এরশাদকে রওশনপন্থিদের আল্টিমেটাম কাউন্সিল করলে ভাঙবে জাপা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেয়া স্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশনপন্থিদের আল্টিমেটাম শিগগিরই কার্যকর না করে আগামী ১৬ এপ্রিল কাউন্সিল করলে আবারো ভাঙনের মুখে পড়বে জাতীয় পার্টি। এমন গুঞ্জনের কথা শোনা যাচ্ছে দলটির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে।
এদিকে ১৬ এপ্রিল ঘোষিত জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে দলের চেয়ারম্যান ও পার্টির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশনপন্থি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। কাউন্সিল পণ্ড করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন বেগম রওশনপন্থি জাপার কয়েক নেতা। নাম গোপন রাখার শর্তে তারা মানবকণ্ঠকে বলেন, বেগম রওশনকে এক নম্বর কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও পার্টির মহাসচিব পরিবর্তন আনতে সম্প্রতি আল্টিমেটাম দিলেও এখন পর্যন্ত দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে কোনো ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তারা বলেন, রওশনপন্থিদের দাবি উপেক্ষা করে কাউন্সিল করার চেষ্টা হলে যথাযথভাবে জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মুজিবুল হক চুন্নু, মসিউর রহমান রাঙ্গা, ফখরুল ইমামসহ ডজনখানেক শীর্ষ নেতা।
রওশনপন্থি একাধিক নেতার সুহƒদ ও বন্ধু-বান্ধবরা জানিয়েছেন, ম্যাডাম রওশনের দাবি স্যার এরশাদ কার্যকর না করলে বিকল্পভাবে কাউন্সিল করে তাকে কঠোর জবাব দেয়া হবে। এতে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ম্যাডামপন্থি (রওশন) নেতাদের বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো লাভ হবে না। দলের লাঙ্গল প্রতীকের মালিক এরশাদ নন বেগম রওশন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শীর্ষ নেতাসহ এমপিদের যদি এরশাদ বহিষ্কার করেন, তাতে দলীয় পদ গেলেও সংসদে এমপিত্ব হারাবেন না তারা। তারা আরো বলেন, এরশাদ হচ্ছে পার্টির পরিচালনা ও সিদ্ধান্তের মালিক। আর মূলত পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মালিক বেগম রওশন। সেই কারণে জাপার নেতারা বহিষ্কার হলেও একজন এমপির পদও যাবে না। তারা আরো বলেন, কারণ সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা তিনি। প্রয়োজনে দলের চেয়ারম্যানের ঘোষিত কাউন্সিল বন্ধ করে পাল্টা কাউন্সিল করার হুমকি দেন রওশন সমর্থকরা। জিয়াউদ্দিন বাবলুর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, রওশনপন্থি নেতাদের এমপি পদ বহাল থাকলেও পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের এমপি পদ বাতিল হতে পারে। সেই প্রক্রিয়াতে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন রওশনপন্থি জাপা নেতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিনি আরো বলেন, পার্টির মধ্যে লেগে থাকা সংকট দ্রুত নিরসন না হলে আবারো ভাঙনের কবলে পড়বে দলটি।
অপরদিকে রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু দলের এমপিদের নিয়ে পার্টির চেয়ারম্যানকে চাপে রেখে দাবি আদায়ের পাশাপাশি কাউন্সিল বানচাল করতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। এমন অভিযোগ করেছেন এরশাদপন্থি নেতারা। তারা এ তথ্য জানিয়ে মানবকণ্ঠকে বলেন, ১৬ তারিখের কাউন্সিল যেন অনুষ্ঠিত না হয় সেজন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত মাঠ বা কমিউনিটি সেন্টার বরাদ্দ না দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে নানাভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে জাপার কয়েক কেন্দ্রীয় নেতা অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী ও দলটির শীর্ষ নেতাদের এ কাজে ব্যবহার করছেন রওশনপন্থিরা। এ ব্যাপারে জিয়াউদ্দিন বাবলুর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
অপরদিকে অনুষ্ঠানকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে কার্যক্রম অব্যাহত রাখছেন পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, কো- চেয়ারম্যান জিএম কাদের, দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, ঢাকা মহানগর জাপার দক্ষিণের সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং উত্তরের সভাপতি এসএম ফয়সল চিশতী, সাইদুর রহমান টেপা, মীর আবদুর সবুর আসুদ, তাজ রহমান, এরশাদের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার, পার্টির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, জাপার সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভুইয়া, যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, আলমগীর শিকদার লোটন প্রমুখ।
এদিকে রওশনপন্থিদের কোনো কথাই আমলে নিচ্ছেন না দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার দেয়া সিদ্ধান্ত এক চুল পরিমাণও নড়চড় হবে না জানিয়ে সাংবাদিকদের জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তার সব সিদ্ধান্তের প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের পূর্ণ সমর্থন আছে। তিনি দাবি করে বলেন, ‘জাপায় কোনো সংকট নেই। আমার নেতৃত্বে জাপা ঐক্যবদ্ধ। জাপা মানে এরশাদ, এরশাদ মানে লাঙ্গল, এটিই শেষ কথা। কেউ এই দল ভাঙতে পারবে না।’
এরশাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, কাউন্সিলের আগেই লেগে থাকা সব জড়তা দূর হয়ে যাবে। দলে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করার সুযোগ নেই। অবশ্য এর আগে এরশাদ একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, পার্টিতে মাত্র দুই ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে স্ত্রী রওশন ও তার মধ্যে বিভক্ত করার চেষ্টা করছেন। তারা সফল হননি। আগামীতেও হবেন না।
রওশন এরশাদকে দলের কো-চেয়ারম্যান না করা পর্যন্ত এরশাদের সভা-সমাবেশে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রওশনপন্থিরা। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করাকে কেন্দ্র করে পার্টিতে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। এর প্রভাব পড়েছে পার্টির কাউন্সিল ও ইউনিয়ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়াকে কেন্দ্র করে। এরশাদ ইউপি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে রওশনপন্থিরা এ নির্বাচনকে অনেকটা বয়কট করেছে। আর এমপিরা অসহযোগিতা করায় সব ইউপিতে প্রার্থী দিতে পারেনি দল।
পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এ বিষয়ে বলেন, নতুন করে মহাসচিবের দায়িত্ব পেয়েছি এক মাস হলো। রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আরেকটু সময় পেলে আরো ভালো করা সম্ভব হতো। তবে লক্ষণীয় বিষয় সারাদেশের নেতাকর্মীরা আজ উজ্জীবিত। সময় কম পেলেও অতীতের চেয়ে ভালো ফল পাব। তিনি আরো বলেন, পার্টির সব নেতা এরশাদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। বিভক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। স্মরণকালের কাউন্সিল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলে হাওলাদার জানান।
রওশনপন্থিদের দেয়া আল্টিমেটামের ব্যাপারে পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, যথা সময়ে সম্মেলন হবে, কে আসল না আসল তাতে কিছুই যায় না। রওশনপন্থিদের পাল্টা কাউন্সিলের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে সুনামি বা ভূমিকম্প যদি না হয় তাহলে কাউন্সিল ভণ্ডুল করার কোনো শক্তি কারো নেই। জিএম কাদের গতকাল রাতে মানবকণ্ঠকে যথাসময়ে সম্মেলন সফল করার কথা বলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর