হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশের একমাত্র বদ্বীপ মহেশখালীকে ঘিরে চলছে সরকারের একাধিক মেগা প্রকল্প। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুত্ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দর, এলএনজি টানেল, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ চলছে লাখোকোটি টাকার উন্নয়ন যজ্ঞ। ইতিমধ্যে সরকার মহেশখালীকে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এত কিছুর পরেও যোগাযোগের ক্ষেত্রে দ্বীপবাসী সেই পুরোনো ব্যবস্থাতেই আটকে রয়েছে। কক্সবাজারে যাতায়াত করতে তুলনামূলকভাবে ধনীদের জন্য স্পিড বোট আর মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্তের জন্য এখনো কাঠের ট্রলারই ভরসা। রাতের বেলা যাতায়াত আরো কঠিন হয়ে পড়ে। এরকম যোগাযোগ ব্যবস্থায় কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নসাধন করা রীতিমতো অসম্ভব বলে মনে করেন সচেতন মহল। কিন্তু কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে মহেশখালীর দূরত্ব মাত্র আড়াই কিলোমিটার, আর চৌফলদন্ডি হতে দূরত্ব পৌনে ৩ কিলোমিটার। এর যে কোনো একটি স্থান দিয়ে একটি সংযোগ সেতু নির্মাণ হলে দেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মহেশখালী সদরের সহজ যোগাযোগ স্থাপন হবে। ভোগান্তি কমবে ডিজিটাল আইল্যান্ডের সাড়ে ৩ লাখ দ্বীপবাসীর। কমবে ঘাট পারাপারের বিড়ম্বনা। আর উৎপাদিত কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণও সহজ হবে। বিকশিত হবে পর্যটনশিল্প। সরকারও পাবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সংযোগ সেতু নির্মাণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মহেশখালীর সচেতন মহল।
সচেতন মহলের মতে, বর্তমান সরকার যেখানে স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন, সেখানে আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ তেমন কঠিন হবে না। মহেশখালীবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপটির সঙ্গে কক্সবাজারের সংযোগ সেতু নির্মাণ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক।
দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ৩৬২ দশমিক শূন্য ২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাস করেন সাড়ে ৩ লাখের অধিক জনগণ। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরুত্ব পাড়ি দিয়ে মহেশখালী-চকরিয়া হয়ে সড়ক পথে কক্সবাজার জেলা সদরে আসতে হয়। আর নৌপথে পাড়ি দিতে হয় ১৫ কিলোমিটার চ্যানেল। এতে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগ পোহাতে হয় দ্বীপবাসীকে। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ, গর্ভবতী নারীদের যাতায়াতে দারুণ সমস্যা হয়। দুর্যোগকালীন সময়ে পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে পড়ে। অনুন্নত যোগাযোগব্যবস্থার কারণে অনেক সময় উত্পাদিত পণ্য বা মত্স্য সময়মতো বাজারজাত করা যায় না। ফলে অনেক পণ্য নষ্ট হয়ে যায় এবং ক্ষতির মুখে পড়েন কৃষক। নৌ-পারাপারে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে অহরহ। হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। অথচ কক্সবাজার সদর উপজেলার নাজিরারটেক কিংবা চৌফলদন্ডি হতে মাত্র আড়াই কিলোমিটার সেতু নির্মাণ করা হলে এ ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে বলে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন মহেশখালীবাসী।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, মহেশখালীকে ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে সরকার। ২০১৭ সালে জানুয়ারি মাসে মহেশখালীকে ডিজিটাল আইল্যান্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চল, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, গভীর সমুদ্রবন্দরসহ একাধিক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে এখানে। ভিভিআইপি ও ভিআইপিসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত রয়েছে নিয়মিত। এছাড়া প্রাচীন আদিনাথ ও রাম মন্দিরে পূজারী ও পর্যটকদের যাতায়াতও চলমান। মহেশখালীর জনগণের দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা আর প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে ‘কক্সবাজার-মহেশখালী সংযোগ সেতু’ নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিবকে একটি চিঠি দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। যেখানে কক্সবাজার পৌরসভার উত্তর নাজিরারটেক হতে মহেশখালী পর্যন্ত একটি সংযোগ সেতু নির্মাণ করা যেতে পারে—এমন প্রত্যাশার কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠিটি পাঠান তত্কালীন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন। এর সূত্র ধরে, সেতু মন্ত্রণালয় থেকে সেতু নির্মাণের সমীক্ষা করতে একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে মহেশখালী পরিদর্শনও করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারকে নিজের পরিকল্পনা মতো সাজাচ্ছেন। ইতিমধ্যে মহেশখালীতে বাস্তবায়ন হচ্ছে ছোট-বড় অসংখ্য প্রকল্প। স্থানীয় জনগণ ছাড়াও মহেশখালীতে আসা-যাওয়া করে পেশাজীবী, পর্যটক এবং উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলা সদর থেকে মহেশখালী সদরের যোগাযোগ সহজ করতে সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যদিও মহেশখালীর উত্তর অংশে একটি সংযোগ সেতু রয়েছে কিন্তু সেখান দিয়ে সদরের দূরত্ব শত কিলোমিটারের বেশি। ফলে দুর্যোগকালীন সময়ে, জরুরি প্রয়োজনে কিংবা সংকটাপন্ন রোগীদের উন্নত চিকিৎসায় এবং উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মত্স্য সরবরাহ করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেতু চেয়ে সেতু মন্ত্রণালয়ে আবেদন দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রণালয়ের সচিব সরেজমিন পরিদর্শনও করেছেন। চলছে সমীক্ষাও। তবে সেতুটি কক্সবাজার শহরের নুনিয়াছড়া থেকে নাকি চৌফলদন্ডি এলাকা থেকে নির্মাণ করা হবে তা সমীক্ষার পর বলা যাবে।