ঢাকা ১২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
ইসকনের ব্যানারে আলিফকে হ/ত্যা করেছে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা: সাকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এই প্রথম যুদ্ধবিরতির পক্ষে বললেন জেলেনস্কি টাটকা রস খেতে বাগানে ভিড়, কেনা যায় বিশুদ্ধ খেজুরের গুড়ও তিন বছরেই ২৪ কোটি টাকা দুর্নীতি, দেনার ঘানি টানছে বিআরটিসি পাঠ্যবইয়ে বড় পরিবর্তন: যা বাদ পড়ছে, যা যুক্ত হচ্ছে হুট করেই বিয়ে করা, ছিলনা কোন পূর্বপরিকল্পনা: কেয়া ৪ সমুদ্রবন্দরে সতর্ক সংকেত, তিন বিভাগে বৃষ্টির আভাস ডিইএব-এর পিডব্লিউডি শাখার সভাপতি আনিসুজ্জামান, মহাসচিব বোরহান উদ্দিন ইতিহাসের এই দিনে ‘হাঁ-না ভোটে জিয়াউর রহমানের গণআস্থা লাভ করেন’ উত্তর গাজায় বড় বিমান হামলা ইসরায়েলের, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ১০০

সবকিছুতে দলীয়করণ খুব বড় ক্ষতি করছে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ৩০৫ বার

ড. কামাল হোসেন। আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ’৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ৭৩’-৭৫’ পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা। জাতিসংঘসহ জড়িত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। গণফোরাম নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাষ্ট্রের নানা সংকট উত্তরণে পথ দেখিয়েছেন, দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় পূর্বপশ্চিমের।রাজনীতির পাশাপাশি সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেছেন এই মুক্তচিন্তার মানুষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক মাহমুদ। ছবি তুলেছেন নাজমুল আহসান।

গণফোরামের বর্তমান অবস্থা কি?

ড. কামাল হোসেন: এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে গণফোরাম আছে। চেষ্টা করছে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার।

দেশের রাজনীতি দুষ্টু চক্রের হাতে বন্দি- এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। আপনার অভিমত কি?

ড. কামাল হোসেন: এই দুষ্টু চক্র থেকে বের করতে হলে প্রধান কাজ হবে- জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। দেশের গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিকভাবে সেই পাকিস্তান আমল থেকে লড়াই-সংগাম করছি। দেশের মানুষ গণতন্ত্র পেতে অসাধারণ মূল্য দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলো, গণতন্ত্র আসলো। প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র যাতে আমাদের ভুলে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। সংবিধানেও পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।

শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?

ড. কামাল হোসেন: দেশে একটা বিভক্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই কম-বেশি চলে আসছে। আমরা যাতে সফল হতে না পারি সেজন্য সব সময়ই বিভক্তি তৈরি করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা লালন করে আঞ্চলিক বিভক্তি করে আমাদের আলাদা করে রাখা হলো। এর মাধ্যমে কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপরে খবরদারি করতে পারে। এক কথায়, বিভক্তিমূলক চিন্তার কারণেই আমরা এগুতে পারছি না।
এক্ষেত্রে গণফোরাম কি ভূমিকা রাখতে পারে?

ড. কামাল হোসেন: আমাদের জন্ম থেকেই বলে যাচ্ছি, গণফোরাম সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মানুষকে সচেতন করে দেশের শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার উপযোগি করে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি পালন করি আমরা, যাতে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

জনগণ তো আপনাদের ডাকে সেরকম সাড়া দিচ্ছে না। এর পেছনে কি কারণ?

ড. কামাল হোসেন: সাড়া দিচ্ছে না- বলা যাবে না। আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দল থেকে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠার পরে দেশকে অনেকবার অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশকে স্বাভাবিক রাখতে গণফোরাম সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যেমন- ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচনের মধ্যেমে দেশকে অন্যপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। সেক্ষেত্রে তুমুল আন্দোলনের ফলেই ২০০৮ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলো। ভোটার লিস্ট সংক্রান্ত জটিলতায় আইনি লড়াইয়েও আমরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। এছাড়া ইয়াজ উদ্দিন সাহেবের পদত্যাগের পেছনে জনগণের একটা সক্রিয় আন্দোলন ও আইনী লড়াই ছিলো। যেখানে গণফোরামেরও অংশগ্রহণ ছিলো।

গণফোরামের প্রধান আপনি। কিন্তু আপনাকে সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি বলা হয়। গণমানুষের নেতা ঠিক বলতে শোনা যায় না। কারণ কি?

