ঢাকা ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
  • ২৮৭ বার

ড. আকবর আলি খান। অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজবিদ। অধ্যাপনা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগোনিউজ২৪ ডট কমের। রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতি, উন্নয়নের নানা বিষয় তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু।

চলমান রাজনীতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
ড. আকবর আলি খান : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার কোনো উন্নতি হয়নি। সঙ্কট বেড়েই চলছে বলে মনে করি। ওই নির্বাচন আইনগতভাবে সিদ্ধ হলেও গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। এমন নির্বাচন বাংলাদেশে এর আগে কখনো হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসেও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের কোনো নজির আছে বলে আমার জানা নেই।

ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে কোথায়? আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
ড. আকবর আলি খান : বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, তা সবার কাছেই পরিষ্কার। আমি মনে করি, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া। যে নির্বাচনে অধিকাংশ মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে এবং সকল আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি।

এ দাবি অনেকেই করছেন। সরকারতো আমলে নিচ্ছে না?
ড. আকবর আলি খান : আমলে নেয়া না নেয়া সরকারের ব্যাপার। আমাদের কাছে মনে হয়েছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন না দিলে বিপদ আরও বাড়বে। আর এ কারণেই নির্বাচনের কথা বলে আসছি।

বিপদের কথা বলছেন। যদি একটু পরিষ্কার করতেন?
ড. আকবর আলি খান : দেখুন, ওই নির্বাচন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতির সর্বত্রই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন দেশের নেতৃত্ব এই সমস্যা কতটুকু উপলব্ধি করে এবং কীভাবে তার সমাধান চায় সেটাই দেখার বিষয়। সমস্যার সমাধান আমাদের হাতে নয়। আমরা হয়তো সমস্যা চিহ্নিত করতে পারি।

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মানদণ্ড কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
ড. আকবর আলি খান : যে নির্বাচনে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোটার অংশ নেবে এবং প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, সেই নির্বাচনকে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য বলা যেতে পারে।

আগাম নির্বাচনের কোনো আভাস পাচ্ছেন কী না?
ড. আকবর আলি খান : আমি কোনো আভাসে বিশ্বাস রাখি না। আমি মনে করি, জাতির স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরি। আগাম নির্বাচন হবে কিনা, তার কোনো আভাস আমার কাছে নেই।

এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্য কী?
ড. আকবর আলি খান : ভবিষ্যদ্বাণী মূলত জ্যোতিষীরা করে থাকেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করেন নানা প্রবণতা লক্ষ্য করে। আমাদের রাজনীতির গণতান্ত্রিক যে প্রবণতা, তা ইতিহাসে গভীরভাবে প্রথিত। এ দেশে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা সব সময় বিদ্যমান। রাষ্ট্র, সমাজ যদি গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে যেকোনো সময় সে ধারায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে। তবে কখন প্রত্যাবর্তন ঘটবে, তা দিন তারিখ দিয়ে বলা মুশকিল। প্রত্যাবর্তন ঘটবে এটি নিশ্চিত করেই বলতে পারেন।

গণতান্ত্রিক ধারায় প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে রক্তপাতও অনিবার্য হয়ে ওঠে। এর আগে তাই হয়েছে। এবারের জন্য কী বলবেন?
ড. আকবর আলি খান : এটি বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য। সমস্যাটি আজকের নয়। জাতির জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে যেতে হয়েছে।
গণতন্ত্রের জন্য জাতির যে আকাঙ্খা, তা পূরণ করা যায়নি। আকাঙ্খা রয়েই গেছে। গণতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা। যে চারটি স্তম্ভের ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণতন্ত্র।

অনেক দেশেতো গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নকেই বড় করে দেখা হয়?
ড. আকবর আলি খান : গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে না। মানুষ উন্নয়নও চায়, গণতন্ত্রও চায়। বাংলাদেশের জন্য গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র এটি ভুলে গেলে চলবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কথা বলেন, তাদের উচিত যে কোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসা।

জাগোনিউজ : চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে অন্য কোনো শক্তির উত্থান ঘটতে পারে কী না?
ড. আকবর আলি খান : পৃথিবীর ইতিহাস বলে, যেখানে গণতন্ত্রের রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে, সেখানে মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়ে যায়। আর এর মধ্য দিয়ে উগ্রপন্থি মতবাদ হতাশাগ্রস্তদের মাঝে গুরুত্ব পায়।
সুতরাং গণতান্ত্রিক ধারায় না ফিরলে উগ্রবাদ ভয়ানক রূপ নেবে।

এক্ষেত্রে ডানপন্থার সঙ্গে তুলনা করে বামপন্থার কোনো মূল্যায়ন করবেন কী না?
ড. আকবর আলি খান : যেকোনো পন্থাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। উগ্রপন্থাকে উগ্রতা দিয়েই মূল্যায়ন করতে হয়। ডান বা বাম এখানে মূল কথা নয়। মধ্যপন্থি অর্থাৎ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের ভূমিকা হ্রাস পাবে।

এমন অবস্থার মধ্য দিয়েওতো অর্থনীতির সূচক ভালো। অনেকেই তাই মনে করেন। আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. আকবর আলি খান : দেশের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তার নায়ক হচ্ছে অশিক্ষিত মানুষ। দেশের উন্নয়নের কারিগর সাধারণ মানুষ। মেহনতি মানুষ, অর্থাৎ কৃষকরা কৃষির ফলন বাড়াচ্ছেন। প্রবাসী শ্রমিকরা বাইরে থেকে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিরলস পরিশ্রম করে পোশাক খাতকে ধরে রেখেছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করছেন।
বরং শিক্ষিত ধনীরা দেশের অর্থ লুটপাট করছেন। তারা দেশের সম্পদ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উৎপাদন করার যে সৃজনশীলতা, তা থেমে যায়নি। এ কারণেই বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

তা কি দীর্ঘ মেয়াদের?
ড. আকবর আলি খান : স্বল্প মেয়াদে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। কিন্তু মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হয় না। আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নের কথা বলি, তাহলে সবার আগে গণতন্ত্র এবং সুশাসন নিয়ে কথা বলতে হবে। আগামী পাঁচ-দশ বছরে হয়তো অর্থনীতির বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু আমরা যদি এই সময়ের মধ্যে সুশাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে অর্থনীতির যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা স্তিমিত হয়ে পড়বে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে না

আপডেট টাইম : ১২:৩৪:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

ড. আকবর আলি খান। অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, সমাজবিদ। অধ্যাপনা করছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা। মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখোমুখি হন জাগোনিউজ২৪ ডট কমের। রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনীতি, উন্নয়নের নানা বিষয় তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু।

চলমান রাজনীতি কীভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন?
ড. আকবর আলি খান : ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে যে সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে, তার কোনো উন্নতি হয়নি। সঙ্কট বেড়েই চলছে বলে মনে করি। ওই নির্বাচন আইনগতভাবে সিদ্ধ হলেও গণতান্ত্রিক দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণযোগ্য নয়। এমন নির্বাচন বাংলাদেশে এর আগে কখনো হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসেও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের কোনো নজির আছে বলে আমার জানা নেই।

ওই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যাচ্ছে কোথায়? আমাদের ভবিষ্যৎ কী?
ড. আকবর আলি খান : বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে, তা সবার কাছেই পরিষ্কার। আমি মনে করি, সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দেয়া। যে নির্বাচনে অধিকাংশ মানুষ ভোট দেয়ার সুযোগ পাবে এবং সকল আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সময়ের দাবি।

এ দাবি অনেকেই করছেন। সরকারতো আমলে নিচ্ছে না?
ড. আকবর আলি খান : আমলে নেয়া না নেয়া সরকারের ব্যাপার। আমাদের কাছে মনে হয়েছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন না দিলে বিপদ আরও বাড়বে। আর এ কারণেই নির্বাচনের কথা বলে আসছি।

বিপদের কথা বলছেন। যদি একটু পরিষ্কার করতেন?
ড. আকবর আলি খান : দেখুন, ওই নির্বাচন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতির সর্বত্রই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এখন দেশের নেতৃত্ব এই সমস্যা কতটুকু উপলব্ধি করে এবং কীভাবে তার সমাধান চায় সেটাই দেখার বিষয়। সমস্যার সমাধান আমাদের হাতে নয়। আমরা হয়তো সমস্যা চিহ্নিত করতে পারি।

নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকেই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মানদণ্ড কীভাবে নির্ধারণ করবেন?
ড. আকবর আলি খান : যে নির্বাচনে অন্তত ৬০ শতাংশ ভোটার অংশ নেবে এবং প্রতিটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, সেই নির্বাচনকে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য বলা যেতে পারে।

আগাম নির্বাচনের কোনো আভাস পাচ্ছেন কী না?
ড. আকবর আলি খান : আমি কোনো আভাসে বিশ্বাস রাখি না। আমি মনে করি, জাতির স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া জরুরি। আগাম নির্বাচন হবে কিনা, তার কোনো আভাস আমার কাছে নেই।

এই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্য কী?
ড. আকবর আলি খান : ভবিষ্যদ্বাণী মূলত জ্যোতিষীরা করে থাকেন। সমাজ বিজ্ঞানীরা বিশ্লেষণ করেন নানা প্রবণতা লক্ষ্য করে। আমাদের রাজনীতির গণতান্ত্রিক যে প্রবণতা, তা ইতিহাসে গভীরভাবে প্রথিত। এ দেশে গণতন্ত্রের আকাঙ্খা সব সময় বিদ্যমান। রাষ্ট্র, সমাজ যদি গণতন্ত্রের পথ থেকে বিচ্যুত হয়, তাহলে যেকোনো সময় সে ধারায় প্রত্যাবর্তন ঘটতে পারে। তবে কখন প্রত্যাবর্তন ঘটবে, তা দিন তারিখ দিয়ে বলা মুশকিল। প্রত্যাবর্তন ঘটবে এটি নিশ্চিত করেই বলতে পারেন।

গণতান্ত্রিক ধারায় প্রত্যাবর্তন করতে গিয়ে রক্তপাতও অনিবার্য হয়ে ওঠে। এর আগে তাই হয়েছে। এবারের জন্য কী বলবেন?
ড. আকবর আলি খান : এটি বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্য। সমস্যাটি আজকের নয়। জাতির জন্মলগ্ন থেকেই আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে যেতে হয়েছে।
গণতন্ত্রের জন্য জাতির যে আকাঙ্খা, তা পূরণ করা যায়নি। আকাঙ্খা রয়েই গেছে। গণতন্ত্র হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খা। যে চারটি স্তম্ভের ওপর রাষ্ট্র দাঁড়িয়ে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো গণতন্ত্র।

অনেক দেশেতো গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নকেই বড় করে দেখা হয়?
ড. আকবর আলি খান : গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়নের কোনো ভিত্তি থাকতে পারে না। মানুষ উন্নয়নও চায়, গণতন্ত্রও চায়। বাংলাদেশের জন্য গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র এটি ভুলে গেলে চলবে না। যারা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের কথা বলেন, তাদের উচিত যে কোনো মূল্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে আসা।

জাগোনিউজ : চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে অন্য কোনো শক্তির উত্থান ঘটতে পারে কী না?
ড. আকবর আলি খান : পৃথিবীর ইতিহাস বলে, যেখানে গণতন্ত্রের রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে, সেখানে মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়ে যায়। আর এর মধ্য দিয়ে উগ্রপন্থি মতবাদ হতাশাগ্রস্তদের মাঝে গুরুত্ব পায়।
সুতরাং গণতান্ত্রিক ধারায় না ফিরলে উগ্রবাদ ভয়ানক রূপ নেবে।

এক্ষেত্রে ডানপন্থার সঙ্গে তুলনা করে বামপন্থার কোনো মূল্যায়ন করবেন কী না?
ড. আকবর আলি খান : যেকোনো পন্থাই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। উগ্রপন্থাকে উগ্রতা দিয়েই মূল্যায়ন করতে হয়। ডান বা বাম এখানে মূল কথা নয়। মধ্যপন্থি অর্থাৎ যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের ভূমিকা হ্রাস পাবে।

এমন অবস্থার মধ্য দিয়েওতো অর্থনীতির সূচক ভালো। অনেকেই তাই মনে করেন। আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. আকবর আলি খান : দেশের যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তার নায়ক হচ্ছে অশিক্ষিত মানুষ। দেশের উন্নয়নের কারিগর সাধারণ মানুষ। মেহনতি মানুষ, অর্থাৎ কৃষকরা কৃষির ফলন বাড়াচ্ছেন। প্রবাসী শ্রমিকরা বাইরে থেকে টাকা পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছেন। গার্মেন্টস শ্রমিকরা নিরলস পরিশ্রম করে পোশাক খাতকে ধরে রেখেছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করছেন।
বরং শিক্ষিত ধনীরা দেশের অর্থ লুটপাট করছেন। তারা দেশের সম্পদ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উৎপাদন করার যে সৃজনশীলতা, তা থেমে যায়নি। এ কারণেই বাংলাদেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

তা কি দীর্ঘ মেয়াদের?
ড. আকবর আলি খান : স্বল্প মেয়াদে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা যায়। কিন্তু মধ্য বা দীর্ঘ মেয়াদে এমন ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হয় না। আমরা যদি দীর্ঘমেয়াদে উন্নয়নের কথা বলি, তাহলে সবার আগে গণতন্ত্র এবং সুশাসন নিয়ে কথা বলতে হবে। আগামী পাঁচ-দশ বছরে হয়তো অর্থনীতির বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিন্তু আমরা যদি এই সময়ের মধ্যে সুশাসন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে না পারি তাহলে অর্থনীতির যে উন্নয়ন হচ্ছে, তা স্তিমিত হয়ে পড়বে।