ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাওয়া সেই নিপু এখন পর্তুগালের ক্রিকেটার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১
  • ১৫৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মুশফিক, সাকিব ও তামিমদের সাথে অলরাউন্ডার হিসাবে যিনি সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন তার নাম সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপু। দুর্দান্ত বাঁহাতি পেস বোলার। সাথে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিল ব্যাপক চাহিদা। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা এই ক্রিকেটার চুক্তিবদ্ধ ছিলেন বিসিবির সাথেও।

কিন্তু একটি ইনজুরির কারণে থমকে যায় হবিগঞ্জ থেকে বেড়ে ওঠা এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। গ্রামের মাঠে মারুতি বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বাম চোখে আঘাত পান নিপু, আর এতেই যেন থেমে যায় সবকিছু।

বিসিবি থেকে চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ায় হতাশায় ক্রিকেট ছেড়ে জীবিকার তাগিদে এক সময় দেশ ত্যাগ করে আশ্রয় নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশে। জাত ক্রিকেটার হওয়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেট খেলে এখন তিনি পর্তুগাল জাতীয় দলেরও খেলোয়াড়। তারই এক সময়কার সতীর্থ মুশফিক, সাকিব ও তামিমের ক্যারিয়ারের অর্জন যেখানে আকাশ ছোঁয়া, সেখানে একই পর্যায়ের খেলোয়াড় হয়েও এখন তিনি ক্রিকেট খেলতে পারার আনন্দেই তৃপ্তি খুঁজে পান।

গত ১৯ আগস্ট পর্তুগালের আলবারগারিয়াতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপুর। যে ম্যাচে মাল্টার বিপক্ষে পর্তুগাল জয়লাভ করে ৬ উইকেটে। যাতে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি তাকে, তবে পর্তুগালের পক্ষে ৪ ওভারে ২৮ রানে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন নিপু।

পরে শনিবার (২১ আগস্ট) জিব্রালটারের মুখোমুখি হয় নিপুর পর্তুগাল। যে ম্যাচে ব্যাট হাতে সুযোগ পেয়ে ২ বল খেলে কোনও রান করতে না পারলেও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন নিপু। চার ওভারে মাত্র ৮টি রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন সিরাজুল্লাহ খাদিম। যাতে ৯৬ রানের বিশাল জয় পায় তার দল। আজ রোববার ২টায় টুর্ণামেন্টের পঞ্চম ও নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি উভয় দল।

সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপু একজন বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং মিডিয়ার পেস বোলার হিসাবে দেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন। দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলের পক্ষে অনেক দেশ সফর করেন। বয়স ভিত্তিক দলে খেলার সময়ই অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান প্রাদেশিক প্রতিযোগিতা ডারউইন প্রিমিয়ার  লীগে ডামরিন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ পেয়ে নিপু তার জাত ছিনিয়েছিলেন।

একটি ম্যাচে তো পালমারস্টন ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে ৮৮ রান করার পাশাপাশি ৬টি উইকেটও নেন। মিডিয়ায় নিপু সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের মূল্যায়ন ছিল, “তিনি একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার ছিলেন, একটি ম্যাচের গতি পরিবর্তন করার স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল তার।’

বাংলাদেশের “হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড”-এর সাবেক কোচ শন উইলিয়ামস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, নিপু হবে বাংলাদেশের জাতীয় দলের পরবর্তী তারকা অলরাউন্ডার। উইলিয়ামসই এই তরুণকে ২০০৭ সালে ডারউইন ক্লাবের হয়ে খেলতে পাঠান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মোহামেডানের মতো দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিপু। সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও অভিষেক হয় অল্প বয়সে। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের অটোমেটিক চয়েস ছিলেন নিপু।

২০০৯ সালে ঢাকা লিগের জন্য হবিগঞ্জে নিজেকে প্রস্তুত করার সময় বলের আঘাতে চোখে আঘাত হানলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এর পর অনেক চেষ্টা আর চিকিৎসায়ও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিসিবির সহযোগিতা পেলে হয়ত পুরোপুরি নিজেকে সুস্থ করতে পারতেন বলে মনে করেন নিপু। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া এবং সতীর্থ সাকিব, তামিম আর মুশফিকের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া আর নিজের পিছিয়ে পড়া নিয়ে হতাশ হলেও এখন পর্তুগালের হয়ে সফলতা অর্জন করাই তার লক্ষ্য বলে জানান ৩৩ বছর বয়সী নিপু।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হারিয়ে যাওয়া সেই নিপু এখন পর্তুগালের ক্রিকেটার

আপডেট টাইম : ১০:৪০:৪৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২২ অগাস্ট ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মুশফিক, সাকিব ও তামিমদের সাথে অলরাউন্ডার হিসাবে যিনি সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন তার নাম সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপু। দুর্দান্ত বাঁহাতি পেস বোলার। সাথে মিডল অর্ডারে ব্যাটিং। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ছিল ব্যাপক চাহিদা। জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা এই ক্রিকেটার চুক্তিবদ্ধ ছিলেন বিসিবির সাথেও।

