হাওর বার্তা ডেস্কঃ কাঁঠাল গ্রীষ্ম মৌসুমের একটি জনপ্রিয় ফল। জামালপুরে গ্রামের গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে মিষ্টি রসালো জাতীয় ফল কাঁঠাল। তবে স্থানীয় বাজারে কাঁঠাল না উঠলেও আগামী ১ মাসের মধ্যে কেনা-বেচা শুরু হবে বলে জানান গাছ মালিকরা।
মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের তদারকির কারণে আশার আলো দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম জানান, জেলার সরিষাবাড়ি, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, বকশীগঞ্জ ও জামালপুর সদর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর কাঁঠাল হয়। পাহাড় থেকে পাইকাররা বাগান কিনে ট্রাকে ট্রাকে এনে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। মৌসুমের শুরুতে কাঁঠালের দাম একটু বেশি থাকলেও আমদানি শুরু হলে দাম জনসাধাণের নাগালের মধ্যে চলে আসে।
জামালপুর সদর উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের বাগান মালিক শাহ আলী বাচ্চু জানান, এখানকার কাঁঠাল মিষ্টি রসালো ও স্বাদে অতুলনীয় হওয়ার ফলে কদরও রয়েছে বেশ ভালো। চাহিদা মিটিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে এসব কাঁঠাল। ফলে কাঁঠাল গাছ মালিকদের লাভের মুখ দেখেন। এখন পর্যন্ত গাছে কাঁঠালের যে অবস্থা তাতে ভালো ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
জামালপুর সদরের নান্দিনার ছাইদুর রহমানের প্রতিটি গাছে ৪০-৫০টির মতো কাঁঠাল ধরেছে। দেখে মনে হয় কাঁঠাল গাছকে যে প্রকৃতির অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে। মাস খানেক পরেই মন কাড়ানো লোভনীয় কাঁঠাল ফলের গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠবে হাট-বাজার।
তিনি আরো জানান, ছোট বড় প্রায় সবাই কাঁঠাল পছন্দ করে। কাঁঠাল পাকা খাওয়ার পাশাপাশি এ ফল মানুষের কাছে তরকারি হিসেবেও যুগ যুগ ধরে বেশ কদর পেয়ে আসছে। কাঁঠালের বীজ প্রোটিন সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর একটি খাবার। কাঁচা পাকা কাঁঠালের বীজ মাংস ও সবজির সঙে রান্না করা যায়।
সরেজমিনে মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউপির ছবিলাপুর, কাহেতপাড়া, চাঁড়ালকান্দী, সগুনা, বাগবাড়ি ও খায়েরপাড়া বেশ কয়েকটি গ্রামে দেখা যায়, গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে কাঁঠাল। গ্রামগুলোর মধ্যে খালি জায়গা, পুকুরপাড়, রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙ্গিনায় রয়েছে অসংখ্য কাঁঠাল গাছ। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত শোভা পাচ্ছে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ জাতীয় ফল কাঁঠাল।
ঘোষেরপাড়ায় হীরা, ইমরান, কামরুল, হেলাল, জামাল, মনোয়ার, কাদেরসহ বিভিন্ন কাঁঠাল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের চেয়ে এ বছর ফলন একটু কম হলেও সাইজে অনেক বড়। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগের কবলে না পড়লে আশানুরূপ সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
সরিষাবাড়ির আওনা ইউপির জগন্নাথগঞ্জঘাট এলাকার আবু বক্কর জানান, তার বেশ কয়েকটি গাছে কাঁঠাল ধরেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা অনেকেই গাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। সুস্বাদু হওয়ায় বাড়ি থেকেই পাইকারি দরে বিক্রি করা হয়। তাছাড়া কাঁঠালের মৌসুমের শুরুতে পাশের জেলা সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চল থেকে অনেক ব্যবসায়ী এসে কিনে নিয়ে যান।
সরিষাবাড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুলাহ আল মামুন জানান, গাছ মালিকদের সর্বাধিকভাবে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে বেশ ভাল ফলন হবে বলে আশাবাদী।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন জানান, জাতীয় ফল কাঁঠালের মূল শত্রু হলো কিড়াপাকা। কোনো গাছে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়ে নষ্ট করে দেয়। এছাড়া পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গাছে মোচার আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়। এতে কোনো গাছে পোকা আক্রমণের চেষ্টা করলেও তা শুরুতেই শেষ হয়ে যায়।
বকশীগঞ্জের গাছ মালিক আল-আমিনের বাগানে প্রায় প্রতিটি গাছে কাঁঠাল ঝুলছে। এবার কাঁঠালের আকার ভিন্ন রকম। দেখতে অনেক সুন্দর। গাছে পরিমাণে একটু কম থাকার ফলে আকারে অন্য বছরের তুলনায় বড় বড়।
তিনি জানান, মৌসুমের শুরু থেকে প্রকার ভেদে বিভিন্ন আকারের কাঁঠাল বিক্রি করেন। শুরুতে দাম বেশি ও চাহিদা থাকায় প্রায় অর্ধেক কাঁঠাল তিনি চড়া দামেই বিক্রির কথা জানান। তাছাড়া কৃষি বিভাগের উৎপাদনে লক্ষ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ ও সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ভালো ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কাঁঠালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি, ভিটামিনই ক্যালসিয়াম ফলিক এসিড রয়েছে। টাটকা ফলে পটাশিয়াম ম্যাগনোশিয়াম ও আয়রনের একটি ভাল উৎস। এছাড়া পটাশিয়াম হার্টের গতি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। পাঁকা কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণ আঁশ রয়েছে। ফলে পাঁকা কাঁঠাল খেলে কুষ্ঠ কাঠিন্য থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।