ড. কামাল হোসেন: সিভিল সোসাইটি বলে কিছু নেই। স্বাধীনতার পক্ষে যারা সবাই সিভিল সোসাইটি। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম সাধারণ জনগনই করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাতে সমর্থন দিয়েছে। কেউ কেউ সিভিল সোসাইটি বলে আমাদের আলাদা করতে চান। এটা রুগ্ন রাজনীতির অবদান। আসলে সবাই মিলেই জনগণ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কিছু মানুষ প্রচেষ্টা করেন মাত্র। প্রকৃতপক্ষে সুস্থ, সবল ও সচেতন নাগরিক মানেই সিভিল সোসাইটি।

আপনার মতে ¯স্বাধীনতার মানে কি?

ড. কামাল হোসেন: স্বাধীনতার মানে হলো প্রজারা ক্ষমতার মালিক ও অংশ। একটি রাষ্ট্র স্বাধীন হলে গুণগত পরিবর্তন হয়। স্বাধীনতার ফলেই বিভিন্ন দেশে জনগণ অধিকার পেয়েছে, সংগঠিত, সোচ্চার ও সচেতন হয়েছে। ফলে তারা নিজের ও দেশের কল্যাণে সফলতা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পেরেছে। আর যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়, বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত হয়; এটা সমাজ রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থার জন্য চরম ক্ষতিকর এবং গণতন্ত্রের পথে বিরাট বাধা।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে দেশ কোনদিকে যাচ্ছে?

ড. কামাল হোসেন: সরকার বলছে তারা দেশকে সফলতার শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য না করে পুরোটাই জনগণের উপর ছেড়ে দিতে চাই। তারাই মূল্যয়ন করবে। তবে আমি অন্তর থেকে চাই, সরকার প্রতিটি ভালো কাজে সফল হোক। আমি চাই, সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার বাস্তবায়ন করুক।

সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন?

ড. কামাল হোসেন: এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না। জনগণ বিচার করবে। তবে সংবিধানে যেহেতু গণতন্ত্র আছে। তাই এটিকে আরো সক্রিয় করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত। জনগণের মতামতকে মূল্যয়ন করা। এক্ষেত্রে সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখুক।

মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আপনার কি মত?

ড. কামাল হোসেন: ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় সরকার বলেছিলো, এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। পরবর্তীতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে। এটি এখন উপেক্ষিত মনে হচ্ছে।

উপেক্ষিত মানে কি সরকার সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে?

ড. কামাল হোসেন: জনগণ এটা বিচার করবে। তবে একেবারে যে সরে গেছে সেটাও বলা যায় না। রাজনৈতিক ঐক্য হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতেও পারে। এজন্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

পূর্বপশ্চিম: দেশে বর্তমানে কোন ধরণের সঙ্কট রয়েছে?

ড. কামাল হোসেন: সন্ত্রাস, হত্যা, চাঁদাবাজি, দুর্ণীতি। সবচেয়ে বড় সঙ্কট আইনের শাসনের ঘাটতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

ড. কামাল হোসেন: সবকিছুতে দলীয়করণ আমাদের খুব বড়Dr-Kamal-10 ক্ষতি করছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। আর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের উচিত ছিলো জনমত যাচাই করা। একটা মৌলিক বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় জনমনে প্রশ্ন জাগে, সঠিক গণতন্ত্র দেশে আছে কী না?

এই নির্বাচনের পেছনে সরকারের উদ্দেশ কি?

ড. কামাল হোসেন: এটা জনগণই বিচার করবে। তবে আমার মত, এখনো জনগণের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। সিদ্ধান্ত বড় নয়, কিন্তু জনগণ বড়।

একটি দেশে ২-৩ টি শক্তিশালী বিরোধীদল প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বাধাটা কোথায়?

ড. কামাল হোসেন: মৌলিক অধিকার পাওয়ায় বাধা, গণতন্ত্রকে লালনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়েরই ঘাটতি। ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়াই মূল লক্ষ হিসেবে না নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা উচিত। তবে এমনিতেই ক্ষমতা আসবে।

গণফোরাম শক্তিশালী বিরোধীদল হতে কোন প্রক্রিয়ায় এগুবে?

ড. কামাল হোসেন: মানুষের কাছে গিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো, যখনই জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু হয়েছে, জনগণই আওয়াজ তুলেছে- আমরা পরিবর্তন চাই। গণফোরাম জনগণের কাছাকাছি গিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারলে আমরা গ্রহণযোগ্য বিরোধীদল হতে পারবো।

সংসদে বর্তমানে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি সম্পর্কে আপনার মূল্যয়ন কি?

ড. কামাল হোসেন: বিরোধীদল হিসেবে দলটি ভূমিকা রাখছে কিনা তা জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এজন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার।

Dr-Kamal-2পূর্বপশ্চিম: দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

ড. কামাল হোসেন: গণতন্ত্র আর পরিবারতন্ত্র এক নয়। পরিবারতন্ত্র নির্ভেশাল গণতন্ত্রের পথে বাধা।

স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে সরকারের প্রতি আপনার আহ্বান কি?

ড. কামাল হোসেন: সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশ গড়তে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা, সুশাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, অহেতুক পুলিশী হয়রানি বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। তবেই শান্তিপূর্ণ দেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসকনের ব্যানারে আলিফকে হ/ত্যা করেছে আওয়ামী লীগের গুন্ডারা: সাকি

সবকিছুতে দলীয়করণ খুব বড় ক্ষতি করছে

আপডেট টাইম : ১০:১৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

ড. কামাল হোসেন। আইনজ্ঞ, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের অন্যতম সংবিধান প্রণেতা। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ’৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ৭৩’-৭৫’ পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতা। জাতিসংঘসহ জড়িত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে। গণফোরাম নামের রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। রাষ্ট্রের নানা সংকট উত্তরণে পথ দেখিয়েছেন, দাঁড়িয়েছেন মানুষের পাশে। সম্প্রতি তার সঙ্গে কথা হয় পূর্বপশ্চিমের।রাজনীতির পাশাপাশি সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে কথা বলেছেন এই মুক্তচিন্তার মানুষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক মাহমুদ। ছবি তুলেছেন নাজমুল আহসান।

গণফোরামের বর্তমান অবস্থা কি?

ড. কামাল হোসেন: এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে গণফোরাম আছে। চেষ্টা করছে দেশ ও মানুষের জন্য কিছু করার।

দেশের রাজনীতি দুষ্টু চক্রের হাতে বন্দি- এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। আপনার অভিমত কি?

ড. কামাল হোসেন: এই দুষ্টু চক্র থেকে বের করতে হলে প্রধান কাজ হবে- জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা। দেশের গণতন্ত্রের জন্য ধারাবাহিকভাবে সেই পাকিস্তান আমল থেকে লড়াই-সংগাম করছি। দেশের মানুষ গণতন্ত্র পেতে অসাধারণ মূল্য দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলো, গণতন্ত্র আসলো। প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র যাতে আমাদের ভুলে নষ্ট না হয়ে যায় সেজন্য সবাইকেই ভূমিকা রাখতে হবে। সংবিধানেও পরিস্কারভাবে বলা হয়েছে, জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস। এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে তবে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই।

শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাধা কোথায়?

ড. কামাল হোসেন: দেশে একটা বিভক্তির রাজনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকেই কম-বেশি চলে আসছে। আমরা যাতে সফল হতে না পারি সেজন্য সব সময়ই বিভক্তি তৈরি করার ষড়যন্ত্র হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা লালন করে আঞ্চলিক বিভক্তি করে আমাদের আলাদা করে রাখা হলো। এর মাধ্যমে কোনো সংখ্যালঘু গোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠদের ওপরে খবরদারি করতে পারে। এক কথায়, বিভক্তিমূলক চিন্তার কারণেই আমরা এগুতে পারছি না।
এক্ষেত্রে গণফোরাম কি ভূমিকা রাখতে পারে?

ড. কামাল হোসেন: আমাদের জন্ম থেকেই বলে যাচ্ছি, গণফোরাম সুস্থ ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। মানুষকে সচেতন করে দেশের শাসন ব্যবস্থায় সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখার উপযোগি করে তুলতে আমরা চেষ্টা করছি। এজন্য বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি পালন করি আমরা, যাতে তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

জনগণ তো আপনাদের ডাকে সেরকম সাড়া দিচ্ছে না। এর পেছনে কি কারণ?

ড. কামাল হোসেন: সাড়া দিচ্ছে না- বলা যাবে না। আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দল থেকে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠার পরে দেশকে অনেকবার অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশকে স্বাভাবিক রাখতে গণফোরাম সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে, যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। যেমন- ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি পাতানো নির্বাচনের মধ্যেমে দেশকে অন্যপথে পরিচালিত করার ষড়যন্ত্র হয়েছিলো। সেক্ষেত্রে তুমুল আন্দোলনের ফলেই ২০০৮ সালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলো। ভোটার লিস্ট সংক্রান্ত জটিলতায় আইনি লড়াইয়েও আমরা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছি। এছাড়া ইয়াজ উদ্দিন সাহেবের পদত্যাগের পেছনে জনগণের একটা সক্রিয় আন্দোলন ও আইনী লড়াই ছিলো। যেখানে গণফোরামেরও অংশগ্রহণ ছিলো।

গণফোরামের প্রধান আপনি। কিন্তু আপনাকে সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি বলা হয়। গণমানুষের নেতা ঠিক বলতে শোনা যায় না। কারণ কি?

ড. কামাল হোসেন: সিভিল সোসাইটি বলে কিছু নেই। স্বাধীনতার পক্ষে যারা সবাই সিভিল সোসাইটি। বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম সাধারণ জনগনই করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো তাতে সমর্থন দিয়েছে। কেউ কেউ সিভিল সোসাইটি বলে আমাদের আলাদা করতে চান। এটা রুগ্ন রাজনীতির অবদান। আসলে সবাই মিলেই জনগণ। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে কিছু মানুষ প্রচেষ্টা করেন মাত্র। প্রকৃতপক্ষে সুস্থ, সবল ও সচেতন নাগরিক মানেই সিভিল সোসাইটি।

আপনার মতে ¯স্বাধীনতার মানে কি?

ড. কামাল হোসেন: স্বাধীনতার মানে হলো প্রজারা ক্ষমতার মালিক ও অংশ। একটি রাষ্ট্র স্বাধীন হলে গুণগত পরিবর্তন হয়। স্বাধীনতার ফলেই বিভিন্ন দেশে জনগণ অধিকার পেয়েছে, সংগঠিত, সোচ্চার ও সচেতন হয়েছে। ফলে তারা নিজের ও দেশের কল্যাণে সফলতা অর্জনে ভূমিকা রাখতে পেরেছে। আর যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয়, বিশেষ করে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত হয়; এটা সমাজ রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থার জন্য চরম ক্ষতিকর এবং গণতন্ত্রের পথে বিরাট বাধা।

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে দেশ কোনদিকে যাচ্ছে?

ড. কামাল হোসেন: সরকার বলছে তারা দেশকে সফলতার শিখরে নিয়ে যাচ্ছে। আমি এ বিষয়ে মন্তব্য না করে পুরোটাই জনগণের উপর ছেড়ে দিতে চাই। তারাই মূল্যয়ন করবে। তবে আমি অন্তর থেকে চাই, সরকার প্রতিটি ভালো কাজে সফল হোক। আমি চাই, সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার বাস্তবায়ন করুক।

সরকারের কোনো ব্যর্থতা দেখছেন?

ড. কামাল হোসেন: এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে চাই না। জনগণ বিচার করবে। তবে সংবিধানে যেহেতু গণতন্ত্র আছে। তাই এটিকে আরো সক্রিয় করতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত। জনগণের মতামতকে মূল্যয়ন করা। এক্ষেত্রে সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখুক।

মধ্যবর্তী নির্বাচন সম্পর্কে আপনার কি মত?

ড. কামাল হোসেন: ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় সরকার বলেছিলো, এটা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। পরবর্তীতে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেবে। এটি এখন উপেক্ষিত মনে হচ্ছে।

উপেক্ষিত মানে কি সরকার সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গেছে?

ড. কামাল হোসেন: জনগণ এটা বিচার করবে। তবে একেবারে যে সরে গেছে সেটাও বলা যায় না। রাজনৈতিক ঐক্য হলে মধ্যবর্তী নির্বাচন হতেও পারে। এজন্য সরকারকেই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

পূর্বপশ্চিম: দেশে বর্তমানে কোন ধরণের সঙ্কট রয়েছে?

ড. কামাল হোসেন: সন্ত্রাস, হত্যা, চাঁদাবাজি, দুর্ণীতি। সবচেয়ে বড় সঙ্কট আইনের শাসনের ঘাটতি ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব।

দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

ড. কামাল হোসেন: সবকিছুতে দলীয়করণ আমাদের খুব বড়Dr-Kamal-10 ক্ষতি করছে। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। আর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকারের উচিত ছিলো জনমত যাচাই করা। একটা মৌলিক বিষয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়ায় জনমনে প্রশ্ন জাগে, সঠিক গণতন্ত্র দেশে আছে কী না?

এই নির্বাচনের পেছনে সরকারের উদ্দেশ কি?

ড. কামাল হোসেন: এটা জনগণই বিচার করবে। তবে আমার মত, এখনো জনগণের মতামতের ভিত্তিতে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনা করা উচিত। সিদ্ধান্ত বড় নয়, কিন্তু জনগণ বড়।

একটি দেশে ২-৩ টি শক্তিশালী বিরোধীদল প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে বাধাটা কোথায়?

ড. কামাল হোসেন: মৌলিক অধিকার পাওয়ায় বাধা, গণতন্ত্রকে লালনে সরকার ও বিরোধী দল উভয়েরই ঘাটতি। ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়াই মূল লক্ষ হিসেবে না নিয়ে দেশ ও জনগণের সেবা করা উচিত। তবে এমনিতেই ক্ষমতা আসবে।

গণফোরাম শক্তিশালী বিরোধীদল হতে কোন প্রক্রিয়ায় এগুবে?

ড. কামাল হোসেন: মানুষের কাছে গিয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো, যখনই জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু হয়েছে, জনগণই আওয়াজ তুলেছে- আমরা পরিবর্তন চাই। গণফোরাম জনগণের কাছাকাছি গিয়ে তাদের অধিকার আদায়ে ভূমিকা রাখতে পারলে আমরা গ্রহণযোগ্য বিরোধীদল হতে পারবো।

সংসদে বর্তমানে প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টি সম্পর্কে আপনার মূল্যয়ন কি?

ড. কামাল হোসেন: বিরোধীদল হিসেবে দলটি ভূমিকা রাখছে কিনা তা জনগণের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। এজন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার।

Dr-Kamal-2পূর্বপশ্চিম: দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

ড. কামাল হোসেন: গণতন্ত্র আর পরিবারতন্ত্র এক নয়। পরিবারতন্ত্র নির্ভেশাল গণতন্ত্রের পথে বাধা।

স্থিতিশীল রাষ্ট্র গড়তে সরকারের প্রতি আপনার আহ্বান কি?

ড. কামাল হোসেন: সংবিধান অনুযায়ী সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক দেশ গড়তে জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা, সুশাসন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, অহেতুক পুলিশী হয়রানি বন্ধ করা সরকারের দায়িত্ব। তবেই শান্তিপূর্ণ দেশ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।