হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিছুদিন আগেই সব স্থানে ছিল তাদের বড় দাপট। করোনা মহামারির আতঙ্কে সাধারণ মানুষের নমুনা পরীক্ষার নামে জালিয়াতি করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন তারা। প্রভাবশালীদের নাম ভাঙিয়ে সুশীল সমাজে জায়গা করে নেন। তাদের প্রতারণার মুখোশ ফাঁস হয়ে গেলে স্থান হয় অন্ধকার কারাগারে। করোনাকালীন আলোচিত এই দুই প্রতারক হলেন সাহেদ করিম ও ডা. সাবরিনা চৌধুরী। এদের মধ্যে সাহেদ বন্দি রয়েছেন কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাধারণ সেলে আর ডা. সাবরিনা চৌধুরী হাজতি হিসেবে বন্দি রয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। কারাগারের রজনীগন্ধা সেলে ডিভিশন সুবিধা নিয়ে তিনি হাজতি জীবন পার করছেন।
কারাসূত্র জানায়, বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই দুই প্রতারকের এখন তিন বেলা খাবারের মেনু গুড়, হালুয়া, রুটি, ভাত, ডাল, মাছ, মাংস ও খিচুড়ি। তবে এদের মধ্যে ডা. সাবরিনা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ইচ্ছা করলেই ক্যান্টিনের খাবার গ্রহণ করতে পারছেন। আর কারাগারের নির্ধারিত মেনুর খাবার খেয়ে সাহেদ করিমের শরীরের মুটিয়ে যাওয়া ভাব অনেকটা কমে গেছে।
বহুমুখী প্রতারক মাফিয়া সাহেদ করিমের করোনাকালীন রিজেন্ট হাসপাতালের অভিনব প্রতারণার ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর গত ৭ জুলাই অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রামমাণ আদালত। এরপর সাহেদ পলাতক হয়ে যায়। অবশেষে ১৫ জুলাই র্যাব সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে। ইতোমধ্যে গত ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ত্র মামলায় সাহেদের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট ও সাতক্ষীরায় একাধিক মামলা বিচারাধীন। এসব মামলায় হাজিরা দিতে তাকে প্রায়ই ঐসব আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে কয়েদির পোশাক পরতে হয়েছে।
কারা সূত্র জানায়, সাধারণ সেলের একটি কক্ষে সাহেদকে একাই রাখা হয়েছে। যেন অন্য কোনো বন্দির সঙ্গে দেখা বা আলাপ-আলোচনা না করতে পারে, সেজন্য কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। অন্য সাধারণ কয়েদির মতো তার জন্য সকালের নাস্তা গুড়, হালুয়া ও রুটি দেওয়া হয়। স্বাভাবিক নিয়মে দুপুরে মাছ ও রাতে মাংস বরাদ্দ করা হয়। গত বৃহস্পতিবার তাকে চট্টগ্রামের একটি মামলায় হাজিরা দিয়ে কারাগারে আনা হয়। আগামী ৮ মার্চ সিলেটের একটি মামলায় তার হাজিরার তারিখ রয়েছে। কারা সেলের মধ্যে একা একাই কখনো গান গেয়ে ওঠেন। কারাসেলের লোহার রড ধরে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ছোট্ট সেলের মধ্যে তার সম্বল একটা কম্বল, প্লেট ও একটি বাটি। তবে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে একটি ছোট বালিশ তিনি চেয়ে নিয়েছেন। এই নিয়ে তার কারাবন্দি জীবন কাটছে।
জাতীয় হৃদরোগ ইনিস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ও কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে ডা. সাবরিনা চৌধুরী ২৭তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হওয়ায় তিনি কাশিমপুর মহিলা কারাগারে ডিভিশন সুবিধা পেয়েছেন। কারাগারের রজনীগন্ধা ডিভিশন সেলের মধ্যে তাকে একাই একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী ডিভিশনের সকল সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তার কক্ষে একটি ফ্যান রয়েছে। প্রতিদিন একটি দৈনিক পত্রিকা বরাদ্দ। তাছাড়া বিছানা, চাদর, বালিশ ও মশারি রয়েছে। ডিভিশন প্রাপ্তির জন্য তিনি উন্নত বাথরুম ব্যবহার করতে পারেন। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। খাবার সরবরাহ করা হয় উন্নতমানের। তবে তিনি টাকা দিয়ে ক্যান্টিন থেকে উন্নত খাবার কিনে নেন। এক সময়ের বিলাসী ও সৌন্দর্য্য সচেতন জীবনযাপন অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই তিনি মহিলা কারাগারের বিউটি পারলার ব্যবহার করেন।
উল্লেখ্য, করোনা পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির অভিযোগে গত ২৩ জুন জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা (জেকেজি হেলথকেয়ার) প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীসহ প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। ডা. সাবরিনার দ্বিতীয় স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী। তদন্তে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে করোনা সনদ জালিয়াতিতে ডা. সাবরিনার নাম আসে। গত ১২ জুলাই ডা. সাবরিনাকে পুলিশ গ্রেফতার করে।