হাওর বার্তা ডেস্কঃ আল্লাহ মানবজাতিকে পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ লাভের জন্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। পৃথিবীতে যেসব মানুষ মহান স্রষ্টা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তাঁর বিধান মেনে চলবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সবাই এখান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সৎপথের কোনো নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের নির্দেশ অনুসরণ করবে, তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৮)
নিম্নে মুমিন নর-নারীর জন্য আল্লাহ প্রদত্ত কিছু সুসংবাদ তুলে ধরা হলো।. পরকালীন মুক্তি : যারা ঈমানের সঙ্গে আল্লাহকে ভয় করে চলবে, আল্লাহ তাদের পরকালীন মুক্তি দান করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘জেনে রেখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহভীতি অবলম্বন করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে সুসংবাদ।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৬২-৬৩)
চিন্তামুক্ত পার্থিব জীবন : মুমিনরা শুধু পরকালে মুক্তি পাবে না, বরং পার্থিব জীবনেও আল্লাহ তাদের চিন্তামুক্ত জীবন দান করবেন। আল্লাহ বলেন, ‘যারা বলে—আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদের যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’ (সুরা হা-মিম সিজদা, আয়াত : ৩০)
কোরআন : পবিত্র কোরআন মানবজাতির জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পথনির্দেশ ও সুসংবাদস্বরূপ। আল্লাহ বলেন, ‘তা-সিন; এগুলো কোরআনের এবং সুস্পষ্ট কিতাবের আয়াত; পথনির্দেশ ও সুসংবাদ মুমিনদের জন্য।’ (সুরা নামল, আয়াত : ১-২)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তো আপনার ভাষায় কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি—যাতে আপনি তা দ্বারা আল্লাহভীরুদের সুসংবাদ দিতে পারেন এবং বিতণ্ডাপ্রবণ সম্প্রদায়কে তা দ্বারা সতর্ক করতে পারেন।’ (সুরা মারইয়াম, আয়াত : ৯৭)
আল্লাহর ক্ষমা : আল্লাহ মুমিনের জন্য ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদানের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘তুমি শুধু তাকেই সতর্ক করতে পারো, যে উপদেশ মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে। অতএব তাকে তুমি ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের সংবাদ দাও।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ১১). বিপদ থেকে মুক্তি : যেসব বান্দা বিপদে ধৈর্যধারণ করে আল্লাহ তাদের বিপদমুক্ত ও পুরস্কৃত করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে—আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়, এরাই সৎপথে পরিচালিত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
কিয়ামতের ভয়াবহ থেকে মুক্তি : আল্লাহ পরকালে মুমিন বান্দাদের কিয়ামতের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করবেন। ফলে তাদের চেহারা হবে আনন্দোজ্জ্বল। আল্লাহ বলেন, ‘বহু চেহারা সেদিন হবে উজ্জ্বল, সহাস্য-প্রফুল্ল।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ৩৮-৩৯)
জান্নাত দান : মুমিনের জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় সুসংবাদ হলো পরকালে জান্নাত দান। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সেদিন তুমি দেখবে মুমিন নর-নারীদের তাদের সম্মুখভাগ ও ডান পাশে তাদের জ্যোতি ছুটতে থাকবে। বলা হবে, আজ তোমাদের জন্য সুসংবাদ জান্নাতের; যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত, সেথায় তোমরা স্থায়ী হবে। এটাই মহাসাফল্য।’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ১২)
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ : পার্থিব ও অপার্থিব জীবনে মুমিনের জন্য আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি মুমিনদের সুসংবাদ দাও যে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে রয়েছে মহা অনুগ্রহ।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৪৭)
প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার : আল্লাহ মুমিনের সব প্রত্যাশা পূরণের অঙ্গীকার করে বলেছেন, ‘তারা যা চাইবে তাদের প্রতিপালকের কাছে তা-ই পাবে। এটা তো মহা অনুগ্রহ। এই সুসংবাদ আল্লাহ দেন তাঁর বান্দাদের, যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ২২-২৩)
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ : মুমিন মৃত্যুর সময়ই আল্লাহর সন্তুষ্টির সুসংবাদ লাভ করবে। আল্লাহ বলেন, ‘হে প্রশান্ত চিত্ত! তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং আমার জান্নাতে প্রবেশ করো।’ (সুরা ফাজর, আয়াত : ২৭-৩০)
বিপরীতে যারা আল্লাহর অবাধ্য হবে এবং অসৎপথে চলবে, তাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ‘সুসংবাদ’। আল্লাহ বলেন, ‘মোনাফিকদের সুসংবাদ দিন তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৩৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর আয়াত অস্বীকার করে, অন্যায়রূপে নবীদের হত্যা করে এবং মানুষের মধ্যে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয় তাদের হত্যা করে, আপনি তাদের মর্মন্তুদ শাস্তির সুসংবাদ দিন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ২১)
আল্লাহ সবাইকে তাঁর মুমিন বান্দা হয়ে জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।