বহুজনের প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে অহংকার বোধ করি

ড.গোলসান আরা বেগমঃ কারো কারো চোখ রাঙালি,নারীর ক্ষতায়নের অবমূল্যায়ন দেখে অবাক হই। কাকে বলবো নারীর দুর্ভাগ্যের কথা। কে দাঁড়ারে পাশে, বলবে এগিয়ে যাও আমরা আছি পাশে। বরং তুচ্ছ,তাচ্ছিল্য করে, অনাকাঙ্খিত অপবাদ দিয়ে মসৃণ চলার পথকে করে কন্টকাকীর্ন। মেধার স্ফুরন ঘটাবো কি ভাবে। বহু প্রতিকূলতার পাহাড় ভেঙ্গে করছি লড়াই কচু পাতার জলে ভেসে। বহু জনের প্রতিহিংসার আগুনে পুড়ে অহংকার বোধ করি। আমার মধ্যে মেধার আলো আছে বলেই নেভানোর নেশায় মেতে ওঠে। যে যা করে করুক,আমি আড়াআড়ি পথে হাঁটবোই।
মানুষ কতো হিংসুটে ও কৃপন, আমার নামের পুর্বে দুইটি শব্দ ডক্টরেট ও অধ্যক্ষ, অনেকেই মেনে নিতে পারছে না। কোন সভায় বা সেমিনারে পরিচিতি পর্বে আমার নামটি উপস্থাপনের সময়, কোন লিখা প্রকাশ করার সময় শব্দ দুইটি কেটে দেয়।কেন এই অবমূল্যায়ন, বিবেক বোধের ছন্দপতন ?
আমি তো অনেক শ্রম ঘাম ব্যয় করে অর্জন করেছি। নিজেরা চেষ্টা করে দেখুন তো অর্জন করতে পারেন কি না। বহুজনের চোখের হাব ভাব দেখে বুঝে গেছি — আমার মেধা, দক্ষতা,প্রতিভার প্রতিফলন আমার চলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তারা তৈরী করছে নানা প্রতিবন্ধকতার দেয়াল।সব সময় করছে আমার দক্ষতা,কর্মক্ষমকে আড়াল করার চেষ্টা।মেয়েরা মেধার বিকাশ ঘটাবে কি ভাবে।
ওরা ভয় পাচ্ছে যদি- স্বচ্ছ,সৎ,মানবিক,ত্যাগী নেতা হিসেবে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে পরে যাই। ০৭ তারিখে ২০২১ সালে কিশোরগঞ্জ আমার নিজ জেলায় করোনার ভ্যাকসিন  টিকাদান কমর্সুচি মাঠ পর্যায়ে কতটুকু নাস্তবতা পাচ্ছে তা সরজমিনে দেখতে গিয়েছিলাম।  কেন্দ্রী কমিটির নেতৃবৃন্দের ছবি, বক্তব্য বেশ কিছু সাংবাদিক ক্যামেরায় ধারন করলো এবং সংবাদ মাধ্যমে প্রচারও করলো। কিন্তু আমার নামটি ইচ্ছেকৃত ভাবে বাদ দিলো।
আরো কতো আত্ম দহনে পুড়াচ্ছে তারা আমাকে।তারপরও মুজিব আদর্শের চর্চ্চা করে যাবো।জয় বাংলার আদর্শ বিকাশে,বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার কাজে সর্বদা হাত প্রসারিত করে কাজ করে যাবো।
 আমি নিজে প্রত্যক্ষ ভাবে খেয়াল করছি  মেয়েদের দাবিয়ে রাখার নানা পায়তারা, আর নারী ভাগ্যকে করছি গাল মন্দ। তাদের এই হীনমন্যতা গায়ে মাখি না বা প্রতিবাদ করি না। মনে মনে হাসি আর নারী ভাগ্যকে ধিক্কার জানাই। কেউ কেউ বলে নারী সমাজের দুর্দশা নিয়ে কলম চালাবেন না। তা হলে চরম খেসারত দিতে হবে।আমি কি ডরাই, যতক্ষণ কলমে কালি থাকবে, ততক্ষণ লিখবোই।
একজন নামী দামী নেতা ও আমার প্রিয় মানুষ  ৫/৬ বছর পূর্বে আমাকে বলেছিলো— মেডাম আপনার বড় বড় পদ পদবী, ডিগ্রি, মর্যাদা আপনার বড় শত্রু।
এখন তো দেখছি – সেটাই বাস্তব সত্য।
শুধু যে আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়। প্রত্যেকটা নারীই বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র নানা ভাবে অবমূল্যায়ন করছে। দম বন্ধ করা পরিবেশে তারপরও নারীজাগরন ঘটছে শুধু বাংলাদেশে নয় সারা বিশ্বে। বাড়ছে পাল্লা দিয়ে নারীর প্রতিপক্ষের দাম্ভিকতা, প্রতিবন্ধকতা। জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে,আমাদের ভাগ্যের বিড়ম্বনা আরো বাড়বে। নর্দমায় ডুবিয়ে মারবে।
মোতাহার হোসেন মোল্লা বাংলাদেশ কৃষকলীগের সভাপতি ও ছামসুল হক রেজ সাধারন সম্পাদক ছিলেন ২০১৭-২০১৯ এর দিকে। সে সময় অামি কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকীয় পরিযদের সদস্য ছিলাম।কিশোনগঞ্জ প্রেস ক্লাবে জেলা কৃষকলীগের সিনিয়র সগসভাতি ছিলাম। সেই সুবাদে ষ্টেইজে বসার ও বক্তব্য দেয়ার সুষোগ পেয়েছিলাম।  সে গ্রোগামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্নসাধারন সম্পাদক ডাঃ দিপু মনি।সেদিনও আমাকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে উপস্থাপনা করা হয়।এভাবেই বহুবার বহজায়গায় নিজেকে জবাই হতে দেখেছি।
২০২১ সালে ঢাকার ধানমন্ডি বত্রিশ নাম্বারে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয় এর জয় এর জন্ম দিন উদযাপন চলছিলো।সে দিন প্রধান অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্তিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ডঃ হাসানুল হক। এই মাননীয় মন্ত্রীর সাথে একবার ছবি ওঠানোর সুযোগ হয়েছিলো কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে কোন একটা প্রোগ্রামে। যে ছবিটি ফেইজ বুক ফেইজে ঘুরছে। করোনার ভয় আতংক উপপেক্ষা করে জন সমাবেশও হয়েছিলো যথেষ্ট।সভাপতিত্ব করছিলেণ বাংলাদেশ কুষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র।মিটিং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাধারন সম্পাদিকা এডভোকেট উন্মে কুলসুম স্মৃতি।
সে দিনও ছন্দপতন ঘটে আমাকে বক্তব্য দিতে দেবে তা জানতাম না।হঠাৎ করেই যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বিটু দা আমাকে ষ্টেইজে তুলে নিলো বক্তৃতা দেয়ার জন্য। ভুল বশত ডক্টরেট শব্দটা এনাউন্সমেন্ট থেতে বাদ পড়ে গেলো। এ ভাবে নারীকে মায়নাস করার প্রতারণা নানা অজুহাতে চলছে সর্বত্র।
আমার স্বামী টাট্টারছলে হউক বা এয়ারকি করে হউক বলেছিলো — তুমি কোন যোগ্যতায় ডক্টরেট করলে? নিরোত্তর থাকলাম।ছোট ভাই বলেছি লো বুড়ু বয়সে এসব ডিগ্রি দিয়ে কি করবে? কেন আমার কবরে লিখে রাখবে। চুড়ান্ত ভাইবা বোর্ডেও একই প্রশ্ন করেছিলো।সেখানে বলেছি –আমার বাবা মা’র কষ্টের স্বপ্ন পূরণ করলাম।
চুড়ান্ত ফলাফল নিয়ে যে দিন আমি কর্মস্থলে ফিরে গেলাম– বহুজনের চোখ কপালে ওঠে গেলো। আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলো — আজকাল টাকা দিয়ে পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া যায়।আমার চোখ গরম হলেও রাগ গিলে ফেলি মহুর্তেই।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি কেনা যায়, তা আমার জানা ছিলো না।
২২ বছর পরিশ্রম করে প্রতিষ্টিত আর এস আইডিয়েল  কলেজ, কিশোরগঞ্জ-আমাকে সম্বর্ধনা দিতে কার্পণ্য করে নি।সমস্ত কলেজের প্রঙ্গন যেন আনন্দে মেতে ওঠেছিলো শিক্ষক,ছাত্র,কর্মচারী সবাই তাদের অধ্যক্ষকে ফুলেফুলে ডুবিয়ে দিয়েছিলো। আমার আদরের সবার প্রতি রইলো কৃতঞ্জতা।আল্লাহ তোমার প্রতিও শুকরিয়া রইলো।
বড় ছেলের বউ এইচএসবিসি ব্যাংকের সহ-সভাপতি সাদিয়া নাজনিন, পারিবারিক ভাবে উইস করতে ছেয়েছিলো, কিন্তু করোনার ভয় ভীতির কারণে, তা আর হয়ে ওঠেনি।বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখা, যে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছিলো,তার জন্য তাদের কাছে আমি গভীর ভাবে কৃতঞ্জ। বাবু
সমির চন্দ সভাপতি ও এডভোকেট উন্মে কুলসুম স্মৃতি  সাধারন সম্পাদক যখন বাংলাদেশ কৃষক লীগের দায়িত্ব পান,তখন আমাকে উপদেস্টা পরিষদ এর সদস্য, বাংলাদেশ কৃষকলীগ, কেন্দীয় কমিটির মনোনয়ন দেয়া হয়। তাতে বহুজনকে দেখেখি ব্যথিত হতে। মিটিং, মিছিল এ উপদেষ্টা শব্দটা উচ্চারন করতে চাইতো না। আরো বহু অন্মান জনক অত্যাচার, আর নাই বল্লাম।
মেয়েদের শত্রুর অভাব নাই।ঘরে বাইরে কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র শত্রু।সুযোগ পেলেই কলঙ্ক লেপন করে দেয়। আমার এক কবি বন্ধু বলে দিলো — যার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই,সে কলেজের অধ্যক্ষ হয় কি ভাবে। দুটা শুদ্ধ বানান লিখতে পারে না,সে অর্জন করেছে পিএইচডি ডিগ্রি। আরো কতো বিতর্ক।
অথচ সে নিজে একটি ক্লারিক্যাল জব করে।  ঢাকা ও জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাবল মাস্টার্স, পিএইচডি ডিগ্রিটাও জাবি থেকে নিয়েছি। তারপরও অবান্তর প্রশ্ন তুলে ছড়িয়ে দেয় ফেইজ বুকের পাতায়, তখন কি আর কিছু বলার থকে? শ্রদ্ধেয় পাঠক মাফ করবেন, মরার পর সঙ্গে যাবে হাত, পা। কেন করি গুতাগুতি,বাহাদুরি।দু-আঙ্গুলের জীবন দম ফুরাইলেই টুশ।আমাদের কেন নেই সে হুশ।
কারো কথা গায়ে মাখলাম না।অতঃপর খুশীর সমাপ্তি টানলাম গাঁয়ের বাড়ীতে।গ্রামার মানুষ রসগোল্লা খেতে পছন্দ করে,তাই তাদের মুখে রসগোল্লা তুলে দিয়ে সুবার্তাটি শিশু কিশোর সবার মাঝে ছড়িয়ে দিলাম।
লেখকঃ কবি,উপদেষ্টা – বাংলাদেশ কৃষক লীগ।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর