ঢাকা ০২:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়ার বন্দিশিবিরে ১০৫ প্রবাসীর মৃত্যু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১
  • ১৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মালয়েশিয়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০৫ প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশটির অভিবাসন বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত অভিবাসন আটক কেন্দ্র, পুলিশ লক-আপ এবং কারাগারে বন্দি অবস্থায় ১০৫ জন বিদেশি মারা গেছেন। সম্প্রতি সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজা জয়নুদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যুর মধ্যে বেশি ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক, ভারত, বার্মা, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, কম্বোডিয়ান, কানাডিয়ান, নাইজেরিয়ান এবং ভিয়েতনামের নাগরিক রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে ৬৫ জন বন্দী মারা যান। এর মধ্যে ২০ জন ফিলিপিনো, দুইজন ভারতীয় এবং দুইজন ভিয়েতনামী, বতসোয়ানা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং মিয়ানমারের একজন করে নাগরিক মারা গেছেন।

বন্দিশিবিরে ১০৫ জন বিদেশির মৃত্যুর বিষয়ে ১ অক্টোবর অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল জাজাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে এমনটিই জানিয়েছেন।

এ দিকে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে আটক এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাজা ভোগ করছেন প্রায় ১৬৭৮ জন বাংলাদেশি। অনেকের সাজা শেষ করে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বন্দীর সংখ্যা দুই হাজারেরও অধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। যতদিন ভেতরে থাকবে ততদিন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করার সুযোগ থাকে না। তবে ভেতরে বন্দিদের সঙ্গে আদতে কি হচ্ছে বাইরে এসে কেউ প্রকাশ করতে চান না। অনেকের অনেক সময় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যথা সময়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন না বিভিন্ন জটিলতার কারণে। যেমন, পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণাদির অভাব, পাসপোর্ট আছে মেয়াদ নাই, আবার কারো সাথে কোনো ডকুমেন্টই নাই, নিজ খরচে বিমানের টিকিট করতে না পারা, নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দূতাবাস থেকে যে ডকুমেন্ট (টিপি) পাঠানোর কথা তা সময়মত পাঠানো হয় না দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

তবে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যারা পাসপোর্ট ছাড়া আটক হন তাদের তথ্য ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাতে হলে আগে দেশ থেকে তার নিজ এলাকার প্রশাসন থেকে প্রমান জোগাড় করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার দেখা গেছে সব ডকুমেন্ট আছে কিন্তু টিকিট কেনার পয়সা নাই।

বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় আটকের পর সাজা হলে ঘাটে ঘাটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ডকুমেন্ট সংগ্রহসহ নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কারণ যে জেলে বন্দি আছে, মালয়েশিয়ায় তার কোনো স্বজন নেই এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই, সে কিভাবে দূতাবাস থেকে তার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করবে? আবার বিমান টিকিট ক্রয় করবে? এসব অসংগতির কারণেই নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে মাসের পর মাস বছর পর্যন্ত গড়ায়। যখন সে খালি হাতে ধরা পড়ল সে কোথায় পাবে টিকিট কেনার হাজার রিংগিত? তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন বন্দিদের যেন সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। যেমনটি করেছেন গত সপ্তাহে মায়ানমারের জান্তা সরকার। জান্তা সরকার সামরিক বিমান পাঠিয়ে তার দেশের জেলবন্দীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ হয়ে কিংবা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক হলে প্রথমে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে রাখা হয়। তারপর ১৪ দিন শেষে আদালতে হাজির করে সাজা ঘোষণা করার পর জেলখানায় সাজা ভোগ করতে হয়। জেলখানার সাজা শেষ হলেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। অনির্দিষ্ঠ সময়ের জন্য দেশে ফেরার অপেক্ষায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মালয়েশিয়ার বন্দিশিবিরে ১০৫ প্রবাসীর মৃত্যু

আপডেট টাইম : ০৯:৩৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মালয়েশিয়ায় ডিটেনশন ক্যাম্পে ১০৫ প্রবাসী মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশটির অভিবাসন বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ২৩ আগষ্ট পর্যন্ত অভিবাসন আটক কেন্দ্র, পুলিশ লক-আপ এবং কারাগারে বন্দি অবস্থায় ১০৫ জন বিদেশি মারা গেছেন। সম্প্রতি সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি হামজা জয়নুদ্দিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

