ঢাকা ০২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন যুগ ধরেই খালেদা দলের চেয়ারপারসন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:১৮:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০১৬
  • ২২৫ বার

দলের চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়ার তিন যুগ পূর্তি হতে যাচ্ছে। আসছে কাউন্সিলেও খালেদা জিয়াই থাকছেন দলের প্রধান। ১৯৮৪ সালের মে মাস থেকে খালেদা জিয়া দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দলের ৫টি কাউন্সিল হয়েছে এবং প্রত্যেকবারই বেগম জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ১৯ মার্চের সম্মেলনকে ঘিরেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা হয়েছে।

বিএনপির কাউন্সিল ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন থেকে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার পর তার প্রতিষ্ঠত বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কঠিন সংকটে পড়ে। দলের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং দেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক অভ্যুথথানের মাধ্যমে উৎখাত করেন এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশে সামরিক আইন জারি করেন। এক পর্যায়ে দল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ সংকটকালে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সহসভাপতি এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালেল নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একক সংখ্যাগরিষঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়। জিয়া সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলি আসনেই বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়যুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাধানমন্ত্রীর পদ আসীন হন। উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচিন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ‍৩০ মার্চ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগের নিকট পরাজিত হয়।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংসদে বিরোধী দলে ছিলো। এরপর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

এরপর গত সংসদ নির্বাচনে দল অংশ গ্রহণ না করায় বিএনপি বর্তমানে সংসদের বাইরেই তাদের রাজনৈতিকক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তবে খালেদা জিয়াই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগষ্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইস্কান্দর মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দিনাজপুর মিশনারী স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপটেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়। খালেদা জিয়া ১৯৬৫ সাল পযন্ত দিনাজপুর ছিলেন এবং এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তার স্বামীর কর্মস্হলে গমন করেন।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

এর আগে ১৯৭৮ সালের ২৮শে আগস্ট নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

তিন যুগ ধরেই খালেদা দলের চেয়ারপারসন

আপডেট টাইম : ০৩:১৮:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০১৬

দলের চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়ার তিন যুগ পূর্তি হতে যাচ্ছে। আসছে কাউন্সিলেও খালেদা জিয়াই থাকছেন দলের প্রধান। ১৯৮৪ সালের মে মাস থেকে খালেদা জিয়া দলীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দলের ৫টি কাউন্সিল হয়েছে এবং প্রত্যেকবারই বেগম জিয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী ১৯ মার্চের সম্মেলনকে ঘিরেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না। ইতোমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়ার মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা হয়েছে।

বিএনপির কাউন্সিল ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তন থেকে জানা গেছে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যার পর তার প্রতিষ্ঠত বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কঠিন সংকটে পড়ে। দলের তৎকালীন চেয়ারম্যান এবং দেশের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক অভ্যুথথানের মাধ্যমে উৎখাত করেন এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দেশে সামরিক আইন জারি করেন। এক পর্যায়ে দল বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। এ সংকটকালে ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সহসভাপতি এবং ১৯৮৪ সালের ১০ মে চেয়ারপারসন পদে নির্বাচিত হন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালেল নির্বাচনে খালেদা জিয়ার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একক সংখ্যাগরিষঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়। জিয়া সংসদ নির্বাচনে পাঁচটি নির্বাচনী এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবগুলি আসনেই বিজয়ী হন।

১৯৯১ সালের ২০ মার্চ খালেদা জিয়া দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৯৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জয়যুক্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাধানমন্ত্রীর পদ আসীন হন। উদ্ভূত রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের লক্ষ্যে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচিন পরিচালনার জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে সন্নিবেশিত করে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ‍৩০ মার্চ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি আওয়ামী লীগের নিকট পরাজিত হয়।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সংসদে বিরোধী দলে ছিলো। এরপর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

এরপর গত সংসদ নির্বাচনে দল অংশ গ্রহণ না করায় বিএনপি বর্তমানে সংসদের বাইরেই তাদের রাজনৈতিকক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। তবে খালেদা জিয়াই দলের নেতৃত্বে রয়েছেন।

বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগষ্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইস্কান্দর মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। দিনাজপুর মিশনারী স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এস এস সি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপটেন এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়। খালেদা জিয়া ১৯৬৫ সাল পযন্ত দিনাজপুর ছিলেন এবং এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে তার স্বামীর কর্মস্হলে গমন করেন।

১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। রাষ্ট্রপতি জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহবায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯শে সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।

এর আগে ১৯৭৮ সালের ২৮শে আগস্ট নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

১৯৭৯ সালে সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ২৯৮টি আসনের মধ্যে ২০৭টিতে জয়লাভ করে।