ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বৃহস্পতিবার (০৩ মার্চ) রাজধানীর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) মিলনায়তনে সকাল ১১টায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
ইসির উপ-সচিব মো. সামসুল আলম জানিয়েছেন, র্যাব, পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ড প্রধানকে ইতোমধ্যে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর প্রতিনিধি ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।
বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা যায়, সারাদেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউপি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছে ইসি। এক্ষেত্রে নির্বাচনের দিন সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৭ জন করে পুলিশ ও আনসারের ১৯ জন করে ফোর্স মোতায়েনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ফোর্স রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ১৯ জন করে।
তবে এ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে কার্যপত্রে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কেবল উল্লেখ আছে, ২০১১ সালের ইউপি নির্বাচনের সময় র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন, বিজিবি, কোস্ট গার্ড এবং সীমিত পরিসরে সেনাবাহিনী-নৌবাহিনীর মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখা হয়েছিল। এবার পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটেলিয়ন আনসারের সমন্বয়ে প্রতি ইউনিয়নে ১টি করে ৬৩৯টি মোবাইল ফোর্স, প্রতি তিন ইউপির জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স রাখা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রতি উপজেলায় ২টি করে র্যাবের মোবাইল টিম ও ১টি স্ট্রাইকিং টিম এবং প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোবাইল ও ১ প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে রাখার কথা ভাবা হচ্ছে। আবার উপকূলীয় অঞ্চলে প্রতি উপজেলার জন্য কোস্ট গার্ডের ২ প্লাটুন মোবাইল ফোর্স ও এক প্লাটুন স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকছে। যারা ভোটের দু’দিন আগে থেকে পরে একদিন মোট চারদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবে।
নির্বাচনে জেলা প্রশাসক প্রয়োজন মনে করলে ফোর্স পাওয়া সাপেক্ষে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করতে পারবেন। অন্যদিকে প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্রে মেটাল ডিটেক্টর স্থাপনের চিন্তা-ভাবনাও করা হচ্ছে।
কার্যপত্রে আরও উল্লেখ রয়েছে, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরদিন থেকে নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত প্রতি উপজেলায় ১ জন করে ভোটগ্রহণের আগে পরে চার দিনের জন্য তিনজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত করা হবে। এছাড়া একই সময়ে উপজেলা প্রতি একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবে।
আবার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় সেল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠনের পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির।
এছাড়া বহিরাগতদের নিষিদ্ধকরণ, বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধকরণ, রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনিটরিং সেল, ভিজিল্যান্স ও অবজারবেশন সেল টিম গঠন ছাড়াও নির্বাচনে সন্ত্রাস, মাস্তানদের দৌরাত্ম বন্ধকরণের করণীয় নির্ধারণের পরিকল্পনাও রয়েছে কার্যপত্রে।
সব মিলিয়ে অন্তত চার লাখের মতো ফোর্স নির্বাচনী মাঠে নিয়োজিত থাকবে।
ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার সহকারী সচিব আশফাকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, ৩ মার্চের বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সব বাহিনীর প্রধানদের একটি দেওয়া হয়েছে। যার সঙ্গে বৈঠকের কার্যপত্রও রয়েছে।
তবে সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারকে দেওয়া হয়েছে অনুলিপি। অর্থাৎ তিনি বৈঠকে উপস্থিত থাকতেও পারেন, না পারেন বলে মন্তব্য আশফাকুর রহমানের।
এদিকে ইউপি নির্বাচনের বৈঠকের সঙ্গেই টাঙ্গাইল-৪ আসনের উপ-নির্বাচনের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপের নির্বাচনের প্রচারণাও শুরু হচ্ছে। আগামী ২২ মার্চ প্রথম দফায় ৭৩৪ ইউপিতে ভোট হবে। এবার ছয় দফায় সারাদেশের ইউপিগুলোর ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় ৩১ মার্চ ৬৫১ ইউপিতে, তৃতীয় দফায় ২৩ এপ্রিল হবে ৭১১টিতে ও চতুর্থ দফায় ৭ মে ৭২৮টি ইউপিতে ভোট হবে। এছাড়াও পঞ্চম দফায় ২৮ মে ৭১৪টি এবং ষষ্ঠ দফায় ৪ জুন ৬৬০টি ইউপির ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি।