ঢাকা ০৭:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইন মানছে না ৭ সমবায় প্রতিষ্ঠান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৭৯৮ বার

দেশের সাত সমবায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন না মানার অভিযোগ এনেছে সমবায় অধিদফতর।

অধিদফতর বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান ‘সমবায় সমিতি ২০০১’ এর ২৩ (ক ও খ) ধারায় অনুমাদন নিলেও আইনকে তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা করছে। নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করছে গ্রাহকদের। এমনকি বেআইনিভাবে ঢাকার বাইরে একাধিক শাখা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এক পরিদর্শনে এর সত্যতাও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিষ্ঠানগুলো সমবায় অধিদফতরের অধীনে হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি দিয়েছে। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির জবাব দেয়নি সমবায় অধিদফতর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের একটি পরিদর্শন টিম ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড’র চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা এবং বারৈয়ারাবাদ শাখা পরিদর্শন করে। এ সময় অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার, লাইসেন্স ছাড়া শাখা পরিচালনা, চেক ইস্যু, ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম, ইন্টার ব্রাঞ্চ (শাখা) লেনদেন, নন-এমআইসিআর চেকসহ অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরে কোনো শাখা করা যাবে না, এমন নিয়মের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার বাইরে ১১১ টি শাখা রয়েছে।

সমবায় সমিতি আইন ২০০১ এর ২৩ (ক ও খ) ধারা অনুযায়ী, সমবায় অধিদফতর থেকে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো নামের শেষে ব্যাংক শব্দ কোনোভাবেই লিখতে পারবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা, চেক ইস্যু ও আন্তঃশাখা লেনদেন করতে পারবে না। একটির বেশি শাখা থাকবে না।

২০১৩ সালে সংশোধিত সমবায় আইনে বলা আছে, নিবন্ধিত বা নিবন্ধনের জন্য প্রস্তাবিত কোনো সমবায় সমিতির নামের সঙ্গে কমার্স, ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট, কমার্শিয়াল ব্যাংক, লীজিং, ফাইন্যান্সিং বা সমর্থক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো সমিতি ইতোমধ্যে এরূপ নামে নিবন্ধিত হলে এ বিধান কার্যকর হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নাম সংশোধন করে নিবন্ধককে অবহিত করতে হবে।

১২ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এই ধারা কোনো রকম লঙ্ঘন করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভের দুইটি শাখা পরিদর্শনের ভিত্তিতে গত ২৩ ডিসেম্বর সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মফিজুল ইসলামের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চিঠিতে বলা হয়, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অন্য যেসব সমবায় প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয় ওই চিঠিতে।

কিন্তু এক মাসের বেশি সময় পার হলেও সমবায় সমিতির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির কোনো জবাবও দেয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে বেআইনিভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে পরিচালিত সমবায় সমিতির তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমবায় অধিদফতরকে একটি চিঠি দেয়। যার স্মারক নম্বর-বিআরপিডি (পি-২) ৭৮২(১)/২০১৫-৪৪২১।

সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক ও নিবন্ধক মো. মফিজুল ইসলাম ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানকে চিঠিটির জবাব দেন। এতে বলা হয়, সাতটি সমবায় প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে। এগুলো হলো-দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট লিমিটেড (সাবেক এসিসিএফ ব্যাংক), দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, ক্রিসেন্ট কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটি ব্যাংক লিমিটেড এবং আদর্শ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা পূর্বপশ্চিমকে জানান, কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। এটা সমবায় অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা পরিদর্শনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে চিঠি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যারা অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক মাসেও জবাব না আসায় শিগগিরি আরেকটি চিঠি দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমবায় অধিদফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি বৈঠক হয়েছে। একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। দ্রুত অভিযোগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আইন মানছে না ৭ সমবায় প্রতিষ্ঠান

আপডেট টাইম : ১০:২৩:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

দেশের সাত সমবায় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন না মানার অভিযোগ এনেছে সমবায় অধিদফতর।

অধিদফতর বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান ‘সমবায় সমিতি ২০০১’ এর ২৩ (ক ও খ) ধারায় অনুমাদন নিলেও আইনকে তোয়াক্কা না করেই ব্যবসা করছে। নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত প্রতারিত করছে গ্রাহকদের। এমনকি বেআইনিভাবে ঢাকার বাইরে একাধিক শাখা এবং ব্যাংকিং কার্যক্রমও পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এক পরিদর্শনে এর সত্যতাও পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিষ্ঠানগুলো সমবায় অধিদফতরের অধীনে হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একটি চিঠি দিয়েছে। তবে এক মাস পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির জবাব দেয়নি সমবায় অধিদফতর।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গেল বছরের ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের একটি পরিদর্শন টিম ‘দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড’র চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা এবং বারৈয়ারাবাদ শাখা পরিদর্শন করে। এ সময় অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার, লাইসেন্স ছাড়া শাখা পরিচালনা, চেক ইস্যু, ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম, ইন্টার ব্রাঞ্চ (শাখা) লেনদেন, নন-এমআইসিআর চেকসহ অনেক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

ঢাকার বাইরে কোনো শাখা করা যাবে না, এমন নিয়মের বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ঢাকার বাইরে ১১১ টি শাখা রয়েছে।

সমবায় সমিতি আইন ২০০১ এর ২৩ (ক ও খ) ধারা অনুযায়ী, সমবায় অধিদফতর থেকে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো নামের শেষে ব্যাংক শব্দ কোনোভাবেই লিখতে পারবে না। ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা, চেক ইস্যু ও আন্তঃশাখা লেনদেন করতে পারবে না। একটির বেশি শাখা থাকবে না।

২০১৩ সালে সংশোধিত সমবায় আইনে বলা আছে, নিবন্ধিত বা নিবন্ধনের জন্য প্রস্তাবিত কোনো সমবায় সমিতির নামের সঙ্গে কমার্স, ব্যাংক, ইনভেস্টমেন্ট, কমার্শিয়াল ব্যাংক, লীজিং, ফাইন্যান্সিং বা সমর্থক শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

কোনো সমিতি ইতোমধ্যে এরূপ নামে নিবন্ধিত হলে এ বিধান কার্যকর হওয়ার তিন মাসের মধ্যে নাম সংশোধন করে নিবন্ধককে অবহিত করতে হবে।

১২ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি এই ধারা কোনো রকম লঙ্ঘন করলে ৭ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকার অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভের দুইটি শাখা পরিদর্শনের ভিত্তিতে গত ২৩ ডিসেম্বর সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. মফিজুল ইসলামের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চিঠিতে বলা হয়, দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অন্য যেসব সমবায় প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয় ওই চিঠিতে।

কিন্তু এক মাসের বেশি সময় পার হলেও সমবায় সমিতির নিয়ন্ত্রণ সংস্থা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠির কোনো জবাবও দেয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে আরও জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে বেআইনিভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করে পরিচালিত সমবায় সমিতির তথ্য চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সমবায় অধিদফতরকে একটি চিঠি দেয়। যার স্মারক নম্বর-বিআরপিডি (পি-২) ৭৮২(১)/২০১৫-৪৪২১।

সমবায় অধিদফতরের মহাপরিচালক ও নিবন্ধক মো. মফিজুল ইসলাম ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসানকে চিঠিটির জবাব দেন। এতে বলা হয়, সাতটি সমবায় প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে। এগুলো হলো-দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স এন্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট লিমিটেড (সাবেক এসিসিএফ ব্যাংক), দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, ক্রিসেন্ট কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটি ব্যাংক লিমিটেড এবং আদর্শ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা পূর্বপশ্চিমকে জানান, কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করে না। এটা সমবায় অধিদফতর নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা পরিদর্শনের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তাদেরকে চিঠি দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, যারা অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহার করছে এবং ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এক মাসেও জবাব না আসায় শিগগিরি আরেকটি চিঠি দেয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সমবায় অধিদফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠি পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে একটি বৈঠক হয়েছে। একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। দ্রুত অভিযোগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।