হাসপাতাল মর্গে ফুটফুটে চেহারার দুই শিশুর লাশ রেখে কেটে পড়েছেন তাদের বাবা-মা। এ নিয়ে রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে। কি কারণে নিজের আদরের সন্তান দুটিকে ফেলে পালালেন বাবা-মা? নিশ্চয় কোনো না কোনো ঘটনা রয়েছে। তাদের বাবা-মাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। চাইনিজ খেয়ে নয়, তাদের যে হত্যা করা হয়েছে তা ময়নাতদন্ত শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
রাজধানীর বনশ্রীতে দুই ভাই-বোন হত্যার ঘটনায় এক শিক্ষিকা, বাড়ির দুই দারোয়ান ও নিহতের এক স্বজনসহ ৪জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে র্যাব।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাদের আটক করা হয় বলে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান। তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালের মর্গে নিথর দুই শিশুর লাশ ফেলে কেটে পড়েছে তাদের বাবা-মা। শিশু ইশরাত জাহান অরনি (১৪) ও তার ভাই আলভি আমিনের (৬) ‘রহস্যজনক’ মৃত্যুর পর তাদের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে আনা হলে এ ঘটনা ঘটে।
হতভাগ্য এ শিশু দুটির বাবার নাম আমানউল্লাহ মালেক ও মা মাহফুজা মালেক। আমানউল্লাহ উত্তর বাড্ডার একজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী। তাদের গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলা শহরের আমলাপাড়া নতুন হাইস্কুলের পাশে।
মঙ্গলবার দুপুরের পর কোনো একসময়
তারা ঢামেকে সন্তানদের মরদেহ রেখেই পালিয়ে যান। দীর্ঘ সময় মৃত ভাই-বোনের মরদেহ মর্গে পড়ে থাকার পর স্বজনরা এসে লাশ নিয়ে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে মামাতো ভাই ওবায়দুলের কাছে চাবি দিয়ে বাসা ছেড়ে যান তাদের বাবা-মা। যাওয়ার সময় তারা ওবায়দুলকে বলে যান, আমরা মেডিকেলে যাচ্ছি। সেখান থেকে লাশ নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাব।
গতকাল সোমবার বিকেল ৩টায় বনশ্রীর বি-ব্লকের ৪ নম্বর রোডের ৯ নম্বর বাড়ির ৫ তলা বাসায় অরনি-আলভির অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় গৃহশিক্ষিকা শিউলি আক্তার বনশ্রীর বাসায় তাদের পড়াতে গিয়ে জানতে পারেন, অরনি ও আলভির মৃত্যু হয়েছে।
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুশরাত জাহান অরণী (১৪) ও হলিক্রিসেন্ট স্কুলের নার্সারির ছাত্র আলভী আমান (৬) সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়।
রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়ে তারা মারা গেছে বলে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে জানানো হয়। তবে শিশু দুটির ময়নাতদন্ত শেষে আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. প্রদীপ বিশ্বাস জানান, শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। নিহত দুই শিশুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, অরণীর চোখে রক্ত জমাট ও গলায় আঘাত এবং আলভীর পা ও গলায় আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।
ভিসেরা রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে জানান ডা. প্রদীপ বিশ্বাস।
এ ঘটনার পর পুলিশ প্রথমে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ও প্রধান বাবুর্চিসহ তিনজনকে আটক করে। ওই রেস্টুরেন্টের খাবার খেয়েই দুই শিশু মারা যায় বলে প্রথমে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
রামপুরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতে রেস্টুরেন্টের ওই তিন কর্মীকে আটক করা হয়। রাতে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনার পর অরণী ও আলভীর খালা আফরোজা মালেক নীলা সোমবার রাতে জানান, অরণী ও আলভীর বাবা আমানউল্লাহ এবং মা মাহফুজা মালেক জেসমিন ও দুই শিশুসহ চারজন রোববার রাতে একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করে।
এসময় সেখানে কিছু খাবার অবশিষ্ট হলে তা প্যাকেটে করে বাসায় নিয়ে আসে। সেই খাবার দুই ভাই-বোন সোমবার দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ে। পরে বিকেলে তাদের ডাকাডাকি করা হলে কোনো সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। এরপর তাদের উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত পৌনে ৮টার দিকে তাদের মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।