ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লকডাউনে ঘাস বেচপার না পারলি খামু কী, ঘাসের টাকায় ইফতার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১
  • ১৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলতাছে দেড় সপ্তাহ ধইরা। ওই দিন থেইক্কা কেউ কামলা নেয় না। তাই দিশেহারা হইয়া পড়ছি। ঘরে খাওন নাই, পোলাপানগো কি কইরা ইফতার করামু! পোলাপাইনরা প্রতিদিন রোজা রাখে। ইফতারের সময় অইলে ওদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তাই যমুনার চর থেইক্কা ঘাস তুইল্যা বাজারে বেচবার আনছি। তাও নেয় না। এই ঘাস বেইচা যে টেহা পামু পোলাপানদের জন্য বুড, মুড়ি আর খেজুর কিনা নিয়া বাইত্তে যামু ।

উৎকণ্ঠা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ী এলাকার আয়নাল নামে এক অসহায় দিনমজুর। তিনি জানান- ‘দিনে কামলা দিয়ে মজুরি পেতাম ৪০০ টাকা। করোনার কারণে দিনমজুরির কাজ চলে না। এদিকে, কিস্তির চাপ। লকডানে ঠিকমতো ভাত জুটে না। কচুর লতি-শাক ভর্তায় পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিনপার করছি এবং রোজা রেখে যাচ্ছি। কিন্তু ইফতারের সময় হলে পানি দিয়েই ইফতার করতে হয় অনেক সময়। তাই সংসার চালাতে হাট-বাজারে ঘাস বিক্রি করে আসছি।’

করোনাভাইরাইসের কারণে শুধু আয়নাল নয়, রমজান আলী, বেলাল হোসেন ও রহিম আলীর মতো আরও অনেকেই ঘাস বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন। সরেজমিনে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা (বাসস্ট্যান্ড মোড়) বাজারে আয়নালকে ঘাস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া পাথাইলকান্দি, সিরাকান্দি ও ন্যাংড়া বাজারেও ঘাস বিক্রির চিত্র দেখা গেছে। তারা বলেন- লকডাউনে রোজগারের পথ না থাকায় সংসার চালাতে এবং পেটের দায়ে ঘাস বিক্রি করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলেন- ‘লকডাউনের কারণে শ্রমজীবি মানুষদের কামাই প্রায়ই বন্ধ। থমকে গেছে তাদের জনজীবন। সারাদিনে কামলা দিয়ে ৪’শ থেকে ৪’শ ৫০ টাকা মজুরি পেত। তা দিয়ে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু লকডাউনের কারণে সংসার খরচ চালাতে তারা ঘাস বিক্রি করছেন। এক আঁটি ঘাস বিক্রি করেন ১০ টাকা বা তারও বেশি। সারাদিনে ১০০ থেকে ১’শ ৫০ টাকা বিক্রি করতে পারেন।’ তারা আরও বলেন- এবার করোনায় লকডাউনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখন পর্যন্ত অসহায়দের কোন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। অসহায় কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার দাবিও করেন তারা।’

এসব অসহায় কর্মহীন মানুষদের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার জানান- ‘যারা ঘাস বিক্রি করেন তাদের চেয়ে অনেক কর্মহীন মানুষ রয়েছে। এ ইউনিয়নে রাস্তার পাশে বসবাস করে আসছেন অনেক কর্মহীন মানুষ। অসহায়-কর্মহীন মানুষদের জন্য এখনো ত্রাণ দেয়া শুরু করেনি। তবে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

লকডাউনে ঘাস বেচপার না পারলি খামু কী, ঘাসের টাকায় ইফতার

আপডেট টাইম : ০৩:২৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন চলতাছে দেড় সপ্তাহ ধইরা। ওই দিন থেইক্কা কেউ কামলা নেয় না। তাই দিশেহারা হইয়া পড়ছি। ঘরে খাওন নাই, পোলাপানগো কি কইরা ইফতার করামু! পোলাপাইনরা প্রতিদিন রোজা রাখে। ইফতারের সময় অইলে ওদের মুখের দিকে তাকানো যায় না। তাই যমুনার চর থেইক্কা ঘাস তুইল্যা বাজারে বেচবার আনছি। তাও নেয় না। এই ঘাস বেইচা যে টেহা পামু পোলাপানদের জন্য বুড, মুড়ি আর খেজুর কিনা নিয়া বাইত্তে যামু ।

উৎকণ্ঠা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের কোনাবাড়ী এলাকার আয়নাল নামে এক অসহায় দিনমজুর। তিনি জানান- ‘দিনে কামলা দিয়ে মজুরি পেতাম ৪০০ টাকা। করোনার কারণে দিনমজুরির কাজ চলে না। এদিকে, কিস্তির চাপ। লকডানে ঠিকমতো ভাত জুটে না। কচুর লতি-শাক ভর্তায় পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকম দিনপার করছি এবং রোজা রেখে যাচ্ছি। কিন্তু ইফতারের সময় হলে পানি দিয়েই ইফতার করতে হয় অনেক সময়। তাই সংসার চালাতে হাট-বাজারে ঘাস বিক্রি করে আসছি।’

করোনাভাইরাইসের কারণে শুধু আয়নাল নয়, রমজান আলী, বেলাল হোসেন ও রহিম আলীর মতো আরও অনেকেই ঘাস বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন। সরেজমিনে বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা (বাসস্ট্যান্ড মোড়) বাজারে আয়নালকে ঘাস বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া পাথাইলকান্দি, সিরাকান্দি ও ন্যাংড়া বাজারেও ঘাস বিক্রির চিত্র দেখা গেছে। তারা বলেন- লকডাউনে রোজগারের পথ না থাকায় সংসার চালাতে এবং পেটের দায়ে ঘাস বিক্রি করছেন তারা।

স্থানীয়রা বলেন- ‘লকডাউনের কারণে শ্রমজীবি মানুষদের কামাই প্রায়ই বন্ধ। থমকে গেছে তাদের জনজীবন। সারাদিনে কামলা দিয়ে ৪’শ থেকে ৪’শ ৫০ টাকা মজুরি পেত। তা দিয়ে সংসার চলতো তাদের। কিন্তু লকডাউনের কারণে সংসার খরচ চালাতে তারা ঘাস বিক্রি করছেন। এক আঁটি ঘাস বিক্রি করেন ১০ টাকা বা তারও বেশি। সারাদিনে ১০০ থেকে ১’শ ৫০ টাকা বিক্রি করতে পারেন।’ তারা আরও বলেন- এবার করোনায় লকডাউনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এখন পর্যন্ত অসহায়দের কোন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেননি। অসহায় কর্মহীন মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তার দাবিও করেন তারা।’

এসব অসহায় কর্মহীন মানুষদের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আব্দুল মতিন সরকার জানান- ‘যারা ঘাস বিক্রি করেন তাদের চেয়ে অনেক কর্মহীন মানুষ রয়েছে। এ ইউনিয়নে রাস্তার পাশে বসবাস করে আসছেন অনেক কর্মহীন মানুষ। অসহায়-কর্মহীন মানুষদের জন্য এখনো ত্রাণ দেয়া শুরু করেনি। তবে দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে।