ঢাকা ১০:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেখানে পথচলার অবলম্বন টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ মার্চ ২০১৬
  • ১২৬২ বার

বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী টাট্টু ঘোড়া। ছোট আকৃতির এই ঘোড়া আজকাল দেখতে পাওয়া যায় কমই। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত বেশকিছু জনপদের পথেঘাটে এখন টাট্টু ঘোড়ার ছড়াছড়ি। ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আনা থোবিট প্রজাতির টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি হয়ে ওঠেছে শুকনো মৌসুমে গাইবান্ধা, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ির চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াত আর পণ্য পরিবহনের প্রধান অবলম্বন।

‘চরে যাতায়াতে পাও, না হয় নাও’, এ কথাটি চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। যখন নদীগুলো পানিতে থাকে টুইটুম্বুর, তখন মানুষের অবলম্বন নৌকা; আর শুকনো মৌসুমে চলতে হয় পায়ে। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। শুকনো মৌসুমে ধু-ধু বালুচরে মানুষদের যাতায়াত ও কৃষি পণ্যসহ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি’।

একটি টাট্টু ঘোড়া দিয়ে টায়ারের মোটর চালিত চাকায় চলে এসব গাড়ি। চরের বালুর উপর দিয়ে ওই গাড়িগুলো দিব্যি চলতে পারে। প্রতিটি গাড়িতে অনায়সে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষি পণ্য পরিবহন করা যায়। এছাড়া চালকসহ ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী বালু চর পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।

বালু চর ছাড়াও এসব ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়িতে’ মেইন ল্যান্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কেও মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একটা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে পাঁকা সড়কে ৩০ মণ মালামাল টানা সম্ভব বলেও জানান ঘোড়ার গাড়ীর চালকরা।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চৈতন্য বাজার ও নিজাম খাঁ গ্রামে এসব ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি’ সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে। শুধু এ দু’টি এলাকাতেই চরাঞ্চলে চলাচলকারী ৩০টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে।

টাট্টু ঘোড়া গাড়ির চালক নজরুল পূর্বপশ্চিমকে বলেন, এসব ছোট্ট আকৃতির ‘টাট্টু ঘোড়া’ খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং মালামাল টানায় যথেষ্ট পারদর্শী। টাট্টু ঘোড়া বালুতে চলতে পারদর্শী বলে এসব অঞ্চলে এদের কদর অনেক বেশি। এসব ঘোড়া আকৃতিতে ছোট এবং এদের লেজ অনেক বড়। গাঁধার চেয়ে এদের উচ্চতা সামান্য বেশি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন একটি গাড়ি থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এর মধ্যে ঘোড়ার খাবার বাবদ ব্যয় হয় ২শ’ টাকা
দেশি ঘোড়ার তুলনায় টাট্টু ঘোড়া দামেও বেশ সস্তা। পূর্ণবয়স্ক একটি দেশি ঘোড়ার বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ হাজার থেকে একলাখ হলেও টাট্টু ঘোড়ার দাম মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে ঘোড়া চরাঞ্চলে ঘোড়া কিনতে পাওয়া যায় না। কিনতে হয় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি আর কুড়িগ্রামের খড়িবাড়ির সীমান্ত পাশ্ববর্তী হাটে। সেখানে গরু ছাগলের হাটের মত ‘টাট্টু ঘোড়ার হাট’ বসে। ভারতের বিভিন্নস্থান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে আসে এসব ঘোড়া।

বর্ষা মৌসুমে চরে নৌকা চলে বলে তাদের আয় কমে যায়। ইদানিং টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যেখানে পথচলার অবলম্বন টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি

আপডেট টাইম : ০৯:৫২:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ মার্চ ২০১৬

বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী টাট্টু ঘোড়া। ছোট আকৃতির এই ঘোড়া আজকাল দেখতে পাওয়া যায় কমই। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদী বেষ্টিত বেশকিছু জনপদের পথেঘাটে এখন টাট্টু ঘোড়ার ছড়াছড়ি। ভারত থেকে বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আনা থোবিট প্রজাতির টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি হয়ে ওঠেছে শুকনো মৌসুমে গাইবান্ধা, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ির চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের যাতায়াত আর পণ্য পরিবহনের প্রধান অবলম্বন।

‘চরে যাতায়াতে পাও, না হয় নাও’, এ কথাটি চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে খুবই প্রচলিত। যখন নদীগুলো পানিতে থাকে টুইটুম্বুর, তখন মানুষের অবলম্বন নৌকা; আর শুকনো মৌসুমে চলতে হয় পায়ে। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। শুকনো মৌসুমে ধু-ধু বালুচরে মানুষদের যাতায়াত ও কৃষি পণ্যসহ প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে ব্যবহৃত হচ্ছে ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি’।

একটি টাট্টু ঘোড়া দিয়ে টায়ারের মোটর চালিত চাকায় চলে এসব গাড়ি। চরের বালুর উপর দিয়ে ওই গাড়িগুলো দিব্যি চলতে পারে। প্রতিটি গাড়িতে অনায়সে ১৬ থেকে ২০ মণ কৃষি পণ্য পরিবহন করা যায়। এছাড়া চালকসহ ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী বালু চর পেরিয়ে তাদের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে।

বালু চর ছাড়াও এসব ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়িতে’ মেইন ল্যান্ডে এবং উপজেলা পর্যায়ের সড়কেও মালামাল পরিবহন করা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে একটা ঘোড়ায় টানা গাড়ীতে পাঁকা সড়কে ৩০ মণ মালামাল টানা সম্ভব বলেও জানান ঘোড়ার গাড়ীর চালকরা।

গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চৈতন্য বাজার ও নিজাম খাঁ গ্রামে এসব ‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়ি’ সবচাইতে বেশি চোখে পড়ে। শুধু এ দু’টি এলাকাতেই চরাঞ্চলে চলাচলকারী ৩০টি ঘোড়ার গাড়ি রয়েছে।

টাট্টু ঘোড়া গাড়ির চালক নজরুল পূর্বপশ্চিমকে বলেন, এসব ছোট্ট আকৃতির ‘টাট্টু ঘোড়া’ খুব কষ্ট সহিষ্ণু এবং মালামাল টানায় যথেষ্ট পারদর্শী। টাট্টু ঘোড়া বালুতে চলতে পারদর্শী বলে এসব অঞ্চলে এদের কদর অনেক বেশি। এসব ঘোড়া আকৃতিতে ছোট এবং এদের লেজ অনেক বড়। গাঁধার চেয়ে এদের উচ্চতা সামান্য বেশি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন একটি গাড়ি থেকে ৫শ’ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এর মধ্যে ঘোড়ার খাবার বাবদ ব্যয় হয় ২শ’ টাকা
দেশি ঘোড়ার তুলনায় টাট্টু ঘোড়া দামেও বেশ সস্তা। পূর্ণবয়স্ক একটি দেশি ঘোড়ার বর্তমান বাজার মূল্য ৮০ হাজার থেকে একলাখ হলেও টাট্টু ঘোড়ার দাম মাত্র ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। তবে ঘোড়া চরাঞ্চলে ঘোড়া কিনতে পাওয়া যায় না। কিনতে হয় দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ি আর কুড়িগ্রামের খড়িবাড়ির সীমান্ত পাশ্ববর্তী হাটে। সেখানে গরু ছাগলের হাটের মত ‘টাট্টু ঘোড়ার হাট’ বসে। ভারতের বিভিন্নস্থান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বৈধ ও অবৈধভাবে আসে এসব ঘোড়া।

বর্ষা মৌসুমে চরে নৌকা চলে বলে তাদের আয় কমে যায়। ইদানিং টাট্টু ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও কমেছে।