ঢাকা ০৩:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমন হারেও মেলে আমাদের সুখ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
  • ১৩৮ বার
হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্যটা ছিল মামুলি, মাত্র ১০৫ রানের। তবে মাইটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সংগ্রহও যে উত্তেজনা ছড়াতে পারে তারই আরেকটি নাটক মঞ্চায়ন হলো মিরপুরের সেরা উইকেটে। ম্যাচের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রোমাঞ্চ টেনে সামনে আনলেন বোলাররা। মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, শরিফুল ইসলামদের দুর্দান্ত সব ডেলিভারিতে লড়াই করেই হার মেনেছে বাংলাদেশ। আর হতাশার সফরে সিরিজ হারার পর প্রথম জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথ্যু ওয়েডের দলকে এদিনও ধুঁকতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ৯ উইকেটে বাংলাদেশের করা ১০৪ রান তাড়ায় মাইটি অজিরা খুইয়েছে ৭ উইকেট, ম্যাচটিও ৩ উইকেটে জিতেছে শেষ ওভারে গিয়ে!এক ওভারেই ৩০ নেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান, তার পরও পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬৫ রানে হারায় তারা ৬ উইকেট। তবে অ্যাশটন অ্যাগারের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত শঙ্কা কাটাতে পারে তারা। আটে নেমে ২৭ বলে ২৭ রানের গুরুত্বপ‚র্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। জয়ের কাছে গিয়ে তিনি আউট হলেও দল জিতে যায় এক ওভার বাকি রেখে। তবে অল্প পুঁজির ম্যাচে সাকিবের ৪ ওভারে ৫০ রানই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল বড় পার্থক্য। নইলে এদিন মহাকাব্যিক কোনো কিছুর সাক্ষী হতে পারতো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট।

৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি আপাতত ৩-১ করল স্বাগতিকরা। হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন বাদ দিয়ে এবার মাহমুদউল্লাহর দলের সামনে ৪-০ করার সুযোগ। একই ভেন্যুতে একই সময় সিরিজের শেষ ম্যাচটি আগামীকাল।

ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ তুললেন শরীফুল ইসলাম। গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতীকী হেয়েই থাকলো যেন ছবিটি। শুরুতে জশ হ্যাজলউড, মাঝে মিচেল সোয়েপসনের পর শেষদিক অ্যাশটন অ্যাগার আর অ্যান্ড্রু টাইয়ের তোপে ১০৪ রানেই থামে বাংলাদেশ। মিরপুরে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ খেই হারিয়েছে প্রায় শুরু থেকেই। টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে আবারও। মাঝে সাকিব ভুগেছেন। দ্রæত ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ ও শামীম চেষ্টা করেছেন ক্যামিও খেলার, তবে শামীম ও নুরুল হয়েছেন ব্যর্থ।

তবে সবচেয়ে ভুগিয়েছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। প্রথম ম্যাচে ১৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯, তৃতীয় ম্যাচে ৩! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওপেনিং সমস্যা যেন কাটছেই না! সেই হিসেবে গতকাল যেন বেশ ভালো রানই এসেছে, ২৪। এমন দারুণ কোনো কিছু নয়। কিন্তু এই সিরিজের প্রেক্ষাপটে, এটিই অনেক। সিরিজে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি বলে কথা! আগের তিন ম্যাচে শুরুর জুটি সেরা ছিল ১৫ রান। তারপরই বিদায় নিয়েছেন সিরিজ জুড়েই নিজের ছায়া হয়ে থাকা সৌম্য সরকার। বিভীষিকার মতো সিরিজ কাটানো এই ওপেনার ফেরেন ১০ বলে ৮ রান করে! উইকেটে একদমই ছন্দ পাচ্ছিলেন না সাকিব। অনেকটা সময় ক্রিজে থেকেও খুঁজে পাচ্ছিলেন না টাইমিং। জশ হেইজেলউডের বলে স্কুপ করে বাউন্ডারিতে চার মেরে জেগে ওঠার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত পারলেন না টিকতে। আউট হয়েছেন ২৬ বলে ১৫ রান করে।

পরের ওভারের শেষ দুই বলে কোনো রান যোগ না করেই ফিরেছেন দুই টপ অর্ডার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সোহান। মিচেল সোয়াপসনের বলে দুজনেই পড়েন এলবিডবিøউর ফাঁদে। শেষ দিকে নেমে ১৬ বলে ২৩ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে দলকে লড়িয়ে পূঁজি এনে দেন আফিফ হোসেন।

