হবিগঞ্জ জেলায় নবীগঞ্জ, বাগুবল, আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলায় হাওর রয়েছে। এসব হাওরে মাছ চাষের সঙ্গে এবার বাণিজ্যিকভাবে সবজি বাগান তৈরি করে হাজারো কৃষকের ভাগ্যবদল হচ্ছে।
হাওরে শুকনো মৌসুমে বোরো ধানের চাষ হয়। আর বর্ষায় হাওর পানিতে ভরা থাকে। সে সময় মাছ চাষ হয়। তবে এবার কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে বর্ষায় হাওরের পানিতে ভাসমান সবজি চাষ করার জন্য। এ পরামর্শ গ্রহণ করে কৃষকরা এখন হাওরের পানিতে সবজি চাষে মনযোগী হয়ে পড়ছেন।
সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় পানিতে কচুরিপানা পঁচিয়ে জৈব সার (কম্পোস্ট) তৈরি করে কৃষকরা সফলতা পাচ্ছে। এতে করে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এ ধরণের সার তৈরিতে কৃষকরা মনোযোগী হচ্ছেন। তাদের অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে। অন্যদিকে বিষমুক্ত সবজি চাষ করতে পারছেন। এ ধরণের সার প্রয়োগ করে হাওরে ভাসমান সবজির চাষাবাদে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ তৈরি হচ্ছে।
জেলার ৮টি উপজেলায় রয়েছে ৭৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি পৌরসভা। কমবেশী এসবস্থানে নানা ধরণের ফসলের আবাদ হচ্ছে। জেলায় মোট ফসলী জমির পরিমাণ ২৯৫৩০০ হেক্টর। আর এরমধ্যে খাদ্য উৎপাদন ৫৪৪২০৮ মেট্রিক টন (বাৎসরিক)। খাদ্য উদ্বৃত্ত ১৯৮৪৫ মেট্রিক টন (বাৎসরিক)।
এসব খাদ্য উৎপাদনে প্রচুর পরিমাণে সারের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় কৃষকরা টাকার অভাবে সার ক্রয় করতে সমস্যায় পড়তে হয়। ডিজিটালের সময়ে কৃষকরা প্রাকৃতিকভাবে কাঁদা মাটি ও কচুরিপানা পঁচিয়ে সার তৈরি করে কৃষিতে ভূমিকা পালন করছেন। তাদের এ উদ্যোগকে হবিগঞ্জ কৃষি বিভাগ স্বাগত জানিয়ে নানাভাবে সহায়তা করছে।
এ ব্যাপারে জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কৃষক আনিসুর রহমান, সুরুজ আলী ও আফরোজ মিয়া জানান, সার নিয়ে আর ভাবতে হবে না। এখন সার তৈরি পদ্ধতি জানি। এ সার তৈরি করতে কোনো টাকা খরচ হচ্ছে না। শুধু নিজের শ্রম দিতে হচ্ছে। নিজেদের তৈরি সার জমিতে প্রয়োগে ভাল ফলন পাচ্ছি।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার তোফায়ের আহমেদ বলেন, ‘হাওরে ভাসমান সবজি চাষকে আরো এগিয়ে নিতে জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস ব্যবস্থাপনায় বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের অর্থায়নে ৩০ জন কৃষক-কৃষাণীর মাঝে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
এ প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহ্ আলম জানান, বর্ষায় হাওরে ভাসমান সবজির চাষ এগিয়ে নিতে নানা চেষ্টার এটি একটি দিক। এ ছাড়াও এ ধরণের চাষাবাদে সফলতা নিয়ে আসতে আরো নানা পদ্ধতি গ্রহণ করা হচ্ছে।’