কিন্তু একটি ইনজুরির কারণে থমকে যায় হবিগঞ্জ থেকে বেড়ে ওঠা এই ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার। গ্রামের মাঠে মারুতি বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বাম চোখে আঘাত পান নিপু, আর এতেই যেন থেমে যায় সবকিছু।

বিসিবি থেকে চিকিৎসার যথাযথ উদ্যোগ না নেয়ায় হতাশায় ক্রিকেট ছেড়ে জীবিকার তাগিদে এক সময় দেশ ত্যাগ করে আশ্রয় নেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর দেশে। জাত ক্রিকেটার হওয়ায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে ক্রিকেট খেলে এখন তিনি পর্তুগাল জাতীয় দলেরও খেলোয়াড়। তারই এক সময়কার সতীর্থ মুশফিক, সাকিব ও তামিমের ক্যারিয়ারের অর্জন যেখানে আকাশ ছোঁয়া, সেখানে একই পর্যায়ের খেলোয়াড় হয়েও এখন তিনি ক্রিকেট খেলতে পারার আনন্দেই তৃপ্তি খুঁজে পান।

গত ১৯ আগস্ট পর্তুগালের আলবারগারিয়াতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপুর। যে ম্যাচে মাল্টার বিপক্ষে পর্তুগাল জয়লাভ করে ৬ উইকেটে। যাতে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি তাকে, তবে পর্তুগালের পক্ষে ৪ ওভারে ২৮ রানে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন নিপু।

পরে শনিবার (২১ আগস্ট) জিব্রালটারের মুখোমুখি হয় নিপুর পর্তুগাল। যে ম্যাচে ব্যাট হাতে সুযোগ পেয়ে ২ বল খেলে কোনও রান করতে না পারলেও বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন নিপু। চার ওভারে মাত্র ৮টি রান দিয়ে ১টি উইকেট নেন সিরাজুল্লাহ খাদিম। যাতে ৯৬ রানের বিশাল জয় পায় তার দল। আজ রোববার ২টায় টুর্ণামেন্টের পঞ্চম ও নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি উভয় দল।

সিরাজুল্লাহ খাদিম নিপু একজন বাঁহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান এবং মিডিয়ার পেস বোলার হিসাবে দেশের সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ছিলেন। দেশের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হতো। বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক দলের পক্ষে অনেক দেশ সফর করেন। বয়স ভিত্তিক দলে খেলার সময়ই অসাধারণ নৈপুণ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান প্রাদেশিক প্রতিযোগিতা ডারউইন প্রিমিয়ার  লীগে ডামরিন ক্রিকেট ক্লাবের পক্ষে খেলার সুযোগ পেয়ে নিপু তার জাত ছিনিয়েছিলেন।

একটি ম্যাচে তো পালমারস্টন ক্রিকেট ক্লাবের বিরুদ্ধে ৮৮ রান করার পাশাপাশি ৬টি উইকেটও নেন। মিডিয়ায় নিপু সম্পর্কে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদের মূল্যায়ন ছিল, “তিনি একজন দুর্দান্ত অলরাউন্ডার ছিলেন, একটি ম্যাচের গতি পরিবর্তন করার স্বাভাবিক ক্ষমতা ছিল তার।’

বাংলাদেশের “হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াড”-এর সাবেক কোচ শন উইলিয়ামস ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, নিপু হবে বাংলাদেশের জাতীয় দলের পরবর্তী তারকা অলরাউন্ডার। উইলিয়ামসই এই তরুণকে ২০০৭ সালে ডারউইন ক্লাবের হয়ে খেলতে পাঠান। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মোহামেডানের মতো দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন নিপু। সিলেট বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটেও অভিষেক হয় অল্প বয়সে। বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলের অটোমেটিক চয়েস ছিলেন নিপু।

২০০৯ সালে ঢাকা লিগের জন্য হবিগঞ্জে নিজেকে প্রস্তুত করার সময় বলের আঘাতে চোখে আঘাত হানলে সবকিছু শেষ হয়ে যায়। এর পর অনেক চেষ্টা আর চিকিৎসায়ও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিসিবির সহযোগিতা পেলে হয়ত পুরোপুরি নিজেকে সুস্থ করতে পারতেন বলে মনে করেন নিপু। বাংলাদেশ জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ না হওয়া এবং সতীর্থ সাকিব, তামিম আর মুশফিকের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া আর নিজের পিছিয়ে পড়া নিয়ে হতাশ হলেও এখন পর্তুগালের হয়ে সফলতা অর্জন করাই তার লক্ষ্য বলে জানান ৩৩ বছর বয়সী নিপু।