সহজ লক্ষ্যে নেমে শেখ মেহেদীর চতুর্থ বলেই বিদায় নেন অজি কাপ্তান ওয়েড। এরপর নিজেদের কৌশল বদলে ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে তিন নম্বরে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- সøগ করা। সেই কাজটা তিনি করেন দারুণভাবে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাকিবকে পাঁচ ছক্কা মেরে দেন তিনি। রান তাড়ায় সমীকরণ একদম সহজ হয়ে যায় তখনই। কিন্তু নাটকের ছিল অনেক বাকি। মুস্তাফিজ এসে সেই ক্রিস্টিয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর খেই হারায় অজিরা। মোজেজ হেনরিকস হয়ে যান দুর্ভাগ্যজনক রান আউট। আলেক্স ক্যারি কাটার মাস্টারের সেøায়ার বুঝতে না পেরে হন এলবিডবিøউ। অজিদের আশা ভরসার প্রতীক মিচেল মার্শ শেখ মেহেদির বলে ড্রাইভে প্রলুব্ধ হয়ে ফেরেন বোল্ড হয়ে। ১৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

এত ভাল অবস্থায় থেকেও এই ম্যাচ হারলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্যাপারটা হতো চরম বিব্রতকর। দলকে সেই বিব্রতিকর দশা থেকে রক্ষা করেন দুই অ্যাস্টন- অ্যাগার ও টার্নার। সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে মহা গুরুত্বপ‚র্ণ ৩৪ রান। তাতেই বেরিয়ে যায় ম্যাচ। শরিফুল ইসলামের বলে শামীম পাটোয়ারির দারুণ ক্যাচে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার আগে ২৭ বলে ২৭ করে যান অ্যাগার। মাত্র ৯ রান করলেও টার্নার ক্রিজে থেকে খেলা শেষ করে বেরিয়েছেন।

মুস্তাফিজ এই ম্যাচেও ছিলেন দুর্দান্ত। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান দিয়ে তুলেছেন ২ উইকেট। কিন্তু এত কম রান দিয়ে ম্যাচ জেতার আশা করা যে বাড়াবাড়ি! তবে হ্যাটট্রিক জয়ে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রথম তিন ম্যাচেই। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তির অভিযান শেষ হয়নি। আপাতত চাওয়া আরও একটি জয় এবং সেই জয়ের পথে ব্যাটিংয়ের উন্নতি।

// // //

// //

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এমন হারেও মেলে আমাদের সুখ

আপডেট টাইম : ০১:০৮:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ অগাস্ট ২০২১
হাওর বার্তা ডেস্কঃ লক্ষ্যটা ছিল মামুলি, মাত্র ১০৫ রানের। তবে মাইটি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই সংগ্রহও যে উত্তেজনা ছড়াতে পারে তারই আরেকটি নাটক মঞ্চায়ন হলো মিরপুরের সেরা উইকেটে। ম্যাচের পরতে পরতে লুকিয়ে থাকা রোমাঞ্চ টেনে সামনে আনলেন বোলাররা। মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান, শরিফুল ইসলামদের দুর্দান্ত সব ডেলিভারিতে লড়াই করেই হার মেনেছে বাংলাদেশ। আর হতাশার সফরে সিরিজ হারার পর প্রথম জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথ্যু ওয়েডের দলকে এদিনও ধুঁকতে হয়েছে শেষ পর্যন্ত। ৯ উইকেটে বাংলাদেশের করা ১০৪ রান তাড়ায় মাইটি অজিরা খুইয়েছে ৭ উইকেট, ম্যাচটিও ৩ উইকেটে জিতেছে শেষ ওভারে গিয়ে!এক ওভারেই ৩০ নেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান, তার পরও পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬৫ রানে হারায় তারা ৬ উইকেট। তবে অ্যাশটন অ্যাগারের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত শঙ্কা কাটাতে পারে তারা। আটে নেমে ২৭ বলে ২৭ রানের গুরুত্বপ‚র্ণ ইনিংস খেলেন তিনি। জয়ের কাছে গিয়ে তিনি আউট হলেও দল জিতে যায় এক ওভার বাকি রেখে। তবে অল্প পুঁজির ম্যাচে সাকিবের ৪ ওভারে ৫০ রানই শেষ পর্যন্ত হয়ে গেল বড় পার্থক্য। নইলে এদিন মহাকাব্যিক কোনো কিছুর সাক্ষী হতে পারতো মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট।

৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি আপাতত ৩-১ করল স্বাগতিকরা। হোয়াইটওয়াশের স্বপ্ন বাদ দিয়ে এবার মাহমুদউল্লাহর দলের সামনে ৪-০ করার সুযোগ। একই ভেন্যুতে একই সময় সিরিজের শেষ ম্যাচটি আগামীকাল।

ইনিংসের শেষ বলে ক্যাচ তুললেন শরীফুল ইসলাম। গতকাল বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রতীকী হেয়েই থাকলো যেন ছবিটি। শুরুতে জশ হ্যাজলউড, মাঝে মিচেল সোয়েপসনের পর শেষদিক অ্যাশটন অ্যাগার আর অ্যান্ড্রু টাইয়ের তোপে ১০৪ রানেই থামে বাংলাদেশ। মিরপুরে টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়ে বাংলাদেশ খেই হারিয়েছে প্রায় শুরু থেকেই। টপ অর্ডার ব্যর্থ হয়েছে আবারও। মাঝে সাকিব ভুগেছেন। দ্রæত ফিরেছেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ ও শামীম চেষ্টা করেছেন ক্যামিও খেলার, তবে শামীম ও নুরুল হয়েছেন ব্যর্থ।