সর্বাধিক সংখ্যক মৃত্যুর মধ্যে বেশি ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক, ভারত, বার্মা, বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, কম্বোডিয়ান, কানাডিয়ান, নাইজেরিয়ান এবং ভিয়েতনামের নাগরিক রয়েছেন।

চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে ৬৫ জন বন্দী মারা যান। এর মধ্যে ২০ জন ফিলিপিনো, দুইজন ভারতীয় এবং দুইজন ভিয়েতনামী, বতসোয়ানা, ইন্দোনেশিয়া, ইরান এবং মিয়ানমারের একজন করে নাগরিক মারা গেছেন।

বন্দিশিবিরে ১০৫ জন বিদেশির মৃত্যুর বিষয়ে ১ অক্টোবর অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল জাজাইমি দাউদ এক বিবৃতিতে এমনটিই জানিয়েছেন।

এ দিকে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে আটক এবং অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে সাজা ভোগ করছেন প্রায় ১৬৭৮ জন বাংলাদেশি। অনেকের সাজা শেষ করে বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে বন্দীর সংখ্যা দুই হাজারেরও অধিক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের কোনো সুযোগ নেই। যতদিন ভেতরে থাকবে ততদিন বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করার সুযোগ থাকে না। তবে ভেতরে বন্দিদের সঙ্গে আদতে কি হচ্ছে বাইরে এসে কেউ প্রকাশ করতে চান না। অনেকের অনেক সময় সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যথা সময়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে পারেন না বিভিন্ন জটিলতার কারণে। যেমন, পর্যাপ্ত তথ্য প্রমাণাদির অভাব, পাসপোর্ট আছে মেয়াদ নাই, আবার কারো সাথে কোনো ডকুমেন্টই নাই, নিজ খরচে বিমানের টিকিট করতে না পারা, নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দূতাবাস থেকে যে ডকুমেন্ট (টিপি) পাঠানোর কথা তা সময়মত পাঠানো হয় না দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

তবে দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেরি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যারা পাসপোর্ট ছাড়া আটক হন তাদের তথ্য ডিটেনশন সেন্টারে পাঠাতে হলে আগে দেশ থেকে তার নিজ এলাকার প্রশাসন থেকে প্রমান জোগাড় করতে অনেক সময় লেগে যায়। আবার দেখা গেছে সব ডকুমেন্ট আছে কিন্তু টিকিট কেনার পয়সা নাই।

বন্দিদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় আটকের পর সাজা হলে ঘাটে ঘাটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ডকুমেন্ট সংগ্রহসহ নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত এই ভোগান্তির কোনো শেষ নেই। কারণ যে জেলে বন্দি আছে, মালয়েশিয়ায় তার কোনো স্বজন নেই এবং বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো সংযোগ নেই, সে কিভাবে দূতাবাস থেকে তার ডকুমেন্ট সংগ্রহ করবে? আবার বিমান টিকিট ক্রয় করবে? এসব অসংগতির কারণেই নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে মাসের পর মাস বছর পর্যন্ত গড়ায়। যখন সে খালি হাতে ধরা পড়ল সে কোথায় পাবে টিকিট কেনার হাজার রিংগিত? তাদের স্বজনরা দাবি করেছেন বন্দিদের যেন সরকারি খরচে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। যেমনটি করেছেন গত সপ্তাহে মায়ানমারের জান্তা সরকার। জান্তা সরকার সামরিক বিমান পাঠিয়ে তার দেশের জেলবন্দীদের ফিরিয়ে নিয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ হয়ে কিংবা অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটক হলে প্রথমে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে রাখা হয়। তারপর ১৪ দিন শেষে আদালতে হাজির করে সাজা ঘোষণা করার পর জেলখানায় সাজা ভোগ করতে হয়। জেলখানার সাজা শেষ হলেই ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়। অনির্দিষ্ঠ সময়ের জন্য দেশে ফেরার অপেক্ষায়।