হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকা: বাংলাদেশের পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী পৌরসভার একটি যশোর পৌরসভা। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৪ সালে। কিন্তু দেড়শ বছরেরও বেশি পুরানো এই পৌরসভার রয়েছে ৯১ কোটি দেনার দায়। আর এরই মধ্যে এই দেনা মাথায় নিয়ে দায়িত্বে বসেছেন নবনির্বাচিত মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ। তিনি দায়িত্ব নিয়েই দেনা মেটাতে ব্যয় সংকোচন নীতি অবলম্বন করতে যাচ্ছেন। এই ব্যয় সংকোচন নীতির প্রথম খড়গ গিয়ে পড়ছে মাস্টার রোলে কর্মরত অন্তত ৩০ কর্মীর ওপর। শিগগিরই এই ৩০ কর্মীর ছাঁটাই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে কর্মী ছাঁটায়ে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং কারও কারও ঠিকানায় চিঠিও পাঠানো হয়েছে
নতুন মেয়র বলছেন, অবকাঠামো উন্নয়ন অব্যাহত রাখা, অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধসহ পৌরসভার সাার্বিক উন্নয়ন তার লক্ষ্য হলেও চলতি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পুরাতন সব দেনা পরিশোধ করে যাবেন তিনি।
সূত্র মতে, গত ১৩ এপ্রিল সাবেক মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর কাছ থেকে নবনির্বাচিত মেয়র মো. হায়দার গনী খান পলাশ দায়িত্ব বুঝে নেন। ওই সময় উভয়ের সই করা পত্রে দেখা যায়, নতুন মেয়র মোট ৯০ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৩৪ টাকা দেনা নিয়ে চেয়ারে বসছেন।
পৌরসভার দেনার খাতগুলো হলো- বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ২৩ কোটি ১৭ লাখ ৩ হাজার ৩৫৪ টাকা, বেতন ভাতা ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫১২ টাকা, পিএফ ও গ্রাচ্যুইটি নিয়মিত ২১ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার ৪৮০ টাকা, অবসর ভাতা (পিএফ ও গ্রাচ্যুইটি) ৮ কোটি ৫৫ লাখ ১৫ হাজার ৪১৮ টাকা, জ্বালানি তেলের বকেয়া বিল ৭১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯৫ টাকা, ঠিকাদারি বিল বকেয়া ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭৭৮ টাকা, এডিবি মাঝারি শহর পানি প্রকল্পে দেনা ২০ কোটি টাকা, ঠিকাদারি জামানত ৬২ লাখ ২ হাজার ৯৯৬ টাকা, বকেয়া খাজনা ২ কোটি ৭৬ লাখ ৮ হাজার ৫৩১ টাকা, পৌর হেরিটেজ নির্মাণ ও পানির লাইন তৈরি (ইজিআইআইপি-৩) প্রকল্পে লোন ৫ কোটি ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, বিধি বিল খাতে দেনা ৩০ লাখ টাকা, সিডিএফ বকেয়া ১৬ লাখ ৮০ হাজার। সব মিলিয়ে মোট দেনার পরিমাণ ৯০ কোটি ১৮ লাখ ৮ হাজার ৬৩৪ টাকা।
জানা গেছে, পৌর কর্মচারীদের প্রায় চার কোটি টাকা বেতন-ভাতা বকেয়া ও পিএফ-গ্রাচ্যুইটি-অবসর ভাতা মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি টাকা বকেয়া থাকার কারণে পৌরকর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাবেক মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টুর উপর নাখোশ ছিলেন। সেজন্য নতুন মেয়র চেয়ারে বসার আগেই অনেকে তার তোষামোদ শুরু করেন এই ভেবে যে, এতে যদি তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা বা পিএফ-গ্রাচ্যুইটির কিছু পান। তবে পৌরসভার কাছে টাকা পাওনা থাকার কারণে অনেককে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হচ্ছে বলেও একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন।
এদিকে বিপুল পরিমাণ দেনা মাথায় নিয়ে চেয়ারে বসা নতুন পৌর মেয়র শুরতেই আশ্বাস দিয়েছেন যে, পৌরসভার কোনো দেনা বা বকেয়া তিনি রাখবেন না। সেজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তিনি মাস্টাররোলে কর্মরত অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করে মাসিক খরচ কমাবেন। আপাতত মাস্টার রোল ২৫ থেকে ৩০ জন কর্মচারী ছাঁটাই করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, পৌরসভায় এখন মাস্টার রোলে ১২২ জন কর্মচারী রয়েছেন। আর সাবেক মেয়র যাওয়ার আগে ৪৫ জনকে (গত কয়েক মাসের মধ্যে) এই তালিকায় যুক্ত করেছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এছাড়া এখন নিয়মিত কর্মচারী রয়েছে আড়াইশ’র বেশি। এত বিপুল কর্মীবাহিনীর বেতন-ভাতা টানার ক্ষমতা এখন যশোর পৌরসভার নেই বলে জানান মেয়র পলাশ। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, অচিরেই পৌর ঋণ শোধ হবে। এর পর আবার মাস্টার রোলে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে মেয়র হায়দার গনী খান পলাশ বলেন, ‘পৌর বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী মাস্টার রোলে নেওয়া যায়। তবে কর্মী নিয়োগের পর বেতন দিতে না পারলে তাদের নিয়ে লাভ কি?’ তিনি জানান, ছাঁটাইয়ের জন্য তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। কিন্তু তালিকা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে কেউ কেউ চিঠি পেয়েছেন। চিঠি দিয়ে কয়েকজনকে বলা হয়েছে, তাকে আর দরকার নেই। গত মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) পৌর মেয়রের সঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা দেখা করতে গিয়ে জানান, তাদের এক সাংস্কৃতিককর্মী মাস্টার রোলে কাজ করতেন; তাকে নাকি অব্যাহতি পত্র দেওয়া হয়েছে
এই কর্মী ছাঁটাইয়ে কি দেনা শোধ সম্ভব?- এমন প্রশ্নে জবাবে মেয়র জানান, আপাতত ঠিকাদারি বিল পরিশোধ করা হবে না। তাছাড়া চলতি বছর পাইপলাইনে কয়েকশ’ কোটি টাকার কাজ রয়েছে। তিনি চেষ্টা করছেন যাতে কাজগুলো দ্রুত চালু করা যায়। এ জন্য তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে। কাজগুলো শুরু হলে দেনার পরিমাণ অনেক কমে আসবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্টমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। সেখান থেকে কিছু টাকা ছাড় করানো গেলে দেনার পরিমাণ আরও কমে আসবে। হায়দার গনী খান পলাশ বলেন, ‘ঘুষ-দুর্নীতি করতে দেবো না। এতে সঠিক কাজ হবে, উন্নয়ন হবে, দেনা কমবে।’
প্রসঙ্গক্রমে মেয়র জানান, শহরের কিছু রাস্তাঘাট বাদে বিভিন্ন এলাকার রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি। সেসব এলাকার লাইটিং ব্যবস্থাও নাজুক। তিনি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে জরিপ শুরু করিয়েছেন। খুব শিগগিরই অনুন্নত রাস্তা-ড্রেন-লাইটিংয়ের কাজ শুরু হবে।