ঢাকা ১০:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রমজানের রোজা ভাঙা যাবে যেসব কারণে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১
  • ১৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা যায় :

রমজান মাসে রোজা রাখা একটি ফরজ বিধান। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজা ছেড়ে দেওয়া বা ভঙ্গ করারও অবকাশ আছে।

১. অসুস্থ হলে : অসুস্থতা মানুষের শরীর ও মনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে। ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

শর্ত হলো অসুস্থতা এমন পর্যায়ের হওয়া, যাতে ব্যক্তির বড় ধরনের ক্ষতি, কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে কোনো দ্বিনদার, আল্লাহভীরু ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোজা না রাখার পরামর্শ দিলে রোজা ছেড়ে দেওয়া যাবে। তবে পরে তা কাজা করতে হবে।

২. বার্ধক্য : ইসলামী শরিয়ত অতিশয় বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের যদি রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য না থাকে তবে তাদের না রাখা অবকাশ দিয়েছে। যদি এমন হয় যে বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ বছরের কোনো সময় (দিন ছোট বা বড় হোক, শীত বা গ্রীষ্ম হোক) রোজা কাজা করতে পারবে না, তাহলে তারা কাফফারা আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার কারণে যাদের খুব বেশি কষ্ট য় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আয়াতটি এখনো রহিত হয়নি। এমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী যাদের রোজা রাখার সামর্থ্য নেই, তারা প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়াবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

৩. গর্ভধারণ : গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী যদি নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩১৫)

তবে পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করতে হবে। আর ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তার জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।

৪. সফর : সফররত ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা না রাখার অবকাশ আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

শর্ত হলো, যতটুকু পরিমাণ সফর করলে নামাজ কসর করা বৈধ, ততটুকু সফর করা। তবে নামাজ কসর করার মতো রোজা ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক নয়; বরং ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারবে আবার তা ভাঙতেও পারবে। রোজা ভাঙলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রমজানে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৪৭)

৫. অনিবার্য কারণে : বিশেষ প্রয়োজন পূরণ ও আপতিত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। যেমন ডুবে যাওয়া বা আগুনে পোড়া ব্যক্তির চিকিৎসা রোজা ভঙ্গ না করলে করা সম্ভব হয় না। তবে এমন ব্যক্তিও পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রোজা রেখে মক্কার উদ্দেশে সফর করেছিলাম। আমরা একজন এক জায়গায় যাত্রা বিরতি দিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের শত্রুর নিকটবর্তী হয়েছ। রোজা ভঙ্গ করাই তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২০)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রমজানের রোজা ভাঙা যাবে যেসব কারণে

আপডেট টাইম : ১২:৩১:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন- হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা: আয়াত ১৮৩)

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা যায় :

রমজান মাসে রোজা রাখা একটি ফরজ বিধান। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ ও সবল মুমিনের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে রোজা ছেড়ে দেওয়া বা ভঙ্গ করারও অবকাশ আছে।

১. অসুস্থ হলে : অসুস্থতা মানুষের শরীর ও মনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং কর্মক্ষমতা নষ্ট করে। অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোজা না রাখার অবকাশ আছে। ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

শর্ত হলো অসুস্থতা এমন পর্যায়ের হওয়া, যাতে ব্যক্তির বড় ধরনের ক্ষতি, কষ্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, সুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। একইভাবে কোনো দ্বিনদার, আল্লাহভীরু ও অভিজ্ঞ চিকিৎসক রোজা না রাখার পরামর্শ দিলে রোজা ছেড়ে দেওয়া যাবে। তবে পরে তা কাজা করতে হবে।

২. বার্ধক্য : ইসলামী শরিয়ত অতিশয় বৃদ্ধ নারী ও পুরুষের যদি রোজা রাখার শারীরিক সামর্থ্য না থাকে তবে তাদের না রাখা অবকাশ দিয়েছে। যদি এমন হয় যে বৃদ্ধ নারী ও পুরুষ বছরের কোনো সময় (দিন ছোট বা বড় হোক, শীত বা গ্রীষ্ম হোক) রোজা কাজা করতে পারবে না, তাহলে তারা কাফফারা আদায় করবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘রোজার কারণে যাদের খুব বেশি কষ্ট য় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদিয়াস্বরূপ একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আয়াতটি এখনো রহিত হয়নি। এমন বৃদ্ধ পুরুষ ও নারী যাদের রোজা রাখার সামর্থ্য নেই, তারা প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন অভাবগ্রস্তকে খাবার খাওয়াবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)

৩. গর্ভধারণ : গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারী যদি নিজের ও সন্তানের ব্যাপারে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তার জন্য রোজা না রাখার অবকাশ রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা ও অর্ধেক নামাজ ছাড় দিয়েছেন এবং গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীর জন্য রোজার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ২৩১৫)

তবে পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করতে হবে। আর ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে তার জন্য রোজা ছেড়ে দেওয়া জায়েজ হবে না।

৪. সফর : সফররত ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা না রাখার অবকাশ আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হয় বা সফরে থাকে অন্য সময় ‘এই সংখ্যা’ পূরণ করতে হবে।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

শর্ত হলো, যতটুকু পরিমাণ সফর করলে নামাজ কসর করা বৈধ, ততটুকু সফর করা। তবে নামাজ কসর করার মতো রোজা ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক নয়; বরং ব্যক্তি চাইলে রোজা রাখতে পারবে আবার তা ভাঙতেও পারবে। রোজা ভাঙলে পরবর্তী সময়ে তা কাজা করে নিতে হবে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমরা রমজানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রমজানে সফর করেছি। তখন রোজাদার ব্যক্তি রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তিকে এবং রোজা ছেড়ে দেওয়া ব্যক্তি রোজাদার ব্যক্তিকে দোষারোপ করেনি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৪৭)

৫. অনিবার্য কারণে : বিশেষ প্রয়োজন পূরণ ও আপতিত বিপদের হাত থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রোজা না রাখার অবকাশ আছে। যেমন ডুবে যাওয়া বা আগুনে পোড়া ব্যক্তির চিকিৎসা রোজা ভঙ্গ না করলে করা সম্ভব হয় না। তবে এমন ব্যক্তিও পরবর্তী সময়ে রোজা কাজা করবে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রোজা রেখে মক্কার উদ্দেশে সফর করেছিলাম। আমরা একজন এক জায়গায় যাত্রা বিরতি দিলাম, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের শত্রুর নিকটবর্তী হয়েছ। রোজা ভঙ্গ করাই তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১২০)