তবে সবচেয়ে ভুগিয়েছে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। প্রথম ম্যাচে ১৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৯, তৃতীয় ম্যাচে ৩! অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওপেনিং সমস্যা যেন কাটছেই না! সেই হিসেবে গতকাল যেন বেশ ভালো রানই এসেছে, ২৪। এমন দারুণ কোনো কিছু নয়। কিন্তু এই সিরিজের প্রেক্ষাপটে, এটিই অনেক। সিরিজে বাংলাদেশের সেরা উদ্বোধনী জুটি বলে কথা! আগের তিন ম্যাচে শুরুর জুটি সেরা ছিল ১৫ রান। তারপরই বিদায় নিয়েছেন সিরিজ জুড়েই নিজের ছায়া হয়ে থাকা সৌম্য সরকার। বিভীষিকার মতো সিরিজ কাটানো এই ওপেনার ফেরেন ১০ বলে ৮ রান করে! উইকেটে একদমই ছন্দ পাচ্ছিলেন না সাকিব। অনেকটা সময় ক্রিজে থেকেও খুঁজে পাচ্ছিলেন না টাইমিং। জশ হেইজেলউডের বলে স্কুপ করে বাউন্ডারিতে চার মেরে জেগে ওঠার ইঙ্গিত দিলেও শেষ পর্যন্ত পারলেন না টিকতে। আউট হয়েছেন ২৬ বলে ১৫ রান করে।

পরের ওভারের শেষ দুই বলে কোনো রান যোগ না করেই ফিরেছেন দুই টপ অর্ডার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সোহান। মিচেল সোয়াপসনের বলে দুজনেই পড়েন এলবিডবিøউর ফাঁদে। শেষ দিকে নেমে ১৬ বলে ২৩ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে দলকে লড়িয়ে পূঁজি এনে দেন আফিফ হোসেন।

সহজ লক্ষ্যে নেমে শেখ মেহেদীর চতুর্থ বলেই বিদায় নেন অজি কাপ্তান ওয়েড। এরপর নিজেদের কৌশল বদলে ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে তিন নম্বরে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। উদ্দেশ্য পরিষ্কার- সøগ করা। সেই কাজটা তিনি করেন দারুণভাবে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারে সাকিবকে পাঁচ ছক্কা মেরে দেন তিনি। রান তাড়ায় সমীকরণ একদম সহজ হয়ে যায় তখনই। কিন্তু নাটকের ছিল অনেক বাকি। মুস্তাফিজ এসে সেই ক্রিস্টিয়ানকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর খেই হারায় অজিরা। মোজেজ হেনরিকস হয়ে যান দুর্ভাগ্যজনক রান আউট। আলেক্স ক্যারি কাটার মাস্টারের সেøায়ার বুঝতে না পেরে হন এলবিডবিøউ। অজিদের আশা ভরসার প্রতীক মিচেল মার্শ শেখ মেহেদির বলে ড্রাইভে প্রলুব্ধ হয়ে ফেরেন বোল্ড হয়ে। ১৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসে বাংলাদেশ।

এত ভাল অবস্থায় থেকেও এই ম্যাচ হারলে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ব্যাপারটা হতো চরম বিব্রতকর। দলকে সেই বিব্রতিকর দশা থেকে রক্ষা করেন দুই অ্যাস্টন- অ্যাগার ও টার্নার। সপ্তম উইকেট জুটিতে আসে মহা গুরুত্বপ‚র্ণ ৩৪ রান। তাতেই বেরিয়ে যায় ম্যাচ। শরিফুল ইসলামের বলে শামীম পাটোয়ারির দারুণ ক্যাচে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার আগে ২৭ বলে ২৭ করে যান অ্যাগার। মাত্র ৯ রান করলেও টার্নার ক্রিজে থেকে খেলা শেষ করে বেরিয়েছেন।

মুস্তাফিজ এই ম্যাচেও ছিলেন দুর্দান্ত। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। ৪ ওভার বল করে মাত্র ৯ রান দিয়ে তুলেছেন ২ উইকেট। কিন্তু এত কম রান দিয়ে ম্যাচ জেতার আশা করা যে বাড়াবাড়ি! তবে হ্যাটট্রিক জয়ে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে গেছে প্রথম তিন ম্যাচেই। তবে বাংলাদেশের প্রাপ্তির অভিযান শেষ হয়নি। আপাতত চাওয়া আরও একটি জয় এবং সেই জয়ের পথে ব্যাটিংয়ের উন্নতি।

// // //

// //