ঢাকা ০২:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা শুরু, কৃষকের মুখে হাসি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১
  • ৩১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরে ধান কাটার সময় হলেই আগাম বন্যার ভয়ে থাকেন কৃষকরা। পাহাড়ি ঢলে প্রায়ই তলিয়ে যায় তাদের কষ্টে বোনা ফসল। তখন দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত ধান কেটে আর ঘরে তুলতে পারেন না তারা।

কিশোরগঞ্জের হাওরে এখন চলছে পুরোদমে ধান কাটার কাজ। দিন-রাত পরিশ্রম করেও ঘরে বিশাল হাওরের ধান কাটা হয়েছে মাত্র ত্রিশভাগ। এদিকে  রয়েছে প্রকৃতির চোখ রাঙানি। তাই ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে হবে কৃষকের। দ্রুত ধান কাটার তাড়া থাকলে, ধানকাটা শ্রমিকদের মজুরিও থাকে আকাশচুম্বী। উচ্চ মজুরিতে শ্রমিকরা খুশি হলেও কৃষকদের পাতে থাকে না তেমন কিছুই। এ অবস্থায় ধানকাটা যন্ত্রে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। কম সময়ে এই মেশিনে ধান কাটা, ঝাড়া, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করার মতো কর্মক্ষমতা দেখে খুশি তারা। আর এভাবেই নিরাপদ কৃষির স্বপ্নে আগ্রহ দেখাচ্ছেন হাওরের চাষিরা।

নড়াইলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধানকাটা শুরুকৃষকের আগ্রহ ও সাড়া পেয়ে কৃষি বিভাগ কিশোরগঞ্জে শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েছে কৃষকদের। যা সরকারের ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে পেয়েছেন তারা। বর্তমানে এযন্ত্রই চলছে পুরো হাওরে। লকডাউনের কারণে ধান কাটা শ্রমিকের স্বল্পতা থাকলেও এইসব যন্ত্র দারুণ কাজে লাগছে কৃষকের। আর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও হাওর ঘুরে দেখছেন যন্ত্রের কার্যকারিতা ও সুফল।

হাওরে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক এই হারভেস্টার মেশিন ব‌্যবহার শুরু করেছেন। তারা বলেন, এই মেশিনটি দিয়ে ধান কাটলে শ্রমিক ও সময় দুটোই বাঁচে। প্রতি এক একর জমির ধান কাটতে এক ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। তাছাড়া হাওরে ধান কাটার সময়ে শ্রমিক সংকট থাকেই। এ মেশিন দিয়ে শ্রমিকের ঘাটতিও মিটে যায় এবং আর্থিকভাবেও আমরা লাভবান হচ্ছি।

হাওরে হারভেস্টার মেশিন যারা পরিচালনা করছেন সেইসব চালকরা বলেন, এই মেশিনটি কেনার পর চালাতে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস আমাদের ট্রেনিংয়ের ব‌্যবস্থা করেছে। তারপর এটি শিখে চালাতে পেরে আমরা এই মেশিনটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এই যন্ত্রটি একাধারে শুকনো এবং ভেজা দুই জায়গাতেই ধান কাটতে পারে।

সিংড়ায় কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা ও মাড়াই শুরুপ্রায় এক ফুট পানি বা কাদামাটিতেও এই যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা যায়। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়াতে যদি ধান মাটিতে পড়েও যায়, সেই ধানও এই মেশিন দিয়ে অনায়াসে কাটা যায়।

তাছাড়া ধান কাটার পর মেশিন থেকেই প্রায় ২৫ মণ ধান পৃথকভাবে বস্তাবন্দিও করা যায়। মেশিনের ব‌্যবহার সঠিকভাবে করতে পারলে ভবিষ‌্যতে এর চেয়ে সহজ উপায় আর কিছুই হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, ‘ভবিষ্যতে দ্রুত ধান কাটার কাজে কম্বাইন হারভেস্টারই নির্ভরতা দেবে কৃষকদের। শ্রমিক সংকট এবং অকাল বৃষ্টির হানা এসব থেকে হাওরের চাষিরা একদিন বিপদমুক্ত হবে। কারণ এই মেশিনটি দিয়ে একাধারে চারটি কাজ করা যায়। ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বস্তাবন্দিও করা হয়। তাই এতে কৃষকদের অনেক সময় বেঁচে যায়। বর্তমানে হাওরে এ মেশিনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আশাকরি আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে একদিন ঘরে ঘরে হয়তো দেখা যাবে এই মেশিন। আর এভাবেই এক সময় হয়তো পুরোপুরি যন্ত্র নির্ভরের দিকে যাবে হাওরের কৃষিও।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা শুরু, কৃষকের মুখে হাসি

আপডেট টাইম : ১২:৫৫:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাওরে ধান কাটার সময় হলেই আগাম বন্যার ভয়ে থাকেন কৃষকরা। পাহাড়ি ঢলে প্রায়ই তলিয়ে যায় তাদের কষ্টে বোনা ফসল। তখন দুর্যোগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত ধান কেটে আর ঘরে তুলতে পারেন না তারা।

কিশোরগঞ্জের হাওরে এখন চলছে পুরোদমে ধান কাটার কাজ। দিন-রাত পরিশ্রম করেও ঘরে বিশাল হাওরের ধান কাটা হয়েছে মাত্র ত্রিশভাগ। এদিকে  রয়েছে প্রকৃতির চোখ রাঙানি। তাই ধান কেটে দ্রুত ঘরে তুলতে হবে কৃষকের। দ্রুত ধান কাটার তাড়া থাকলে, ধানকাটা শ্রমিকদের মজুরিও থাকে আকাশচুম্বী। উচ্চ মজুরিতে শ্রমিকরা খুশি হলেও কৃষকদের পাতে থাকে না তেমন কিছুই। এ অবস্থায় ধানকাটা যন্ত্রে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। কম সময়ে এই মেশিনে ধান কাটা, ঝাড়া, মাড়াই ও বস্তাবন্দি করার মতো কর্মক্ষমতা দেখে খুশি তারা। আর এভাবেই নিরাপদ কৃষির স্বপ্নে আগ্রহ দেখাচ্ছেন হাওরের চাষিরা।

নড়াইলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধানকাটা শুরুকৃষকের আগ্রহ ও সাড়া পেয়ে কৃষি বিভাগ কিশোরগঞ্জে শতাধিক কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়েছে কৃষকদের। যা সরকারের ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে পেয়েছেন তারা। বর্তমানে এযন্ত্রই চলছে পুরো হাওরে। লকডাউনের কারণে ধান কাটা শ্রমিকের স্বল্পতা থাকলেও এইসব যন্ত্র দারুণ কাজে লাগছে কৃষকের। আর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারাও হাওর ঘুরে দেখছেন যন্ত্রের কার্যকারিতা ও সুফল।

হাওরে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক এই হারভেস্টার মেশিন ব‌্যবহার শুরু করেছেন। তারা বলেন, এই মেশিনটি দিয়ে ধান কাটলে শ্রমিক ও সময় দুটোই বাঁচে। প্রতি এক একর জমির ধান কাটতে এক ঘণ্টা সময়ই যথেষ্ট। তাছাড়া হাওরে ধান কাটার সময়ে শ্রমিক সংকট থাকেই। এ মেশিন দিয়ে শ্রমিকের ঘাটতিও মিটে যায় এবং আর্থিকভাবেও আমরা লাভবান হচ্ছি।

হাওরে হারভেস্টার মেশিন যারা পরিচালনা করছেন সেইসব চালকরা বলেন, এই মেশিনটি কেনার পর চালাতে কৃষি সম্প্রসারণ অফিস আমাদের ট্রেনিংয়ের ব‌্যবস্থা করেছে। তারপর এটি শিখে চালাতে পেরে আমরা এই মেশিনটি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। এই যন্ত্রটি একাধারে শুকনো এবং ভেজা দুই জায়গাতেই ধান কাটতে পারে।

সিংড়ায় কম্বাইন হারভেস্টারে ধান কাটা ও মাড়াই শুরুপ্রায় এক ফুট পানি বা কাদামাটিতেও এই যন্ত্র দিয়ে ধান কাটা যায়। হঠাৎ ঝড়ো হাওয়াতে যদি ধান মাটিতে পড়েও যায়, সেই ধানও এই মেশিন দিয়ে অনায়াসে কাটা যায়।

তাছাড়া ধান কাটার পর মেশিন থেকেই প্রায় ২৫ মণ ধান পৃথকভাবে বস্তাবন্দিও করা যায়। মেশিনের ব‌্যবহার সঠিকভাবে করতে পারলে ভবিষ‌্যতে এর চেয়ে সহজ উপায় আর কিছুই হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, ‘ভবিষ্যতে দ্রুত ধান কাটার কাজে কম্বাইন হারভেস্টারই নির্ভরতা দেবে কৃষকদের। শ্রমিক সংকট এবং অকাল বৃষ্টির হানা এসব থেকে হাওরের চাষিরা একদিন বিপদমুক্ত হবে। কারণ এই মেশিনটি দিয়ে একাধারে চারটি কাজ করা যায়। ধানকাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বস্তাবন্দিও করা হয়। তাই এতে কৃষকদের অনেক সময় বেঁচে যায়। বর্তমানে হাওরে এ মেশিনটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আশাকরি আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে একদিন ঘরে ঘরে হয়তো দেখা যাবে এই মেশিন। আর এভাবেই এক সময় হয়তো পুরোপুরি যন্ত্র নির্ভরের দিকে যাবে হাওরের কৃষিও।’