো আমরা দেখি, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করি যে সেখানে ইনসাইডাররা জড়িত থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ নিউইয়র্ক ফেড থেকে যায় শ্রীলংকা এবং ফিলিপাইনের দুটি ব্যাংকে। তবে সন্দেহজনক হওয়ায় শ্রীলংকায় প্যান এশিয়া ব্যাংকে জমা হওয়া দুই কোটি ডলার আটকে দেয়া হয়।

কিন্তু ফিলিপাইনে রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকে ৪টি অ্যাকাউন্টে আট কোটি ১০ লাখ ডলার পৌঁছে যায় এবং সে টাকা তুলে নেয় অপরাধী চক্র।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা আমি বলবো না হ্যাকিং, এটা চুরি।

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লেনদেনে কয়েক স্তরে তদারকি এবং নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়। আর তাই পুরো ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের নজরদারিতে ঘাটতি দেখছেন তিনি।

সুইফট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লেনদেন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, দেয়ার আর থ্রি স্টেজেজ ব্যাসিকালি মিনিমাম। মেকার, চেকার অ্যান্ড অ্যাপ্রুভার। একটা হলো প্রসেস করবে, সে কিন্তু জাস্ট প্রসেস করবে। একজন চেক করবে যে এটা ঠিক আছে কিনা। এদের ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড সব আলাদা। এরপর অ্যাপ্রুভ যে করবে সে কিন্তু কমপ্লিটলি ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

তিনি বলেন, ব্যাক অফিস ফ্রন্ট অফিস ছাড়াও অডিটর যারা ইন্টারনাল অডিটর তাদের কিন্তু এটা দেখার কথা। অতএব এই সিস্টেম ফেইলিয়র হয়ে গেলে তো ডিফিকাল্ট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে টাকা বেরিয়ে যাওয়ায় অর্থ উদ্ধার কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, রিজাল ব্যাংক থেকে চলে গেছে ক্যাসিনোতে। ক্যাসিনো থেকে আবার চলে গেছে ফিলরেমে। ফিলরেম (মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান) থেকে আবার চলে গেছে হংকংয়ে। এখন এটা আদায় করা কঠিন।

তিনি মনে করেন, আইনগত পদক্ষেপের মাধ্যমে অর্থ উদ্ধার করতে হবে। ওদেরকে ফাইন করবে, তারপরে আনবে। আর টাকাটা আনা মানেইতো বাংলাদেশকে দেওয়া নাতো।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাপার না কূটনীতিক চ্যানেলেও চেষ্টা করতে হবে। জিনিসটা ডিফিকাল্ট হয়ে গেছে। টাকাটা যদি ব্যাংকিং চ্যানেলে থাকতো তখন একটু হয়তো সুবিধা ছিল। তবে এখানে একটু আশার কথা যে রিজাল ব্যাংকের দোষ আছে। ওদের স্টপ করতে বলেছে এবং ওদের দেখা উচিত ছিল একটা সেন্ট্রাল ব্যাংকের টাকা কী করে একটা ক্যাসিনোতে যায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ চুরি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউই বক্তব্য দিতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফায়ারআই ম্যান্ডিয়েন্টের ফরেনসিক বিভাগ ঘটনা তদন্ত করছে।

এছাড়া রিজার্ভ চুরির ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি এবং সিআইডি আলাদা তদন্তে নেমেছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়েরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্তে। -বিবিসি