হাওর বার্তা ডেস্কঃ জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টির এমপি মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ আসে শুধু রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে। কানাডার বেগম পাড়ায় ২৮টি বাড়ির মধ্যে ২৪টি বাড়ি সরকারি কর্মচারীদের। আমলারা কী সবকিছুর ঊর্ধ্বে? শুধু রাজনীতিবিদদের ছেলেমেয়েরাই কি বিদেশে পড়ে, কোনো সরকারি কর্মকর্তার ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়ে না? ব্যাংক খাতের সব দুর্নীতির গুরু হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারণে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী হচ্ছেন জিয়াউর রহমান। আর তার হাতে তৈরি দল বিএনপি সবচেয়ে বড় স্বাধীনতাবিরোধী। যারা বঙ্গবন্ধুর খুনী, যুদ্ধাপরাধী, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের সঙ্গে দল করে, জোট করে, মন্ত্রী বানিয়ে জাতীয় পতাকা তুলে দেওয়া তারা কখনোই স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি হতে পারে না। বিএনপির উচিত জাতির কাছে ক্ষমতা চেয়ে সুস্থ রাজনৈতিক ধারায় ফিরে আসা।
সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদের একাদশ তথা শীতকালীন অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংরক্ষিত আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে ‘স্বাধীনতার বিপক্ষ’ শক্তি বলে অবিহিত করলে সংসদের বৈঠকে কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে করোনা ভ্যাকসিনের প্রতি জনগণের বিভ্রান্তি দূর করে আস্থা বাড়াতে মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, প্রথমে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্য এবং সব সংসদ সদস্য সবাই একদিনে ভ্যাকসিন নিলে কারও মধ্যে আর ভ্রান্তি থাকবে না।
মুজিবুল হক চন্নু সরকারের আর্থিকখাতে দুর্নীতির সমালোচনা করে বলেন, ব্যাংকের টাকা নিয়ে কথা এসেছে। পি কে হালদার সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা মেরে দিলেন। তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক করেটা কী? হলমার্ক শত কোটি টাকা পাচার করেছে। বাংলাদেশে ব্যাংক কি দেখে না?
তিনি বলেন, গুরু ছাড়া দুর্নীতি হয় না। ব্যাংক খাতের এসব দুর্নীতির গুরু হলো বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের কারণে বিভিন্ন বাংক থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে।
তিনি বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে আরো বলেন, রাস্তাঘাটে অনেক মোটরসাইকেল। কোনো ট্রেনিং নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কথা কী বলবো! কেনাকাটার কী যে অবস্থা! ১০০ টাকার জিনিস ৫০০ টাকা। প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২৬২ গাড়ির হিসাব নেই।
রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, স্বীকার করবো সরকার উন্নয়ন করেছে। অনেক উন্নয়ন করেছে। এরশাদ সাহেব যখন ক্ষমতায় ছিলেন তিনিও করেছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার বাইরেও অনেক কিছু আছে। কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পাবে-এ বিষয়ে গাইডলাইন ভাষণে আশা করেছিলাম। সেটা নেই। আমার এলাকায় কৃষক সবজি উৎপাদন করে। খিরা এক টাকা কেজি, ফুলকপি দুই টাকা, কেউ নেয় না। সবজির মৌসুমে কৃষক মূল্য পায় না। পচে পড়ে থাকে।
জাতীয় পার্টির এমপি আরো নিজের উত্থাপিত একটি বেসরকারি বিলের কথা তুলে ধরে বলেন, হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগে আইন হয়নি। আমি প্রস্তাব এনেছিলাম। বেসরকারি বিল এনেছিলাম। তিন জন বিচারপতিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কী অভিযোগ জানি না। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে সরিয়ে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্রের বেতন পাচ্ছেন তিন বছর কোনো কাজ না করেই। জবাব কে দেবে? ইমপিচমেন্ট করার পর রিটে তা বাতিল। এখন রিভিউতে আছে। সরকার যাওয়ার পর হবে? কাজে সমন্বয় প্রয়োজন। বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে ইমপিচমেন্ট সংসদের হাতে।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিশেষ অধিবেশন আহ্বানের প্রস্তাব রেখে বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটসহ অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্র থেমে নেই, তারা সুযোগ পেলেই ছোবল দিতে পারে। তাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবেই সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, অনেক দূর এগিয়েছে। তবে ক্ষমতা এককেন্দ্রিক হওয়ায় ঘুষ, দুর্নীতি, লুটপাট বেড়েছে।
বিএনপির এমপি রুমিন ফারহানা বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ করেন।
এ সময় সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকারের সকল ব্যর্থতাকে ছাড়িয়ে গেছে করোনাকালীন ব্যর্থতা। শুরু থেকে করোনা পরীক্ষা, মাস্ক, পিপিই, হাসপাতাল শয্যা, অক্সিজেন সরবরাহ, আইসিইউ, প্রণোদনাসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনা এই কঠিন সময়কে কঠিনতর করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, পৃথিবীতে একমাত্র দেশ বাংলাদেশ যেখানে নকল করোনা সার্টিফিকেট বিক্রি হয়েছে। এই সবকিছুর পরে এখন যুক্ত হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে ব্যবসা। সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সরাসরি চুক্তি না করে বেক্সিমকোর সঙ্গে চুক্তি করার কারণে বাংলাদেশকে ভারতের তুলনায় ৪৭ ভাগ বেশি দামে করোনা টিকা কিনতে হচ্ছে। তাতে ৩২৫ কোটি টাকা যাবে কোম্পানির পকেটে।
তিনি দাবি করেন, মিথ্যা হয়রানিমূলক রাজনৈতিক মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সনকে কারাগারে পাঠানো, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনকে দেশে ফিরতে না দেওয়া এবং দলের মহাসচিবকে দফায় দফায় জেলে পাঠানো সবকিছুই হয়েছে বিএনপিকে ধ্বংস করে ফেলার উদ্দেশ্যে।
বিএনপির এই সংসদ সদস্যদের এসব অভিযোগের কড়া জবাব দেন সরকারি দলের এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার সবচেয়ে বড় বেনিফিশিয়ারী হচ্ছেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি কে? সেটি তো আপনারাই (বিএনপি)। যারা বঙ্গবন্ধুর খুনি, স্বাধীনতাবিরোধী, একাত্তরের গণহত্যাকারীদের নিয়ে জোট করে, মন্ত্রী করে তাদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়-তারা কী স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি?।
তিনি বলেন, তারা (বিএনপির এমপি) আইএমএফসহ কতকগুলো ডাটা দেন এবং বিভিন্ন সংগঠনের কথা বলেন। এসব ভুঁইফোড় সংগঠন যেমন বাংলাদেশে আছে, তেমনি সারা পৃথিবীতে আছে। এদের ফান্ড করলে তারা যে কোন রিপোর্ট আপনাকে তৈরি করে দেবে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন করেন না কিন্তু সংসদে ঠিকই এসে বসেন, নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলেন। এতোই যদি নির্বাচন খারাপ হয়ে থাকে তবে এমপি হিসেবে কেন সুযোগ-সুবিধাগুলো নিচ্ছেন? কেন ১০ কাঠা জমির আবেদন করেছিলেন?
তিনি আরো বলেন, জিয়াউর রহমান কত হাজার মুক্তিযোদ্ধকে হত্যা করেছে, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কত অফিসারকে কোর্ট মার্শাল দিয়ে হত্যা করেছে, অপরারেশন ক্লিনহার্ট করে কত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা ও নির্বাচন ঠেকানোর নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।